বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তৎকালীন রেল ডিভিশন লালমনিরহাটসহ উত্তরাঞ্চলে একটি বড় অংশ নিয়ে গঠন করা হয় মুক্তিযুদ্ধের ৬ নম্বর সেক্টর বুড়িমারী। একাত্তরের উত্তাল মার্চ থেকে দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ছিল শত্রুমুক্ত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দীর্ঘদিন বুড়িমারী ছিল অবহেলিত এলাকা।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুড়িমারী স্থলবন্দরকে আধুনিকায়নসহ প্রশস্ত সড়ক ও নতুন রেলপথ স্থাপন করে দিয়েছেন। পাশাপাশি এবার রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বুড়িমারী থেকে বিলাসবহুল আন্তঃনগর ট্রেন বুড়িমারী এক্সপ্রেসও চালু করে দিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন দেশের উত্তরাঞ্চলের ভারত সীমান্তবর্তী লালমনিরহাটের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
বুড়িমারী স্থলবন্দর আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর। এ রুট দিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে ভারত, নেপাল ও ভুটানে কয়েকশ যাত্রী চলাচল করেন। এখানে প্রতিদিন শতাধিক আমদানি ও রপ্তানিকারকরা আসেন দেশের নানা স্থান থেকে। ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’র কল্যাণে স্থলবন্দরটির সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে এবং স্থলবন্দরটিতে বিদেশগামী যাত্রী ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের ভিড় বাড়বে।
ট্রেনটি যাত্রা শুরু করায় লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালিগঞ্জসহ জেলার ৫ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো। ট্রেনটি বুড়িমারী থেকে ঢাকার পথে ১১টি স্টেশনে থামবে আর ঢাকা থেকে বুড়িমারীতে ফেরার পথে ১২টি স্টেশনে থামবে।
এলাকাবাসী বলছিলেন, কথা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যার সেই কথার বাস্তবায়ন দেখতে পেলাম আমরা। উত্তরাঞ্চলের বুড়িমারী-লালমনিরহাট-ঢাকার প্রথম দীর্ঘতম রুটে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলো বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটির। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে লালমনিরহাটের বুড়িমারী থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন এমপি।
মোতাহার হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি আজ পূরণ হয়েছে। এ ট্রেনটি চালু হওয়ায় বুড়িমারীবাসীসহ জেলার মানুষ খুশি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, লালমনিরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান, বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজশাহী পশ্চিম ব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল ও পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পূর্ণ চন্দ্র রায় প্রমুখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলের ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম।
অনেকে জানান, ট্রেনটির নামকরণে তিন বিঘা করিডর এক্সপ্রেস। কিন্তু না, নামকরণের যুক্তিও তুলে ধরা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গেরিলা নেতা ড. এসএম শফিকুল ইসলাম কানু বলেন, নতুন ট্রেনটির নামের যুক্তি সুন্দর। কারণ ৭১-এর স্বাধীনতাযুদ্ধে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী হাসর উদ্দিন দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের হেড কোয়ার্টার। যার পাঁচ সাব-সেক্টরের মধ্যে ভজনপুর, পাটগ্রাম, সাহেবগঞ্জ, মোগলহাট ও চিলাহাটি।
