পর্ষদের অনিয়ম কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাবেন এমডি

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ব্যাংকের পর্ষদ কোনো অনিয়ম করলে বা আমানতকারীদের জন্য ক্ষতিকর কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ বিষয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জানাবেন। তিনি লিখিত, মৌখিক বা অন্য কোনোভাবে পর্ষদের অনিয়মের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করবেন। পর্ষদ সভায় বা অন্য কোনো সভায় বিধিবহির্ভূত কোনো সিদ্ধান্ত হলে এমডি বিষয়টি বৈঠকে স্মরণ করিয়ে দেবেন।

পর্ষদ তা আমলে না নিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে। কোনো এমডি এ ধরনের কর্মকাণ্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংককে না জানালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারি করা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় প্রধান নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে নীতিমালায় এসব বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। এটি সার্কুলার আকারে জারি করে ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে যেসব ব্যাংকের এমডি নিয়োগ করা হবে বা যেসব এমডির নিয়োগের মেয়াদ বাড়ানো হবে, সেগুলোর ক্ষেত্রে এ নীতিমালা কার্যকর হবে। নতুন নীতিমালা জারির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগে এ বিষয়ে জারি করা সব সার্কুলার প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

নতুন নীতিমালার মাধ্যমে ব্যাংকের এমডিদের ক্ষমতা যেমন বাড়ানো হয়েছে, তেমনই তাদের কাজের ক্ষেত্র ও জবাবদিহিও বাড়ানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, এসব বিধি মেনে চললে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা পাবে। একই সঙ্গে নীতিমালার বাস্তবায়ন কঠোরভাবে তদারকি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও খেলাপি ঋণ কমানোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, এর আলোকে এ নীতিমালা জারি করা হলো। এর আগে পরিচালক নিয়োগ, তাদের কর্তব্য, দায়িত্ব ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার বিষয়ে একটি নীতিমালা জারি করেছে।

নীতিমালায় বলা হয়, ৪৫ বছরের নিচে কোনো ব্যাংকার এমডি হতে পারবেন না। তিনি সর্বোচ্চ ৬৫ বছর পর্যন্ত ওই পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এমডি পদে সর্বোচ্চ তিন বছরের জন্য নিয়োগ পাবেন। তবে কাজের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে এমডিকে পুনরায় নিয়োগ দেওয়া যাবে।

এমডিকে খেলাপি ঋণ আদায়, অবলোপন করা ঋণ থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিতে হবে। এগুলো আদায়ের হার তার পুনঃনিয়োগের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হবে। একই সঙ্গে তার পরিচালনার ফলে ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ও সার্বিক রেটিং ব্যবস্থাপনায় সাফল্য বিবেচনায় নেওয়া হবে। এসব খাতে মানের অবনমন হলে তিনি পুনঃনিয়োগের জন্য বিবেচ্য হবেন না। এমডির বিদেশে অবস্থান যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে তিনি বিদেশে যেতে চাইলে ১০ দিন আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। একই সঙ্গে ভ্রমণের ব্যয়ের উৎস সম্পর্কেও তথ্য দিতে হবে।

ব্যাংকের পরিচালকরা পর্ষদ বা অন্য কোনো সভায় প্রচলিত নিয়মের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে বা নিতে চাইলে এমডি নিয়মকানুনের ব্যাখ্যা তুলে ধরবেন। এতেও পর্ষদ আমানতকারীদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা এমডি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাবেন। তিনি এ ধরনের ঘটনা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে না জানালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগে পর্ষদ সভায় নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এমডির বাধা দেওয়ার প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ ছিল না। এখন দেওয়া হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, চরম স্খলন বা বিচ্যুতিপূর্ণ কাজ না করলে কোনো ব্যাংকের এমডিকে মেয়াদপূর্তির আগে অপসারণ করা যাবে না। অপসারণ করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন দিতে হবে। এমডি পদত্যাগ করতে চাইলে পর্ষদের সুপারিশসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন পেলেই পদত্যাগ কার্যকর হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে আমানতকারীদের স্বার্থে যে কোনো সময় যে কোনো ব্যাংকের এমডিকে অপসারণ করতে পারবে।

এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি প্রার্থীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের আমানতকারীদের স্বার্থে তিনি কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন, ব্যাংকের সার্বিক উন্নতিতে তার ভূমিকা কী হবে-এসব বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হবে।

নীতিমালায় বলা হয়, কোনো ব্যক্তি ঋণখেলাপি বা করখেলাপি হলে তিনি এমডি হতে পারবেন না। তিনি কোনো আদালতে দণ্ডিত হলে বা আদালতের রায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ থাকলে তিনি ওই পদে নিয়োগ পাবেন না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য থাকলেও তিনি এমডি পদের অযোগ্য হবেন। কোনো প্রতিষ্ঠানের পদ থেকে অপসারিত হলে বা দেউলিয়া বা নিবন্ধন বাতিল হয়েছে-এমন কোনো প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীও এমডি হতে পারবেন না।

ব্যাংক
Comments (0)
Add Comment