বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হওয়া দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিভেদের দেয়াল ভাঙতে প্রথমে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কার্যক্রম গতিশীল করার কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল। এজন্য সারা দেশে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াতে সহযোগী সব সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কালবেলাকে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন শেষে যেখানে যেখানে সমস্যা আছে, তাদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করছি সমাধানের জন্য। সমন্বয় করা হচ্ছে দলকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে। কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনতেই এই উদ্যোগ। এরই অংশ হিসেবে মেয়াদোত্তীর্ণ শাখার সম্মেলন, অসম্পূর্ণ পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা, মতভেদ, মতদ্বৈধ দূর করে দলকে চাঙ্গা করতেই ধারাবাহিক বৈঠক।’
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, তাঁতী লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং মৎস্যজীবী লীগকে সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে রয়েছে ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এরই মধ্যে বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছেন। তিনি গত বৃহস্পতিবার যুব মহিলা লীগ এবং শুক্রবার ছাত্রলীগের সঙ্গে বৈঠক নানামুখী দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। আগামীকাল মঙ্গলবার তিনি কৃষক লীগ নেতাদের সঙ্গে বসবেন। এভাবে রোজার মাসের মধ্যেই পর্যায়ক্রমে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সব সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান কালবেলাকে বলেন, ‘সাংগঠনিক বিষয়ে নির্দেশনা দিতেই ধারাবাহিকভাবেই বৈঠক হচ্ছে। শিগগির অন্য সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সঙ্গেও বৈঠক করবে আওয়ামী লীগ। আগামী মঙ্গলবার কৃষক লীগের সঙ্গেও বৈঠক রয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সহযোগী সংগঠনের নেতাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির কলেবর বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এজন্য মেয়াদোত্তীর্ণ সব শাখা কমিটির নতুন সম্মেলন এবং যেখানে সম্মেলন হয়েছে সেখানে দ্রুততত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। নানা জটিলতার কারণে যেসব জায়গায় দীর্ঘদিন সম্মেলন হয়নি, সেখানে সম্মেলনের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। প্রতিটি স্তরে সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে দেওয়া হচ্ছে একগুচ্ছ পরামর্শ।
জানা গেছে, গত শুক্রবার সকালে ছাত্রলীগের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেখানে তিনি সংগঠনটির বিভিন্ন শাখার সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে সার্বিক কর্মকাণ্ড গতিশীল করার নির্দেশনা দেন। সংগঠনের অভ্যন্তরে সব রকম দ্বন্দ্ব নিরসের-কোন্দল দূর করতে শীর্ষ নেতাদের উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেন। এ সময় ছাত্রলীগ নেতারা সংগঠন চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক দলীয় স্বার্থে সব রকম কোন্দল ভুলে সংগঠনের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে বলেন। তিনি ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের উত্তর ও দক্ষিণ শাখার নেতাদের দ্রুত কমিটি দিতে নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত কালবেলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আমাদের ডেকে বেশকিছু সাংগঠনিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি সংগঠনের বিভিন্ন শাখার সম্মেলন, কমিটি পূর্ণাঙ্গ করাসহ বিভেদ ভুলে কাজ করতে নির্দেশনা দেন।’
সূত্র জানায়, যুব মহিলা লীগের সঙ্গে বৈঠকে ওবায়দুল কাদের অভিমান ভুলে মিলেমিশে কাজ করতে সংগঠনটির নেত্রীদের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া সংগঠনকে আরও গতিশীল করতে তিনি বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন।
যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি কালবেলাকে বলেন, ‘মূলত সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়াতেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেসব জায়গায় সম্মেলন হয়নি, তা দ্রুত সম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে বলা হয়েছে। যেখানে সম্মেলন হয়েছে সেসব শাখায় দ্রুত কমিটি দিয়ে দলকে চাঙ্গা করতে পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। সারা বাংলাদেশে সংগঠনের গতিশীলতা আনতে যা যা করণীয় তাই করতে বলা হয়েছে।’
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে বৈঠক করবেন বলে আভাস দিয়েছেন। তবে কোন সংগঠনের সঙ্গে কবে বৈঠক হবে—তা চূড়ান্ত হয়নি।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু কালবেলাকে বলেন, ‘শুনেছি আমাদের সঙ্গেও বৈঠক হবে। তবে কবে হবে, তা জানানো হয়নি।’
এদিকে রোজার মাসে ইফতার পার্টি না করে মানবিক কাজে এগিয়ে আসতে দলের সব শাখা ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে অসহায় দুস্থদের ইফতার বিতরণ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ এমনকি অর্থ সহায়তা করছে দলটি।