বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ডেঙ্গু রোগীদের সময়মতো ও যথাযথ চিকিৎসাসেবা দিতে সারা দেশের সব হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, হাসপাতালগুলোকে আগেভাগেই প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগীরা যেন দ্রুত হাসপাতালে আসে ও চিকিৎসা পায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় অনেক দেরিতে আসে। তখন কিছু করা যায় না। এ বার্তা সবাইকে দিতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নির্মূলে করণীয় বিষয় নিয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা। সমন্বয় সভায় ডেঙ্গুর পরিসংখ্যানগত তথ্য তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে গত ২৩ বছরে যত ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছে, ২০২৩ সালে এক বছরেই তার থেকে বেশি রোগী আক্রান্ত হয়েছে। গত ২৩ বছরে দেশে ডেঙ্গু রোগী ছিল প্রায় আড়াই লাখ। কিন্তু ২০২৩ সালে মাত্র এক বছরেই রোগী ছিল প্রায় ৩ লাখ। এ সংখ্যা শুধু হাসপাতালে ভর্তিকৃতদের। এর বাইরে আরও রোগী ছিল। অতএব আমাদের এবার আগে থেকেই সতর্ক না হয়ে উপায় নেই।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের একদিকে যেমন মশা মারতে হবে, আবার অন্যদিকে প্রাদুর্ভাব কমাতে আগে থেকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। সবার আগে আমাদের নিজ নিজ এলাকার কমিউনিটি সম্পৃক্ততা ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। মশা মারার জন্য ওষুধ যেমন মানসম্পন্ন হতে হবে, তেমনি ভালো চিকিৎসাব্যবস্থাও রাখতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে শুরু হওয়া উদ্যোগ চলমান রেখে সব সেক্টরকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।’
সভায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা ঢাকা সিটি করপোরেশনকে লক্ষ করে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে লার্ভার তথ্য জানতে হবে। নিয়ম না মানলে জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় যারা বাধা হবে তাদের জরিমানা করাসহ আরও কঠোর নিয়ম করতে হবে।’
ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণের মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত সব রোগীকে সময়মতো চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। কোনো রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে পাঠানো যাবে না। ২০২৩ সালের ডেঙ্গুতে নারী ও শিশু কেন বেশি মারা গেল সেটি নিয়ে গবেষণা করে ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষকে সঠিক তথ্য জানাতে হবে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগপ্রতিরোধ করতে আমাদের এক হয়ে কাজ করতে হবে। কোনো ভেদাভেদ যেন আমাদের মধ্যে না হয়। করোনা যেভাবে আমরা সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করেছি, ডেঙ্গুও আমরা এক হয়ে সমন্বিতভাবে প্রতিরোধ করব। আরও সতর্কতা হয়ে পরীক্ষা ও যাচাই করে আমাদের ওষুধ কেনার উদ্যোগ নিতে হবে।’
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘করোনার মতো ডেঙ্গু প্রতিরোধে এ বছর আমরা আগেভাগেই এ সমন্বয় সভার আয়োজন করেছি। আশা করছি, এ বছর সবার সঙ্গে সমন্বয় করে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে ও মৃত্যুহার অনেক কমাতে সক্ষম হব।’
সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম, বি এম এ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ, স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী, বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।