বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : চাকরিবিধি উপেক্ষা করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের পক্ষে বা বিপক্ষে সক্রিয় হওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে বেশ কয়েকজন জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) প্রত্যাহারের কথা ভাবা হচ্ছে। এ ছাড়া যেসব কর্মকর্তা নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে ‘ভালো পারফরম্যান্স’ বা দক্ষতা দেখাতে পারেননি. তাদেরও মাঠ পর্যায় থেকে তুলে আনা হতে পারে। বিসিএস ২৪তম ব্যাচের জেলা প্রশাসকদের মধ্যে যাদের মেয়াদ দুই বছর বা তার বেশি হয়েছে, তাদেরও মাঠ থেকে তুলে আনা হবে। সার্বিক পর্যালোচনার পর ফেব্রুয়ারি মাসেই মাঠ প্রশাসনের এ রদবদল সম্পন্ন করা হতে পারে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের অনেকে জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছিলেন। কেউ কেউ নৌকার প্রার্থীর পরাজয় নিশ্চিত করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগে আছে। আবার অনেকে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রশাসনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালিয়েছেন। নির্বাচনকেন্দ্রিক এমন পক্ষপাতিত্বের দায়ে বেশ কয়েকজন অভিযুক্ত হয়েছেন। এসব কর্মকর্তাকে আর মাঠ প্রশাসনে রাখতে চায় না সরকার। তাদের তুলে এনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগে কিংবা কোনো দপ্তর বা সংস্থায় পদায়ন করা হবে।
অন্যদিকে অনেক কর্মকর্তা দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত মাঠ প্রশাসনে আছেন। বিশেষ করে ২৪ ব্যাচের বেশ কয়েকজন ডিসি দীর্ঘদিন ধরেই মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের তুলে এনে ২৭ ব্যাচ থেকে ডিসি পদে পদায়ন করা হবে। সেইসঙ্গে ২৫ ব্যাচ থেকে আরও দু-একজনকে ডিসি করার সম্ভাবনাও রয়েছে।
অবশ্য এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (মাঠ প্রশাসন-২) ভাস্কর দেবনাথ বাপ্পি কালবেলাকে বলেন, ‘আমার কাছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই।
তিনি এ বিষয়ে সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
জানা গেছে, বর্তমানে বিসিএস ২৮, ২৯, ৩০, ৩১ এবং ৩৩তম ব্যাচের কর্মকর্তারা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) পদে কর্মরত আছেন। তাদের মধ্যে ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের এডিসিদের তুলে আনার চিন্তা চলছে। তাদের পরিবর্তে ৩৩ ও ৩৪ ব্যাচ থেকে এডিসি পদে দায়িত্ব দেওয়া হবে। এই দুটি ব্যাচের অনেকেই বর্তমানে ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের ইউএনও পদ থেকে প্রত্যাহার করে এডিসি করা হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনু বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কর্মকর্তাদের বদলি, প্রত্যাহার কিংবা পদায়ন রুটিন ওয়ার্ক। এটি হবেই। তবে নির্বাচনে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। এজন্য এসব কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে সেখানে নতুন কর্মকর্তা দেওয়া হবে। আবার অনেক
ডিসি-ইউএনও দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত মাঠ প্রশাসনে আছেন, তাদের আর রাখা হবে না। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই তাদের অনেককেই তুলে আনা হবে।
এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী এবং এপিডি মো. নাজমুছ সাদাত সেলিমকে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তাদের কেউই ফোন ধরেননি। তাদের দপ্তরে গিয়েও সাক্ষাতের সুযোগ মেলেনি।
৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর প্রার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে কয়েকজন ডিসিকে বদলি করা হয়। এ ছাড়া কয়েকজনকে প্রত্যাহার করে বিভিন্ন
মন্ত্রণালয়-বিভাগে পদায়ন করা হয়। ভোটের দিন বেশ কয়েকজন ডিসি-ইউএনও প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে প্রশাসনকে ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে তাদের প্রত্যাহার করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানা গেছে।