বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আওয়ামী লীগের দেওয়া নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়ন কঠোরভাবে মনিটরিংয়ের পরামর্শ দিয়েছেন বক্তারা। তারা বলেছেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দুর্বল মনিটরিং। বাজার ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যসেবা, সরকারি প্রকল্পের কাজ এমনকি বাজেট বাস্তবায়ন সবখানেই মনিটরিংয়ের অভাব। ফলে এগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।
গতকাল বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে এমন তাগিদ দেওয়া হয়। একই অনুষ্ঠানের সমাপনী পর্বে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশ শ্রীলংকা হয়ে যায়নি, এটাই হচ্ছে এখনো সবচেয়ে ভালো খবর। আমাদের দেশের অর্থনীতি ভালো আছে। দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সেমিনারে ৯টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। এতে জানানো হয়, চিকিৎসার জন্য সাধারণ মানুষের পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বড় অঙ্কের টাকা। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৭৩ শতাংশ অর্থ চলে যায় নিজের পকেট থেকেই। যেটি শুধু আফগানিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। এদিকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় স্বাস্থ্য খাতের সরকারি বরাদ্দ অন্যান্য দেশের তুলনায় কম মাত্র ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে সবার জন্য স্বাস্থ্য এবং স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এটিসহ অন্যান্য ইশতেহার কার্যকর বাস্তবায়ন এবং কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তা মনিটরিংয়ের তাগিদ দেওয়া হয়।
‘আনপেকিং দ্য ইকোনমিক ম্যানুফেস্টো অব দ্য আওয়ামী লীগ ট্রেন্ড অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস ফর টুমরোস বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্ট ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনালের (অব.) আবদুস সালাম। সঞ্চালনা করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।
সেমিনারের ‘ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ : প্রসপেক্ট অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস অব হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন ইমপ্রুভমেন্ট’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের রিসার্স ফেলো ড. আবদুর রাজ্জাক সরকার। তিনি বলেন, ভারতে চিকিৎসা ব্যয় মানুষের পকেট থেকে যায় ৪৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, ভুটানে ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ, মালদ্বীপে ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ, নেপালে ৫১ দশমিক ৩০ শতাংশ, পাকিস্তানে ৫৭ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং শ্রীলংকায় ৪৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। তবে আফগানিস্তানে এ ব্যয় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ৭৭ দশমিক ২০ শতাংশ। বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যায় ওষুধ কিনতে ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ। মানুষের পকেট থেকে চিকিৎসা ব্যয় কমাতে সবার জন্য স্বাস্থ্য বিমা করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়নেরও তাগিদ দেওয়া হয়। অপর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে কর্মমুখী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হলেও বাস্তবায়ন এখনো অনেক দূরে।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, আমাদের একটি পক্ষ মনে করছে বাংলাদেশ শ্রীলংকা হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা তো হয়নি। একটি নতুন ব্যাংক, অনেক বন্ধু দেশ ও সংস্থা আমাদের সহায়তা করছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ অনেক দেশ থেকে নতুন বিদেশি বিনিয়োগ আসছে এবং প্রতিশ্রুতিও রয়েছে। আমাদর অবস্থা ভালো আছে। তাদের নেতা লন্ডনে বসে কী নির্দেশনা দেয় আর অন্ধকারে থেকে দেশে অনেকে সেগুলো বাস্তবায়ন করে। আমি বলব, আপনারা অন্ধকার ছেড়ে আলোতে আসেন। তিনি আরও বলেন, দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সব কিছু সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই। তাই এখন থেকে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জয় শেখ হাসিনা বলা উচিত। পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম বলেন, নির্বাচনি ইশতেহার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আওয়ামী লীগ সরকার সেটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
তবে একটু সময় তো লাগবে। দিন বদলের সনদ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ, এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে কাজ করছে সরকার। ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, এখন পর্যন্ত ১৪ বিলিয়ন ডলার নিয়ে গেছে তেল কোম্পানিগুলো। এ বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হলে বাংলাদেশ অনেক ভালো থাকত। আজকের পরিস্থিতির জন্য আন্তর্জাতিক বিষয় দায়ী। ড. মসিউর রহমান বলেন, সরকার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। এজন্য খেলাপি ঋণ কমানোর প্রচেষ্টাসহ আর্থিক খাতের সংস্কারে বাংলাদেশ ব্যাংক দায়িত্ব দিয়েছে।
ড. কামাল আবদুস নাসের চৌধুরী বলেন, শিক্ষা একটি গতিশীল বিষয়। কেননা আমরা যখন পড়েছি তখন শুনেছি এই শিক্ষা কর্মমুখী নয়, গতকালও শুনেছি, আজও শুনলাম এবং আগামী কালও একই কথা শুনতে হবে। শিক্ষা সময়ের সঙ্গে মিল রেখে পরিবর্তনশীল।