এটিই একমাত্র সেক্টর মুক্তিযুদ্ধে যার সদর দপ্তর বাংলাদেশেই ছিল যা বুড়িমারীতে। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন উইং কমান্ডার এম খাদেমুল বাশার। এই সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা ছিল ১১ হাজার। এদের মধ্যে দুই হাজার নিয়মিত সেনা এবং ৯ হাজার ছিল গণবাহিনীর সদস্য।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় যে অবকাঠামো দরকার তা বুড়িমারী স্টেশনে না থাকার কারণে এ ট্রেনটি আপাতত লালমনিরহাট থেকে চলাচল করবে। আর বুড়িমারী থেকে সংযোগ দেওয়া হবে মেইল ট্রেনের মাধ্যমে আপ এবং ডাউন। ট্রেনটিতে মোট ১৪টি বগি রয়েছে। কিন্তু উত্তরাঞ্চলের বুড়িমারী-লালমনিরহাট-ঢাকার প্রথম দীর্ঘতম রুট হওয়ায় ট্রেনটি চলাচল করতে হলে প্রয়োজন দুটি রেক।
কিন্তু দুটি রেক না থাকায় ৫২৯ কিলোমিটার রুটে চলাচল করা এ ট্রেনটি প্রতি মঙ্গলবার বাদে সপ্তাহে ৬ দিন লালমনিরহাট স্টেশন থেকে রাত ৯টা ১০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। তবে ‘চলতি বছরেই আরেকটি রেক যুক্ত করে ট্রেনটি বুড়িমারী স্টেশন থেকে সরাসরি ঢাকা চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।’ তবে উদ্বোধনী ট্রেনটি রাতে বুড়িমারী থেকেই রাজধানী ছেড়ে যায় সরাসরি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রাফিক ট্রান্সপোর্টেশন শাখার উপ-পরিচালক (টিটি) মো. শওকত জামিল মোহসী স্বাক্ষরিত এক নির্দেশপত্রে বলা হয়, নতুন বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের নম্বর হচ্ছে ৮০৯/৮১০। বুড়িমারী এক্সপ্রেস (৮০৯) ঢাকা কমলাপুর স্টেশন থেকে সকাল সাড়ে ৮টায় ছেড়ে যাবে এবং লালমনিরহাট স্টেশনে পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে। এরপর ট্রেনটি ওই স্টেশনে যুক্ত হবে লালমনিরহাট-বুড়িমারী-লালমনিরহাট রুটের ৪৫৫ নম্বর ট্রেনের সঙ্গে। লালমনিরহাট স্টেশন থেকে ট্রেনটি ৬টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে ৮৫ কিলোমিটার অদূরে বুড়িমারী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাবে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে।
অন্যদিকে বুড়িমারী কমিউটার ট্রেন বুড়িমারী স্টেশন থেকে সন্ধ্যা ৬টায় ছেড়ে এসে লালমনিরহাট স্টেশনে পৌঁছাবে রাত ৮টা ২৫ মিনিটে। ওই স্টেশনে ট্রেনটি যুক্ত হবে বুড়িমারী এক্সপ্রেস (৮১০) ট্রেনের সঙ্গে। ট্রেনটি লালমনিরহাট স্টেশন থেকে ঢাকা অভিমুখে ছেড়ে যাবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে। ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছাবে সকাল ৭টায়। বুড়িমারী এক্সপ্রেস (৮০৯) বুড়িমারী ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে সোমবার এবং বুড়িমারী এক্সপ্রেস (৮১০) এর সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে মঙ্গলবার। ১৪ কোচের ট্রেনে মোট আসন থাকবে ৬৩৮/৬৫৩টি। ট্রেনের রেক বেজ ও ওয়াটারিং করা হবে লালমনিরহাটে এবং ক্লিনিং করা হবে বুড়িমারীতে।
বুড়িমারী এক্সপ্রেস যেসব স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে: ৮০৯ নম্বর ট্রেনটি ঢাকা বিমানবন্দর, ঈশ্বরদী বাইপাস, নাটোর, সান্তাহার, বগুড়া, বোনারপাড়া, গাইবান্ধা, কাউনিয়া, লালমনিরহাট, তুষভান্ডার, হাতিবান্ধা, বড়খাতা ও পাটগ্রাম স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে। অন্যদিকে ৮১০ নম্বর ট্রেনটি পাটগ্রাম, বড়খাতা, হাতিবান্ধা, তুষভান্ডার, লালমনিরহাট, কাউনিয়া, গাইবান্ধা, বোনারপাড়া, বগুড়া, সান্তাহার, নাটোর ও ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে।