হীরেন পণ্ডিত : বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ কী স্বাধীন হতো? এক কথায় বলে বলে দেওয়া যায়, না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না এটি হলফ করেই বলা যায় ।
বাংলায় অনেক বীর সন্তান জন্মেছেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধুই চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের ২৪ বছরের সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বাঙালি জাতি মুক্তি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে, যার কাছে যা আছে, তা নিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হতে পারতো না। আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা অর্জন করতে পারতাম না।
২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানি হানাদাররা হামলা শুরু করে ঠিক তখনই জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানিরা এ বিজয় মেনে নিতে পারেনি। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে যার যা আছে তাই নিয়ে যুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। নির্দেশ দেন বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। বাংলার জনগণ তার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। ৭ মার্চের ভাষণের পর ২৫ মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তানি শাসন অচল হয়ে পড়েছিল। ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে তিনি যে নির্দেশ দিতেন সে অনুযায়ী দেশ চলতো। ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও যুদ্ধে বিজয় যে অবশ্যম্ভাবী, সে নির্দেশ দিয়েছিলেন। বাঙালি তার নির্দেশ পালন করে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছিল।
১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদাররা আত্মসমর্পণ করে। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তানিরা বাধ্য হয় বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে। আমাদের বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশি দেশ ভারত আমাদের সহায়তা করেছিল। আমাদের শরাণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল, অস্ত্র দিয়েছিল। এমনিক যারা জাতিসংঘে আমাদের সমর্থন দিয়েছিলেন আমি তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করছি। বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষের জন্য এবং বাংলার মানুষের কথা বলতে গিয়ে তিনি জীবনের অনেক সময় কারাগারে কাটিয়েছেন। এ দেশের মানুষ যেন অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা ও উন্নত জীবন পায় এটাই ছিল তার স্বপ্ন। জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ আমাদের গড়ে তুলতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের একটি দেশ দিয়ে গেছেন, যার কারণে আজ কেউ মন্ত্রী, কেউ এমপির মতো অনেক বড়বড় পোস্ট অর্জন করতে পেরেছেন। তাই আজকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কাছে সবার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। বঙ্গবন্ধু ছয় দফা না দিলে অধরা থেকে যেত, আমাদের স্বাধীনতার বাসনা। বঙ্গবন্ধু ছয় দফার আড়ালে মূলত এক দফার কথাই বলেছেন। সেই দফাটা হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু জানতেন, স্বাধীনতা ছাড়া এসব লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে তৎকালীন নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টিও নেতা মণি সিং এবং খোকা রায়ের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন বঙ্গবন্ধু, তখন তার ভাবনায় ছিল কেবল একটি ধারণা। আর তা হলো- পূর্ব বাংলার বাঙালির স্বাধীনতা। সেই বৈঠকে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘গণতন্ত্র-স্বায়ত্তশাসন এসব কোনো কিছুই পাঞ্জাবিরা দেবে না। কাজেই স্বাধীনতা ছাড়া বাংলার মুক্তি নাই। স্বাধীনতাই আমার চূড়ান্ত লক্ষ্য’ এবং সেই কারণেই, তিনি ছয় দফা দেন এবং তা প্রচারের জন্য গ্রাম বাংলার প্রতিটি প্রান্তরে প্রান্তরে ছুটেছেন। চূড়ান্ত মুক্তির জন্য জাগ্রত করেছেন চেতনা, প্রস্তুত করে তুলেছেন জনগণকে। বঙ্গবন্ধুর এই ছয় দফার কারণেই বুলেটের মুখে দাঁড়িয়ে ব্যালট বিপ্লব ঘটায় বাঙালি জাতি, যার ফলে স্বাধীনতার পথ উন্মোচিত হয়।
