বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সীমান্তে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ মোকাবেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ—বিজিবিকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘নিশ্ছিদ্র নজরদারি এবং আন্তর্দেশীয় সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড টেকনিক্যাল রেসপন্স সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে।’
গতকাল সোমবার সকালে ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের বীর-উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবি দিবস-২০২৪ উপলক্ষে দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, তাঁর সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ বিওপি ও নীলডুমুর, কাচিকাটা, ভাসমান বিওপপিতে রাডার স্থাপন করেছে।
এর মাধ্যমে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘অত্যাধুনিক ও যুগোপযোগী প্রযুক্তি স্থাপনের মাধ্যমে বিজিবির অপারেশনাল সক্ষমতা বাড়ানোয় কাজ ও দক্ষতার প্রতি তাদের আগ্রহ বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে বিজিবিকে আরো শক্তিশালী করার জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০ পাস করেছি। একই সঙ্গে একটি আধুনিক, শক্তিশালী, দক্ষ ও ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে বিজিবি আজ গড়ে উঠেছে। এখন তারা জল, স্থল ও আকাশপথের দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে আমরা বিশ্বমানের আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১’ প্রণয়ন করেছি। যেভাবে আমরা বাংলাদেশকে ২০৪১ সাল নাগাদ ‘উন্নত সমৃদ্ধ দেশ’ হিসেবে গড়তে চাই, আমাদের বিজিবিও তেমনি একটি স্মার্ট বাহিনী হবে।” প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন, ‘বিজিবিকে আমরা বিশ্বমানের চৌকস বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলব।
’ তিনি বলেন, অত্যাধুনিক অস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম বিজিবিতে যুক্ত হওয়ায় এই বাহিনীর আভিযানিক সক্ষমতার পাশাপাশি মনোবল, কর্মোদ্দীপনা এবং দক্ষতা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।”
জাতির পিতার ভারতের সঙ্গে করে যাওয়া স্থল সীমানা চুক্তির আলোকে দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ ছিটমহল বিনিময়ের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত শাস্তিপূর্ণ পরিবেশে ছিটমহল বিনিময় করে আমরা বিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।’ শেখ হাসিনা এসব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালনের জন্য বিজিবিকেও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে সমুদ্র আইন করে গেলেও ’৭৫-এর পর কোনো সরকারই এই ‘স্থল সীমানা চুক্তি’ বা ‘সমুদ্র আইন’ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি যা আওয়ামী লীগ সরকারে এসেই আবার নিষ্পত্তি করেছে। প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রায় ১০ লাখের ওপর মিয়ানমারের নাগরিক আজকে আশ্রয় নিয়েছে।
সেখানে আমাদের বিজিবিসহ সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও র্যাব সকলেই নজরদারি রাখছে। আমরা মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। তবে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে যাতে আমরা এই অবস্থান থেকে পরিত্রাণ পাই এবং তাদের নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে পারি। আমরা প্রতিবেশীর সঙ্গে কোনো বিবাদে না গিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
সরকারপ্রধান বলেন, সীমান্তে অতন্ত্র প্রহরীর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে যখনই কোনো প্রয়োজন দেখা দেয় সেই বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস থেকে শুরু করে নানা ধরনের ঘটনায় বিজিবির সদস্যরা সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের জানমাল রক্ষায় ভূমিকা রেখেছেন এবং জাতির আস্থা ও বিশ্বাস আপনারা অর্জন করেছেন।
তিনি বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘মনে রাখবেন, শৃঙ্খলা এবং চেইন অব কমান্ড একটি শৃঙ্খলা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি। কখনো শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটাবেন না। চেইন অব কমান্ড মেনে চলবেন।’ সরকারপ্রধান ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি আধাসামরিক বাহিনীতে সংঘটিত ঘটনাটিকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে বর্ণনা করেন। ওই ঘটনায় সেনাবাহিনীর ৫৭ জন কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারা এরই মধ্যে বিচারের মুখোমুখি হয়েছে। কাজেই ভবিষ্যতে বাহিনীতে এমন ঘটনা যেন ঘটতে না পারে।’
শেখ হাসিনা ওই নৃশংস ঘটনায় নিহতদের স্মরণ করেন এবং তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বিজিবি সদর দপ্তরে ‘প্রেরণা’ শিরোনামের বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্যও উন্মোচন করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদর দপ্তরে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী তাঁকে স্বাগত জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে একটি খোলা জিপে চড়ে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং প্যারেড কমান্ডার তাঁকে সঙ্গে নিয়ে যান। পরে তিনি আধাসামরিক বাহিনীর জাতীয় পতাকাবাহী দলের সঙ্গে চারটি কন্টিনজেন্টের বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ এবং স্বাগত মঞ্চ থেকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী পরে ৭২ জন নির্বাচিত বিজিবি সদস্যের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিজিবি পদক, রাষ্ট্রপতি বিজিবি পদক, বিজিবি পদক-সেবা এবং রাষ্ট্রপতি বিজিবি পদক-সেবা বিতরণ করেন। পরে তিনি বিজিবির ঐতিহ্যবাহী দরবারেও যোগ দেন।