বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : এনটিআরসিএ’র তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগের সুপারিশ পেয়ে চট্টগ্রামের ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজে প্রভাষক হিসেবে চাকরি করছেন জামালপুর জেলার সুরাইয়া ইয়াসমিন। আর তার স্বামী শেরপুর জেলার আবদুল করিম দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশ পেয়ে প্রভাষক হিসেবে চাকরি করছেন সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার জৈন্তিয়া ডিগ্রি কলেজে। দুজন দুই প্রান্তে চাকরি করার কারণে চাকরি আর সংসার নিয়ে বেশিরভাগ সময় অসন্তোষ আর টানাপোড়েন চলছে তাদের। সুরাইয়া গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির সুযোগ দেওয়া না হলে হয় চাকরি, নয়তো স্বামী-সংসারের যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে আমাকে।
নিজ জেলায় শূন্যপদ না থাকায় গাজীপুর কালীগঞ্জের জামালপুর কলেজে প্রভাষক হিসেবে চাকরি করছেন শাকিলা আক্তার। আর তার স্বামী থাকছেন গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে। পরিবার বিচ্ছিন্ন শাকিলাকে এখন মাঝে-মধ্যেই পড়তে হচ্ছে নানা বিপত্তিতে। গতকাল তিনি প্রতিবেদককে বলেন, চাকরিতে বদলি ব্যবস্থা না থাকায় খুব বিপদে আছি। পরিবার ছেড়ে দূরে থাকার কারণে বাড়িওয়ালা বিয়ে করতে চায় আমাকে। শুধু সুরাইয়া ইয়াসমিন আর শাকিলা আক্তার নন, চাকরিতে বদলির ব্যবস্থা না থাকায় সারা দেশের হাজার হাজার শিক্ষক দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন।
তথ্য মতে- সারা দেশে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন প্রায় ৫ লাখ। এ শিক্ষকদের এবার বদলির সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত বছরের অক্টোবরে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই বদলিতে নীতিগত সমর্থন দেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এরপর প্রস্তুত করা হয়েছে ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষক বদলি নীতিমালা-২০২৪’-এর খসড়া। এ খসড়া নীতিমালা নিয়ে দুই দফায় কর্মশালার তারিখ দেওয়া হলেও তা স্থগিত করা হয়েছে, এতে মর্মাহত সারা দেশের বেসরকারি শিক্ষকরা। কিন্তু মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, শীর্ষ কর্তাদের ব্যস্ততার কারণে কর্মশালাটি স্থগিত করা হয়েছিল, শিরগিরই ফের কর্মশালার আয়োজন করা হবে, যদিও এর কোনো তারিখ ঘোষণা করা হয়নি।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিক্ষকদের বদলির খসড়ায় বলা হয়েছে চাকরিজীবনে মাত্র একবার বদলির সুযোগ পাবেন তারা। প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ৫০ শতাংশ বা ২৫ শতাংশের কম থাকলে বদলি করা যাবে না। এক্ষেত্রে দুই অপশন রেখেছে মন্ত্রণালয়। বদলি হবে শূন্যপদের বিপরীতে। আর পুরো বদলি কার্যক্রম সম্পাদন হবে সফটওয়্যারের মাধ্যমে। প্রতিবছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ তারিখের মধ্যে বদলির আবেদন আহ্বান, গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করা হবে। এই বদলি বাস্তবায়ন করবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর। মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ গতকাল প্রতিবেদককে বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির সুযোগ দিতে প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি খসড়াও প্রস্তুত করা হয়েছে। এ খসড়া শিগগিরই একটি কর্মশালায় শিক্ষামন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করা হবে। বৈঠকের পর এ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়- শিক্ষকের বয়স, নিজ জেলা, স্বামীর জেলা, স্বামীর কর্মস্থল, এনটিআরসিএ পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ইত্যাদি বিষয় বদলিতে প্রভাব ফেলবে কিনা সে ব্যাপারে খসড়ায় কিছু বলা হয়নি। বদলির ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় আমলে নেওয়া হবে তা নির্ধারণ করবে টেকনিক্যাল কমিটি। বদলির নীতিমালা তৈরির লক্ষ্যে কর্মশালায় এ টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের ব্যাপারে আলোচনা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে- বৃহৎ সংখ্যক এ শিক্ষকের বদলি কার্যক্রমের সমন্বয় করা সহজ হচ্ছে না। কারণ, তিন ক্যাটাগরিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বেসরকারি স্কুল-কলেজে চাকরি করছেন। এগুলো হচ্ছে- এনটিআরসিএ সনদ চালু হওয়ার আগে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিয়েছে ম্যানেজিং কমিটি, পরে এনটিআরসি সনদ নিয়ে যেকোনো স্থানে সুযোগ ছিল চাকরির; আর বর্তমানে এনটিআরসিএ সনদ সাপেক্ষে চাকরিপ্রার্থীর চয়েসকৃত স্কুল-কলেজ নিয়োগের সুপারিশ দেওয়া হচ্ছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে এ বিষয়গুলোও আমলে নিতে হবে। আর বদলি কার্যক্রম যেহেতু সফটওয়্যারে সম্পাদন করা হবে তাই নীতিমালা চূড়ান্ত হলেও বদলি কার্যক্রম চালু হওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। চাকরিতে বদলিপ্রত্যাশী বরিশাল উজিরপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক সরোয়ার হোসেন বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ পেলেও তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের এই সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বেসরকারি শিক্ষকরা যে বেতন-ভাতা পান তা দিয়ে নিজ বাড়ি থেকে ২০০-৩০০ কিলোমিটার দূরে চাকরি করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বদলি ব্যবস্থা না থাকায় মানসিক চাপ সামাল দিতে না পেরে খাইরুল ইসলাম নামে একজন শিক্ষক মৃত্যুবরণ করেছেন। সরকারের কাছে দাবি, এমপিওভুক্ত শিক্ষক বদলি নীতিমালা কার্যকর করে দ্রুত আমাদের বদলির সুযোগ দেওয়া হোক।