বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : যেসব প্রকল্প দ্রুত শেষ করা সম্ভব হবে, সেগুলোতে বরাদ্দ বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগকে (আইএমইডি) নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সংশোধিত এডিপি অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) আকার দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
মূল এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এনইসি সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম (অব.), পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার ও পরিকল্পনাসচিব সত্যজিৎ কর্মকার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, মূল এডিপি থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে আরএডিপির আকার হয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের এক লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৬৫.৯২ শতাংশ।
এ ছাড়া বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বা ৩৪.০৮ শতাংশ। যে পরিমাণ অর্থ বাদ যাচ্ছে তার মধ্যে সরকারি তহবিলের সাড়ে ৭ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা বাদ যাচ্ছে। সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দসহ মোট প্রকল্প থাকছে এক হাজার ৫৮০টি। মূল এডিপিতে প্রকল্প ছিল এক হাজার ৩৪০টি।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সংশোধিত এডিপিতে নতুন করে যোগ হয়েছে অন্তত শতাধিক নতুন প্রকল্প। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমানোর পেছনে কর্মকর্তাদের অদক্ষতাই দায়ী। এ জন্য কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, যেসব চলমান প্রকল্প অল্প বরাদ্দ দিয়ে চলছে, বরাদ্দ বাড়ানো হলে দ্রুত সমাপ্ত করা সম্ভব হবে, সেসব প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। উন্নয়ন প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন করতে আরো নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া অগ্রাধিকার চিহ্নিত করে জনগণের কল্যাণে গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আব্দুস সালাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়নে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে গুরুত্ব দিতে বলেছেন। এ ক্ষেত্রে আইএমইডিকে বিশেষ ভূমিকা রাখতে বলেছেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সামাজিক সুরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো খাতে বরাদ্দ ও বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপরও বৈঠকে জোর দেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সামর্থ্যের অভাব এবং অন্যান্য কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রায়ই আরএডিপিতে কম বরাদ্দ পায়। আরএডিপি বাস্তবায়নে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে ধীরগতির এডিপি ব্যবহারের গতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরটি অনেক অসুবিধার পাশাপাশি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হয়েছে, যা উন্নয়নের গতির জন্য ক্ষতিকর।
গত নির্বাচন নিয়ে সব জল্পনা-কল্পনা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্সের মতো সব অর্থনৈতিক সূচকও বাড়ছে। স্থিতিশীলতা উন্নয়নের পূর্বশর্ত এবং এটি এখন বিরাজ করছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন এখন সুষ্ঠুভাবে চলছে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার জানান, বর্তমান ও বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে সামান্য কিছু পরিবর্তন করে চলতি অর্থবছরের জন্য আরএডিপি চূড়ান্ত করা হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর বেশি জোর দিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, প্রকল্পের বাধা দূর করতে অনেক আলোচনা হয়েছে। এ জন্য মন্ত্রিপরিষদসচিবের নেতৃত্বে প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়াতে রূপরেখা দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে মন্ত্রিপরিষদসচিবকে কিভাবে প্রকল্প পরিচালকদের সক্ষমতা বাড়ানো যায় এবং একটি পুল তৈরির মাধ্যমে তাঁদের সর্বোচ্চ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য একটি রোডম্যাপ জমা দিতে বলেছেন। রোডম্যাপ ও গাইডলাইন পাওয়া গেলে বাস্তবায়নে ধীরগতির প্রবণতা ও সামর্থ্যের অভাব সামগ্রিকভাবে মোকাবেলা করার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করা হবে।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে প্রায় ৩৩০টি প্রকল্প চলতি অর্থবছরে শেষ করতে বলেছেন। ওই ৩৩০টি প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে দেশি-বদেশি তহবিল প্রস্তুত থাকায় প্রকল্পগুলো সময়সীমার মধ্যে শেষ হবে।
পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় বাস্তবায়নাধীন দুটি প্রকল্প ছাড়া বাকি প্রকল্পগুলো অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে সব মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে অঙ্গীকার করেছেন। আমরা যে লক্ষ্য নিয়েছি, সেগুলো শেষ হবে বলে আশা করছি।’