বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ এবং সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারের প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কথা থাকলেও সেটি হচ্ছে না। এখন প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের এলাকা রূপপুরেই দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
দ্বিতীয় পারমাণবিক কেন্দ্র নিয়ে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, রূপপুরে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ চলছে। আমরা চেয়েছিলাম দক্ষিণবঙ্গে দ্বিতীয়টি করতে। তবে সেখানকার মাটি অনেক নরম। সে কারণে পাবনাতেই করার পরিকল্পনা চলছে। প্রথমটির সঙ্গে এটার কাজও যাতে শুরু করতে পারি, সে ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে প্রায় তিনশ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ২৬০ একর এবং বাকি জায়গায় আবাসন করা হয়েছে। এখন পাবনার রূপপুরে দ্বিতীয় কেন্দ্রটি করতে গেলে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি প্রথম কেন্দ্রের পাশেই এ কেন্দ্র করা হবে, নাকি রূপপুরে অন্য কোনো স্থানে, সেটি এখনো নির্ধারণ হয়নি। এ নিয়ে কাজ চলছে।
জানা গেছে, পাবনার রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণকাজ শুরুর পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি একই ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য ‘বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণের সমীক্ষা’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত ১৫টি স্থানের ওপর সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ), বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (বিএইআরএ) ও পরিবেশ অধিদপ্তরের (ডিওই) নির্দেশিকা অনুসরণ করে, সেই সমীক্ষায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য পাঁচটি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল।
পরে এসব স্থানে আরও গবেষণার পর মাটি নরম ও ভৌগোলিক অবস্থান অনুকূলে না থাকায় সেখানে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে সরে আসে সরকার।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ভবিষ্যতের বিদ্যুৎ চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখেই দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাই একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে সেই চাহিদা জোগান দেওয়া সম্ভব হবে না। সেজন্যই আমরা দ্বিতীয় আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।
দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় গত শতাব্দীর ষাটের দশকে। রূপপুরে প্রকল্প এলাকার জন্য প্রায় ২৬০ একর এবং আবাসিক এলাকার জন্য ৩২ একর জমি অধিগ্রহণ করে ভূমি উন্নয়ন, অফিস, রেস্ট হাউস এবং বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন নির্মাণসহ ৭২টি আবাসিক ইউনিটের নির্মাণকাজও আংশিকভাবে সম্পন্ন হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের অনেক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর তৎকালীন সরকার ১৯৬৩-৬৯ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন দিলেও পরবর্তী সময়ে এ-সংক্রান্ত সব কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যায়। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। ২০০৯ সালের ১৩ মে বাংলাদেশ সরকার ও রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে ‘পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার’ বিষয়ক সমঝোতা সই হয়।
এরপর বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে ২০১১ সালে রূপপুরে প্রতিটি আনুমানিক ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্ন দুই ইউনিটবিশিষ্ট পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনসংক্রান্ত সহযোগিতা চুক্তি সই হয়। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে সহযোগিতা দিচ্ছে রাশিয়ার রোসাটম।
প্রাথমিক পরিকল্পনায় জানানো হয়েছিল যে, রূপপুরের প্রথম ইউনিটটি ২০২৩ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে পারবে। এ কেন্দ্র নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। তবে চলতি বছরের শেষে এ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে।