বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রমজানের শুরুতেই চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে বিপুল ভোগ্যপণ্য। ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, গম, মটর, চিনি, খেজুরসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য নিয়ে গত ১৫ দিনে বন্দরে নোঙর করেছে ২২ জাহাজ। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বন্দরে ভেড়ার কথা আছে আরও পাঁচটি জাহাজ। রোজার বাজার ধরতে শেষ মুহূর্তে এভাবে একের পর এক জাহাজ এসেছে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে।
ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবার আগেভাগে তৎপর ছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তেল, চিনি, ছোলা ও খেজুরে দেওয়া হয়েছে শুল্ক ছাড়। আন্তঃমন্ত্রণালয় পর্যায়ে হয়েছে একাধিক জরুরি বৈঠক। বাংলাদেশ ব্যাংকও তাদের তৎপরতা শুরু করে আগেভাগে। রমজানের বহুল ব্যবহৃত পণ্য ৯০ দিনের সাপ্লায়ার্স বা বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় আমদানি করার সুযোগ দিয়েছে তারা। এ সুযোগের ফলে এবার বাকিতেও পণ্য আমদানি করতে পেরেছেন ব্যবসায়ীরা। কেউ চাইলে ন্যূনতম টাকা পরিশোধ করেও আনতে পেরেছেন রমজানের পণ্য। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিশেষ এই সুবিধা পাবেন আমদানিকারকরা।
এতসব উদ্যোগের পরও এবার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি ভোগ্যপণ্যের বাজার। ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে গিয়ে অসুবিধা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। ন্যূনতম মার্জিনে এলসি খুলতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা থাকলেও তা অনেক ব্যাংক মানেনি বলেও অভিযোগ আছে ব্যবসায়ীদের।
এদিকে যুদ্ধসহ নানা কারণে অস্থিরতা ছিল বিশ্ববাজারে। বাড়তি ছিল জাহাজ ভাড়াও। পর্যাপ্ত পণ্য মজুত থাকার পরও এসবের প্রভাবে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে তেল, ছোলা, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য। এ জন্য চট্টগ্রামের প্রধান পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জ এবার ‘উত্তপ্ত’ ছিল আগেভাগেই। দাম কিছুটা বাড়তি হওয়ায় এবার বেচাকেনা কিছুটা কম হলেও এখন আবার সরগরম আছে প্রধান এই পাইকারি মোকাম।
এখনও ১২ জাহাজ বন্দরে
গত রোববার এক দিনেই চিনি তৈরির কাঁচামাল, ছোলা, ভোজ্যতেল ও গম নিয়ে বন্দরে নোঙর করেছে ছয়টি জাহাজ। মোট ৯৭ হাজার ৭০০ টন গম নিয়ে এসেছে দুটি জাহাজ। বিএসএম গ্রুপের ২২ হাজার ১০০ টন ছোলা নিয়ে আরও একটি জাহাজ নোঙর করেছে রোববার। একই দিন দুটি জাহাজে চিনি তৈরির কাঁচামাল এসেছে ৬৪ হাজার ৬০০ টন। এর মধ্যে মেঘনা গ্রুপের চিনি রয়েছে ৫০ হাজার ৪০০ টন, আকিজ গ্রুপের ১৪ হাজার ৫০০ টন। সিটি গ্রুপের ৬০ হাজার ৮০০ টন চিনি বোঝাই আরেকটি জাহাজ এসেছে ৬ মার্চ। গত রোববার নোঙর করা জাহাজের ৪৮ হাজার ৮০০ টন ভোজ্যতেলও সিটি গ্রুপের। ৫১ হাজার ৭০০ টন সয়াবিন নিয়ে আরেকটি জাহাজ এসেছে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি। এই জাহাজ থেকে এখনও তেল খালাস চলছে। এদিকে গম বোঝাই আরও পাঁচটি জাহাজ নোঙর করা আছে বন্দরে। ফেব্রুয়ারিতে আসা এসব জাহাজে প্রায় আড়াই লাখ টন গম রয়েছে।
আসছে আরও পাঁচ জাহাজ
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ভোগ্যপণ্য বোঝাই আরও পাঁচটি জাহাজ আসার কথা রয়েছে। এর মধ্যে কাল বুধবার মেঘনা গ্রুপের ৫৯ হাজার ১০৬ টন ভোজ্যতেল নিয়ে একটি জাহাজ বন্দরে নোঙর করতে পারে। ৩৩ হাজার টন মসুর ডাল নিয়ে ২০ মার্চ বন্দরে আসতে পারে আরেকটি জাহাজ। অন্য জাহাজগুলোও এ সময়ের মধ্যে নোঙর করবে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর মধ্যে রয়েছে খেজুরের চালান থাকা দুটি জাহাজ।
এক সপ্তাহ আগে এসেছে ১০ জাহাজ ভোগ্যপণ্য নিয়ে গত মাসের শেষ সপ্তাহে এসেছে ১০টি জাহাজ। এর মধ্যে গম বোঝাই জাহাজ ছিল ছয়টি। ভোজ্যতেল বোঝাই জাহাজ ছিল দুটি। এর একটিতে ছিল সিটি গ্রুপের ৬০ হাজার ৫০০ টন তেল। অন্যটিতে ছিল ১৬ হাজার ৯০০ টন তেল। এই সময় নোঙর করা গমের বেশির ভাগের মালিক মেঘনা গ্রুপ।
কে কী বলছেন
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘এবার রমজানের আগেই বেশ কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চারটি পণ্যের শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। এলসি খুলতে ব্যবসায়ীরা যাতে কোনো অসুবিধায় না পড়েন, সে জন্য আগাম নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার পরও কিছু ব্যাংক এই নির্দেশনা মানতে গড়িমসি করেছে। ডলার নিয়েও কিছু কিছু ব্যাংক হয়রানি করেছে বলে অভিযোগ আছে। তার পরও পর্যাপ্ত পণ্য আমদানি হয়েছে।’ খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগির আহমদ বলেন, ‘শবেবরাতের পর থেকে জমজমাট থাকে বেচাকেনা। এখান থেকে পণ্য নিয়ে ১০ জেলায় বেচাকেনা করেন মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।’