বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ডলার সংকট নিয়ে অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। প্রতিদিন ব্যাংকে গড়ে প্রায় ৫ লাখ ডলার জমা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার আমানত হিসাবে বিনা প্রশ্নে জমা রাখার সুযোগ দেওয়ায় ব্যাংকে ফিরে আসছে ডলার। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের আরএফসিডি হিসাবে জমা দেওয়া ডলারের ওপর ৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। এই হিসাবের ডলার কোনো বাছবিচার ছাড়াই দেশে ও বিদেশে গিয়ে খরচ করা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব পদক্ষেপে বাড়ছে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ। নতুন অফশোর ব্যাংকিং আইন করার কারণে বিদেশে থাকা বাংলাদেশিরা এখন ডলার সহজে পাঠাতে পারবেন। এতে নতুন করে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলার সরবরাহ বাড়ছে।
জানা গেছে, এখন স্থিতিশীল হয়ে আছে ডলার বাজার। ১২১ থেকে ১২২ টাকায় রেমিট্যান্স কিনছে ব্যাংকগুলো। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করছে ১২২ থেকে ১২৪ টাকায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী আন্তব্যাংকে ডলার কেনার নির্ধারিত দর ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা, বিক্রিতে ১১০ টাকা নির্ধারিত আছে। এখনো খোলাবাজারে প্রতি ডলার ১২০ টাকার ওপরে কেনাবেচা হয়। ডলার বাজার স্থিতিশীল করতে কোনো কোনো ব্যাংক এখন মানুষের ঘরে রাখা ডলার পেতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ ডলারের মজুত বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি। যা গত জানুয়ারি মাসে ছিল ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অবশ্য ডলার সংকটের আগে ব্যাংকগুলোতে গড়ে নগদ ৫ কোটি ডলার মজুত থাকত।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের ৩ ডিসেম্বর থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে মানুষের ঘরে রাখা ডলার ব্যাংকে ফেরাতে আবাসিক বৈদেশিক মুদ্রা আমানত বা রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট (আরএফসিডি) হিসাবের ওপর সুদসহ বাড়তি সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এরপরই বেশ কয়েকটি ব্যাংক বাড়তি উদ্যোগ নিয়ে এই হিসাব খুলতে শুরু করে। বিদেশ থেকে এসেছেন ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে এমন যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক ব্যাংকে গিয়ে আরএফসিডি হিসাব খুলতে পারেন। বিদেশ গেছেন তার প্রমাণপত্র অর্থাৎ পাসপোর্ট ও ভিসার নথিপত্র ব্যাংকে জমা দিয়ে সহজেই খোলা যাচ্ছে এই হিসাব। এই হিসাবের বিপরীতে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কোনো চেক বই না দিয়ে ডেবিট কার্ড দেয়, যা থেকে খরচে কোনো অনুমোদন লাগে না। একজন নাগরিক প্রতিবার বিদেশ ভ্রমণের জন্য ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত আরএফসিডি হিসাবে জমা রাখতে পারবেন। ফলে গত এক বছরে যদি কেউ ১০ বার বিদেশ ভ্রমণ করে থাকেন, তিনি চাইলে তার হিসাবে কোনো নথিপত্র ছাড়াই ১ লাখ ডলার জমা দিতে পারেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো এখন এই হিসাবের বিপরীতে ৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, এই হিসাবে জমা অর্থের ওপর ব্যাংকগুলো বেঞ্চমার্ক রেটের সঙ্গে আরও অন্তত দেড় শতাংশ সুদ দেবে। সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (সোফর) এখন ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। সে অনুযায়ী আরএফসিডি হিসাবে সুদহার দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) ব্যাংকিং চ্যানেলে ৪২৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৭৬ কোটি ডলার বা ২১ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতে রেমিট্যান্স কম ছিল। যে কারণে সব মিলিয়ে অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বেড়েছে মাত্র ১০৫ কোটি ডলার বা ৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। এ সময়ে প্রবাসীরা মোট ১ হাজার ৫০৬ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১ হাজার ৪০১ কোটি ডলার।
ব্যাংকাররা জানান, গত ডিসেম্বর থেকে রেমিট্যান্স গ্রাহকের নামেও বৈদেশিক মুদ্রায় অ্যাকাউন্ট খুলে ডলার রাখার সুযোগ দেওয়া হয়। এর বিপরীতে সুদ মিলছে ৭ থেকে ৯ শতাংশের ওপরে। অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে দেশে অর্থ আনতে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে। আবার বিভিন্নভাবে রিজার্ভ বাড়ানোর মাধ্যমে বাজারে ইতিবাচক একটি বার্তা দিতে পেরেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে সবাই ব্যাংকে ডলার জমা করতে উৎসাহিত হচ্ছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, গত কয়েক মাস প্রবাসী আয় বেড়েছে। রপ্তানিও আগের সময় থেকে বেড়েছে। তুলনায় আমদানি কম হয়েছে। এতে ডলার বাজার এখন স্থিতিশীল।