বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিতে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার দিকে বিশেষ নজর দিতে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মাদক থেকে দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস সৃষ্টি হয়। এগুলো থেকে আমাদের সমাজ যেন রক্ষা পায় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। আমরা চাই জনপ্রতিনিধিরা জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি দেশকে এগিয়ে নিতে বিশেষ যত্নবান হবেন।’ সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আয়োজিত স্থানীয় সরকার দিবস-২০২৪’ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের আমি বলব ২০০৯ সাল থেকে আমরা সরকারে আছি। আজকে বাংলাদেশের একটি ধাপ উত্তরণ ঘটেছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এটা যেন পিছিয়ে না যায়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জনসেবা করে যাবেন। আমরা যেন দেশকে এগিয়ে নিতে পারি।
সরকার প্রধান বলেন, ‘একটা রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব পালন করে স্থানীয় সরকার। কাজেই স্থানীয় সরকার হবে সবচেয়ে শক্তিশালী। কেন্দ্র থেকে আমরা ব্যবস্থা করে দেব, কিন্তু স্থানীয় সরকার স্থানীয়ভাবেই দেশের উন্নয়ন করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের ফ্রিল্যান্সার আছে। অনলাইনে কেনাবেচা হচ্ছে, বাণিজ্য চলছে। রাস্তাঘাটের উন্নতি করে দিয়েছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। সবদিক থেকেই উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে। আর যে কাজগুলো করে দিচ্ছি সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং যত্ন আপনাদেরই করতে হবে।’
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, শরীয়তপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাবেদুর রহমান খোকা শিকদার, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন আহমেদ লাবলু, পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র জাকিয়া খাতুন, সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন রশিদ লাবলু স্থানীয় সরকার সংস্থার বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের পক্ষে বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার চলে জনগণের পয়সায়। এই অর্থ জনগণের, সেটা মাথায় রাখতে হবে। সরকার কাজটা করে দেয়, কিন্তু জিনিসটা তো জনগণের। এ কথা মাথায় রেখেই যত্ন করতে হবে। কাজেই, আপনারা সেভাবে এগিয়ে যাবেন।
তিনি বলেন, ‘যারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তাদেরকেই কিন্তু জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। আর দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী যারা আছেন তাদেরও কিন্তু দায়িত্ব রয়েছে। কাজেই তারাও যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, নির্দিষ্ট সময় পর পর এগুলো পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে কি না।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘জনগণের প্রতিনিধিদের জন্য সবথেকে বড় কথা হলো জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করা। সেটা যিনি করতে পারেন তার কোনো অসুবিধা হয় না। আর সেটা যে করতে না পারে তাকে তো ব্যর্থ হতে হয়, ফেল করতে হয়, এটাই তো বাস্তবতা। সেটা মাথায় রেখেই নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকার জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের বিশেষ তহবিল কামনা : আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির জন্য আরও বেশি নারী উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের কাছে বিশেষ তহবিল এবং জলবায়ু সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে রেয়াতি হারে আরও ঋণ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশনস) আনা বজেরদে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এই সুবিধা চান।
নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের পদক্ষেপ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসাবে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে। তাই বাংলাদেশে কোনো লিঙ্গবৈষম্য নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, নারীরা এখন কৃষি থেকে শুরু করে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও বিচার বিভাগ পর্যন্ত সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করছে। আর নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করেছি।
আনা বজেরদে বাংলাদেশের সামষ্টিক ও ক্ষুদ্র অর্থনীতির সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে সংস্কারে সহায়তা করছি এবং সংস্কার ত্বরান্বিত করার জন্য সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।’
সংস্কারে ভালো করার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন তিনি। বিশ্বব্যাংকের এমডি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলেই বাংলাদেশ নতুন তহবিল পাবে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।