বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : সরকারের নানামুখী তৎপরতায় জিনিসপত্রের দাম কমতে শুরু করেছে। তিন সপ্তাহ আগের ১২৫ টাকা কেজি পেঁয়াজ এখন ৫০ টাকায় নেমেছে। কোথায়ও কোথায়ও প্রতি কেজি মাংস পাওয়া যাচ্ছে ৬০০ টাকার নিচে। শুধু তাই নয়, বেশিরভাগ সবজির দাম এখন নিম্নমুখী। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক পদক্ষেপের কারণে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ডলারের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান রমজান মাস ও আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে পরিবার-পরিজনদের কাছে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। তাতে বাজারে ডলারের সরবরাহ আরও বেড়ে যাবে। এর ফলে ঈদ ঘিরে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে চাপ কিছুটা সহনীয় থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। রমজান মাসকে কেন্দ্র করে এরইমধ্যে বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।
চলতি মার্চ মাসের প্রথম ১৫ দিনে বৈধ বা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১০২ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে এসেছে। এতে সব পর্যায়ে ডলারের দাম কমতে শুরু করেছে।
গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের অনানুষ্ঠানিক দাম প্রায় চার থেকে ৬ টাকা কমেছে। ঈদ সামনে রেখে ডলারের সরবরাহ আরও বাড়ার প্রত্যাশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে আগামীতে ডলারের দাম আরও কমার আশা করা হচ্ছে। ডলারের সরবরাহ বাড়ায় ব্যাংকগুলোও এখন এলসি খুলতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। এমনকি আমদানি হচ্ছে আগের তুলনায় বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে আগের বছরের একই সময়ে তুলনায় আমদানি বেড়েছে ১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর ফলে আমদানি করা পণ্যের দামও ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ঘরে রাখা ডলার ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে, প্রবাসী আয়ে গতি এবং রফতানি আয়ের ইতিবাচক প্রবণতাকে এর মূল কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ডলার সাশ্রয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপও ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত কয়েক মাস টানা বাড়ছে প্রবাসী আয়। রফতানি আয়েও ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। আবার আমদানি ব্যয়ও কমে গেছে। এসব কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ডলার সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এর ফলে দামও কমছে। এতে চলতি হিসাবেও উদ্বৃত্তাবস্থা বজায় রয়েছে। ব্যাংকগুলো এখন এলসি খুলতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম বলেন, ‘চাহিদা-জোগানের ওপর নির্ভর করে জিনিসপত্রের দাম কমে বাড়ে। একইভাবে চাহিদ জোগানের গ্যাপ কমে আসার কারণে ইনফরমাল মার্কেটেও ডলারের রেট কমে এসেছে।’ তিনি আশা করেন, সামনের দিনগুলোতে ডলারের দাম আরও কমবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি দিনের শুরুতে ব্যাংকগুলোতে ডলারসহ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার নিট পজিশন ছিল ৩১২ মিলিয়ন ডলার। সেটা বেড়ে গত ১৪ মার্চ বুধবার ৭০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এ সময়ে বেশিরভাগ ব্যাংকের কাছে উদ্বৃত্ত ডলার ছিল।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘ডলার সংকট ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া নানা পদক্ষেপের একটা প্রভাব এখন বাজারে পড়ছে। ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে দাম কমছে।’
জানা যায়, সরবরাহ বাড়ায় আমদানিতে ডলারের অনানুষ্ঠানিক দাম কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। এখন আমদানি বিল নিষ্পত্তিতে ডলারের দাম নেওয়া হচ্ছে ১১৯ থেকে ১২০ টাকা, যা দুই সপ্তাহ আগেও ছিল ১২২ থেকে ১২৪ টাকা। তবে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম এর থেকেও ১০-১২ টাকা কম নির্ধারণ করা আছে। সর্বশেষ বাফেদা ও এবিবি মিলে আমদানিতে ডলারের দাম নির্ধারণ করে ১১০ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে রেকর্ড ২১৬ কোটি ডলার প্রবাসী আয় আসে। এর আগের মাসেও প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলারের বেশি ছিল। এছাড়া রফতানি আয়েও ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে পণ্য রফতানিতে আয় এসেছে প্রায় ৫১৯ কোটি ডলার। এটি গত বছরের একই মাসের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি। এছাড়া গত বছরের ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনে মানুষের ঘরে রাখা ডলার ব্যাংকে ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়ার পর এর সুফল মিলছে।
খোলা বাজারে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ডলারে দাম কমেছে প্রায় ৫ টাকা। গত দুদিন রাজধানীর দিলকুশা ও মতিঝিলের বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ হাউজে গিয়ে দেখা যায়, এই বাজারে প্রতি ডলারে ক্রেতাদের থেকে নেওয়া হচ্ছে ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৯ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত। গত সপ্তাহেও যা ছিল ১২১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২২ টাকা। আর তার আগের সপ্তাহে ছিল ১২৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২৪ টাকা।