বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৩৫০টি অবৈধ ইটভাটা ♦ ১০০ দিনের কর্মসূচির প্রথম ৩০ দিনেই ৭০ ভাগ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে । সরকার অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে অবস্থান করছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় পরিবেশ দূষণরোধে ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকা ও তার আশপাশে ৫০০ অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেবে। এরই মধ্যে ৩৫০টি অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ১০০ দিনের কর্মসূচির হিসেবে আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হলেও এক মাসের মধ্যেই পরিবেশ অধিদফতর প্রায় ৭০ শতাংশ অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এই গতিতে কাজ চললে অবশিষ্ট অবৈধ ভাটা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই গুঁড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। দেশের সব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের ব্যবস্থা নিতে সব বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। গত ২২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সব বিভাগীয় কমিশনারকে নিয়ে অনুষ্ঠিত মাসিক নিয়মিত বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি। অবৈধ ইটভাটার প্রসঙ্গটি উপস্থাপন করেন বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। এ সময় তিনি কমিশনারদের অবৈধ ইটভাটা নিয়ে কিছু নির্দেশনাও দেন। এতে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে তৎপরতা বাড়ানো, ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার বন্ধ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে ব্লক নির্মাণকে উৎসাহিত করা নিয়েও আলোচনা হয়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, সরকার পরিবেশ দূষণকারী ও অবৈধ ইটভাটা শনাক্তকরণ ও যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তার জন্য ব্রিক ক্লিন ট্রাকার ব্যবহার করবে। পরিবেশ অধিদফতর ও সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে আইটি ও রিমোর্ট সেন্সিং প্রযুক্তিনির্ভর ব্রিক ক্লিন ট্র্যাকার তৈরি করা হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এই ট্র্যাকারের সহায়তায় পরিবেশ অধিদফতরের মনিটরিং এবং এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম জোরদার ও সফল হবে। ব্রিক ক্লিন ট্র্যাকার ব্যবহারের ফলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অত্যন্ত ক্ষতিকর ইটভাটা শনাক্ত করে অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা সহজ হবে। এতে ইটভাটার কারণে সৃষ্ট বায়ুদূষণও কমে আসবে।
পরিবেশ দূষণরোধে ১০০ দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা ও তার আশপাশে ৫০০ অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে গাজীপুরে ১১টি অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর। এ সময় গাজীপুর সদর উপজেলার পাইনশাইল, ভাওয়াল মির্জাপুরের ১১টি ইটভাটাকে মোট ২৭ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এ ছাড়া টাঙ্গাইলেও গত ৫ ফেব্রুয়ারি সাতটি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে পরিবেশ অধিফতর। এ সময় ঘাটাইল উপজেলার পাঁচটি, পার্শ্ববর্তী কালিহাতী ও ভূঞাপুর উপজেলার দুটি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। লাইসেন্সবিহীন সম্পূর্ণ অবৈধভাবে পরিচালিত এসব ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে ৩৯ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
এদিকে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে দেশব্যাপী চলমান অভিযানের প্রতিবাদে চট্টগ্রামের ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি অনির্দিষ্টকালের জন্য ইট বিক্রি বন্ধ ঘোষণা করেছে। তারা প্রতিবাদ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি প্রেরণ ও চট্টগ্রাম জেলার ইটভাটা শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবেন। সাবের হোসেন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০২৮ সালের পর দেশে মাটির তৈরি ইট আর থাকবে না। সব জায়গায় বালু ও সিমেন্টের তৈরি ব্লক ইট ব্যবহার করতে হবে। চার বছরের মধ্যে এসব ইট পোড়ানো বন্ধ করার জোরদার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর ১৩ কোটি ম্যাট্রিক টন মাটি সনাতন পদ্ধতিতে ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর ব্লক ইটের সুবিধা হচ্ছে এখানে কৃষি মাটি ব্যবহার করা হয় না। ব্লক ইটে বালু, ফ্লাই অ্যাশ আছে। এতে কৃষিকাজে ব্যবহৃত মাটি বেচে যাচ্ছে। ব্লক ইটে কোনো দূষণ হয়, না কারণ এটি পোড়ানো হয় না। এরই মধ্যে বেশ কয়েক জন উৎপাদনকারী ব্লক ইট উৎপাদনে এগিয়ে এসেছেন। এজন্য তাদের কাজের পরিধি বাড়াচ্ছেন। বর্তমানে তারা ৩০০ কোটি ব্লক ইট উৎপাদন করতে পারেন। পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক (উপসচিব) (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ মাসুদ হাসান পাটোয়ারী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১০০ দিনে ৫০০ ইটাভাটা ধ্বংসে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আমরা ৫০০-এর মধ্যে সাড়ে ৩০০ ইটভাটা ধ্বংস করেছি। আমরা যখন ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করি তখন তা ভেঙে দিয়ে আসি। পরে অবৈধ ইটভাটার মালিকরা আবার যদি তা মেরামত করে ইট তৈরি করে সে ক্ষেত্রে আমাদের এ ব্যাপারে তথ্য দিলে লোকবল নিয়ে আবার ভাটাটি গুঁড়িয়ে দিয়ে আসব। অভিযানের সময় ইটভাটার চুল্লি ভাঙার সঙ্গে আমরা চিমনিও ভেঙে দিই।