বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে নালিশ করে কোনো ফায়দা হবে না। দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে সমাপনী ভাষণ ও রাষ্ট্রপতির ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা এ কথা বলেন। সংসদ নেতার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন সমাপ্ত হয়। অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশটি পড়ে শোনান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে ২৬৯ জন সংসদ সদস্য প্রায় ৪০ ঘণ্টা বক্তৃতা করেন।
গত ৩০ জানুয়ারি এই অধিবেশন শুরু হয়েছিল। ২২ কার্যদিবসের এই অধিবেশনে দুটি বিল পাস হয়েছে। অধিবেশনে ৫০টি স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়।
সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘অগ্নিসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
কয়েক দিন আগে আমরা রাজধানীতে অগ্নিকাণ্ড দেখলাম। এটি একটি দুর্ঘটনা। কিন্তু আমরা দেখি, রাজনীতির নামে অগ্নিসন্ত্রাস। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। বিএনপি নির্বাচন বাধা দেওয়ার নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে।
এরা কি এসব করতে পারে?’ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে দেশে-বিদেশে লেখা হচ্ছে, তাদের নেতাকর্মীদের রাজবন্দি করা হয়েছে। কিসের রাজবন্দি? তারা তো সন্ত্রাসী। হয় মানুষ হত্যার হুকুমদাতা, না হয় সন্ত্রাসী, না হয় অর্থদাতা। ২৮ নভেম্বর বিএনপির নেতাকর্মীদের হাত তাদের আক্রমণ থেকে সাংবাদিক, জাজেজ কোয়ার্টার, প্রধান বিচারপতির বাড়ি, অ্যাম্বুল্যান্সসহ কোনো কিছুই রেহাই যায়নি। পুলিশকে হত্যা ও নারীদের ওপর হামলা করা হয়। তাহলে তারা কিসের রাজবন্দি? তারা তো সন্ত্রাসী। লন্ডন থেকে হুকুম আসে, এখন থেকে নেতারা সেই হুকুম তামিল করে। আমার প্রশ্ন বিএনপি নেতারা কি বোকা? লন্ডন থেকে হুকুম আসে। তারা আগুন সন্ত্রাস করে ছবি তুলে পাঠায়। তারা কি জানে না, ছবি পাঠালে রেকর্ড থেকে যায়? এখানে যেসব সংসদ সদস্য রয়েছেন, তাঁদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা নিজ নিজ এলাকায় খোঁজ রাখবেন, যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে, তাদের যেন বিচার হয়। শাস্তিটা যেন নিশ্চিত হয়।’ এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতার এক পর্যায়ে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে সংসদে একটি ভিডিও চিত্র দেখান, যেখানে ভোট ঠেকানোর নামে বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডব। ভিডিও দেখানোর পর আবেগতাড়িত শেখ হাসিনা বলেন, এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার হতেই হবে। এদের কোনো ক্ষমা নাই। শাস্তি তাদের পেতেই হবে।
বিএনপিকে আজরাইল মন্তব্য করে সংসদ নেতা বলেন, ‘গাজায় ইসরায়েল যা করছে, গণহত্যা চালাচ্ছে, শিশুদের হত্যা করছে। আর আমাদের দেশের জন্য বিএনপি আজরাইল হয়ে এসেছে। তারা নির্বাচন বন্ধ করতে চায়। গণতান্ত্রিক ধারা চায় না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে যে দেশের উন্নয়ন হয়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।’
সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করায় দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা নির্বাচনের ইশতেহার দিয়েছিলাম। সেই ইশতেহার বাস্তবায়নই আমাদের মূল লক্ষ্য। প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও অংশীজনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করব।’
সংসদ নির্বাচনের ভোট নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদেরের বক্তৃতার জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা সংসদে ভোটের চিত্র তুলে ধরলেন। তিনি দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা দেখাননি। জিয়াউর রহমান ভোট চুরির পথ দেখিয়ে গেল। বিরোধীদলীয় নেতার ভাই (এরশাদ) সেই পথেই হাঁটলেন। জিয়াউর রহমানের হ্যাঁ-না ভোট আগে থেকেই দেওয়া হয়েছিল। আমি খুশি হতাম বিরোধীদলীয় নেতা যদি তাঁর ভাইয়ের ১৯৮৮ সালের নির্বাচনের ফলাফল দেখাতেন তাহলে ভালো হতো। এরপর এরশাদের পথ ধরে খালেদা জিয়াও একই পথ ধরলেন। সে নির্বাচনে ২১ শতাংশ ভোট দেখালেন বিরোধীদলীয় নেতা। কিন্তু সে ভোট হয়নি। জনগণ মেনে নিতে পারেননি। জনগণের রুদ্ধরোষে বিদায় নিতে হলো। এরপর ২০০৬ সালের নির্বাচন, সে নির্বাচনও হয়নি। এরপর ১/১১ এলো। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জনগণ ভোট দিল। এরপর বিএনপি শুধুই ভোট ঠেকাতে চাইল।’
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধ করার জন্য জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি। সেটা অব্যাহত থাকবে। আমরা ইশতেহারেও ঘোষণা করেছি।’
সামনে রমজান মাসে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশবাসীকে পবিত্র রমজান মাসের শুভেচ্ছা জানাই। এই রমজানে যেন পণ্যের দাম সহনীয় থাকে, আমরা সে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়, মজুদ করা হয়, সেগুলো যেন না হয় সে জন্য সমন্বয় করা হবে।’
খাদ্য উৎপাদনের ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, স্যাংশন, পাল্টা স্যাংশনের ফলে খাদ্যের যেন সংকট না হয় সে জন্য উৎপাদনের ওপর জোর দিয়েছি। সবাইকে বলেছি, এক ইঞ্চি জায়গা যেন ফাঁকা না থাকে। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। এখন লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট সরকার, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি আমরা গড়ে তুলব। নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে যথাযথ যাচাই-বাছাই করা হবে। বিদেশি ঋণের ওপর প্রকল্প হাতে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা যাচাই-বাছাই করব।’ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের সময় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সেগুলোর ওপর জোর দেব, আসছে বাজেটেও তার প্রতিফলন থাকবে। চলমান পরিকল্পনাগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। দেশের যে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে তা কমানোর জন্য আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নেব। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, স্যাংশন, পাল্টা স্যাংশন, অতিমারির ফলে কিন্তু এই মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশেও এই মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশে যাতে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’