আসন্ন রমজান উপলক্ষ্যে ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুর ও চালের ওপর শুল্ক কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে তিনি এ নির্দেশ দেন। এছাড়াও এ বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) সংশোধন আইন-২০২৪-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই সংশোধনীর ফলে আইনটি স্থায়ী রূপ পাচ্ছে। বিএনপি সরকারের আমলে ২০০২ সালে আইনটি করা হয়েছিল। এর আগে দুই বছর পরপর আইনটির কার্যকারিতার মেয়াদ বাড়ানো হতো।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে বলেন, রমজানে যাতে পণ্যের সরবরাহ কম না হয়, সেজন্য ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুর ও চালের ওপর শুল্ক কমানোর জন্য এনবিআরকে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘নির্বাচনের পর দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের সমন্বয়ের ভিত্তিতে এটির ওপর কাজ করতে বলেছেন। আজ (সোমবার) মন্ত্রীদের কাছ থেকে সর্বশেষ অবস্থা জেনেছেন, মন্ত্রীরা কী কী কাজ করেছেন, সেটি এবং তাদের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন বাজারে যেন সরবরাহ ও চাহিদার ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি না থাকে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। গত বছরের এ সময়ের তুলনায় এখন এলসি ওপেনের হার অনেক বেশি আছে এবং খাদ্য মজুতের পরিমাণ অনেক, সেই তথ্যগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সবকিছু শোনার পর বাকি কাজটুকু মাঠে যেভাবে আছে, সেটি কন্টিনিউ করতে বলেছেন। সাপ্লাই যাতে কোনোভাবেই বিঘ্ন না হয়, সেজন্য এলসি ওপেন করে দিচ্ছেন, যাতে কেউ কোনো কারসাজি করতে না পারে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে এলসির সমস্যা নেই জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত বছরের এ সময়ে ৩৭ হাজার ১০৭ টন খেজুর আমদানির এলসি ওপেন করা হয়েছিল। এবার এখন পর্যন্ত ৪৪ হাজার ৭৩৪ টন এলসি ওপেন করা আছে। গত বছর এ সময় ৯৭ হাজার ২৮৭ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানির এলসি করা ছিল। এবার ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৭৪ টনের এলসি করা আছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে ডলারের সংকট আছে, এটা এই পরিসংখ্যান প্রমাণ দেয় না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, গত বছর এ সময়ে ৩ লাখ ৩৮ হাজার ৮৭০ টন অপরিশোধিত চিনির এলসি ওপেন হয়েছিল। এবার ৩ লাখ ৮৭ হাজার ১৩৮ টন চিনি আমদানির এলসি ওপেন করা আছে।
দ্রুত বিচার আইন : আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) সংশোধন আইন-২০২৪-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ আইনের ফলে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে হলে এ আইনের প্রয়োজন রয়েছে। তাই আইনটি স্থায়ীভাবে অনুমোদন হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ আইনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ৯ এপ্রিল। মন্ত্রিসভায় এটিকে স্থায়ীভাবে গ্রহণ করার ফলে নতুন করে মেয়াদ বাড়াতে হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আগে যা ছিল, সেই আইনটিই থাকবে। শুধু মেয়াদ বাড়াতে হবে না। একেবারে স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত হলো।
জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন-২০০২ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী কোনো অপরাধ করলে তিনি অন্তত দুই বছর এবং সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই সঙ্গে অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে এ আইনে। দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি অপরাধ সংঘটনকালে সরকার বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোনো ব্যক্তির আর্থিক ক্ষতিসাধন করলে সেজন্য আদালত তা বিবেচনা করে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে ওই দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে আদেশ দিতে পারবেন এবং এই ক্ষতিপূরণের অর্থ সরকারি দাবি হিসাবে আদায়যোগ্য হবে।
সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি জেলায় এবং মেট্রোপলিটন এলাকায় এক বা একাধিক দ্রুত বিচার আদালত গঠন করতে পারবে। সরকার বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত একজন প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটকে এই আদালতের বিচারক নিযুক্ত করবে। বিচার পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, আদালত এ আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের বিচার সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে সম্পন্ন করবেন। ফৌজদারি কার্যবিধির অধ্যায় ২২ এ বর্ণিত পদ্ধতি, যতদূর প্রযোজ্য হয়, তা অনুসরণ করবেন। আইনটি প্রণয়নের সময় (বিএনপির শাসনামলে) সংসদে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ এর তীব্র বিরোধিতা করেছিল।
মন্ত্রিসভার সোমবারের বৈঠকে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি আইন-২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।