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১। টানা ২৪ বছরের সেই সংগ্রাম যেন এক মহাকাব্য, যেই কাব্যের ধারাবাহিকতায় কখনো ছয় দফা, কখনো বা সরাসরি ঘোষণা, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ মার্চ মাস বাঙালির স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতির এক মাস। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বিষাদ, আবেগ-অনুভূতি বিজড়িত মাস এই মার্চ। এই মার্চে ৪টি দিবস খুবই গুরুত্ব বহন করে। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ২০২২ জাতীয় দিবস, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিবস, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস এবং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা। এ মাসের ২৬ তারিখে এ দেশের জন্ম; আবার এ মাসের ১৭ তারিখে জন্মেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। তাই মার্চ বাঙালি জাতির জন্য অর্থবহ এক মাস। এ মাসেই তার জাদুকরী ভাষণ বাঙালি জাতিকে স্বপ্নে বিভোর করেছিলেন তিনি। গর্জে উঠেছিল বাঙালি। স্বাধীনতার প্রেরণার উৎস ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ওই ভাষণ। ঐতিহাসিক এই ভাষণের পর প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ের গহিনে লালন করা তখনো অধরা ‘স্বাধীনতা’ যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
একটাই আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ, একজনই নেতা বঙ্গবন্ধু। শত বছর আগে ১৭ মার্চে জন্ম নেওয়া তেজোদীপ্ত এই মানুষটি গর্জে ওঠেন ৭ মার্চ; সেই গর্জনেই অর্জন ১৬ ডিসেম্বর। পৃথিবীর বুকে নাম লেখালো স্বাধীন বাংলাদেশ। তার মেধা, প্রজ্ঞা, সততা, সাহস সর্বোপরি দেশপ্রেমেই বাংলাদেশের জন্ম হয়। বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘটনা হচ্ছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এই ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক-রাজনৈতিক স্বপ্নসাধ পূরণ হয়। ১৯৭১ সালে এসে যে রাজনৈতিক সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করে যদিও তার গোড়াপত্তন হয়েছিল বহু বছর আগে। তারপরে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের শিক্ষা আন্দোলন ও ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চে এসে বাঙালির সেই স্বপ্নসাধ যৌক্তিক পরিণতিকে স্পর্শ করে।
১ মার্চ রাতেই স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি সংগঠন তৈরি হয়। সেই সংগ্রাম পরিষদ ৩ মার্চ পল্টনে একটি শোভাযাত্রার আয়োজন করেছিল। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই শোভাযাত্রায় শাজাহান সিরাজ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করলেন। ইশতেহারে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সব কথা বলা ছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের চৌহদ্দি কী হবে, এই পতাকা বাঙালির পতাকা হবে, জয় বাংলা বাঙালির স্লোগান হবে, বঙ্গবন্ধু আমাদের মুক্তি-সংগ্রামের সর্বাধিনায়ক। সব কিছু বলা হয়েছিল। সে সময় মুহুর্মুহু স্লোগান হয়, বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর। ২ তারিখে পতাকা উত্তোলন, ৩ তারিখে ইশতেহার পাঠ, আর ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন বঙ্গবন্ধু। এভাবেই স্বাধীনতার পটভূমি তৈরি হয়।
বঙ্গবন্ধু ক্ষমতাকে ভালোবাসেননি, হৃদয় দিয়ে দেশকে ভালো বেসেছেন, দেশের মানুষকে ভালোবেসেছেন। অর্থ লোভ তাকে পায়নি কখনো। দেশের ভালোবাসার কাছে তার কাছে অর্থ ছিল তুচ্ছ। এমন নেতা কি আর জন্মাবে কখনো এ দেশে? বঙ্গবন্ধু হয়ে আর আসবেন না কখনো কেউ। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। বাংলাকে ভালোবাসার এমন মানুষ আর কখনোই আসবে না এ দেশে। তার মতো করে কেউ বাংলাকে আর ভালোবাসবে না; বাঙালিকে তার নিজের মতো করে আর কেউ শক্ত হাতে প্রতিরোধ করে রক্ষা করবেনা।
রাস্তঘাট, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। দেশের এই উন্নয়ন স্বাধীনতার সুফল। দেশ স্বাধীন না হলে এত উন্নয়ন করা সম্ভব হতো না। স্বাধীনতা যদি আমরা না পেতাম, তাহলে কী হতো? যদি বাংলাদেশ স্বাধীন না হতো, তাহলে কী কী হতো? ।খেনো বৈষম্যেও জাঁতাকালে পিস্ট হতে হতো।
স্বাধীনতা হলো সেই পরশপাথর, যা মানুষের সব কিছু বদলে দেয়, যা বদলে দিয়েছে বাংলাদেশের চিন্তা-চেতনা, বড় করেছে মানুষের বুকের কলিজা, সাহস, তাদের উদ্বুদ্ধ করেছে করেছে চির উন্নত শির করার জন্য। আর যত উন্নয়ন বলেন, অগ্রগতি বলেন, সবই স্বাধীনতার পওে দেশ গড়ে তোলার কর্মযজ্ঞের ফসল। স্বাধীনতা ছাড়া বড় কাজ হতোনা বড় বড় পদে থাকা হতো না, আজকে যে বাংলাদেশ সবকিছুতে ভালো করছে, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ, ফল উৎপাদনে রেকর্ডধারী, মাছ উৎপাদনে দুনিয়ার সেরাদের তালিকাভুক্ত, গার্মেন্টস রপ্তানিতে অন্যতম সেরা এর সবই সম্ভব হয়েছে স্বাধীনতা পেয়েছি বলে। মানব উন্নয়ন সূচকে যে বাংলাদেশ ভালো করছে, ভালো করছে ভারতের চেয়েও, তাও সম্ভব হচ্ছে আমরা স্বাধীন দেশ বলে। ৫৩ বছর আগে আমেরিকানরা বলত, পূর্ব পাকিস্তান কেন স্বাধীন হতে চায়, একটাও খনিজ সম্পদ নেই, ওই দেশ তো অর্থনৈতিকভাবে সফল হবে না, ওরা তো মারা যাবে। ৫৩ বছর পরে তারাই বলছে, বাংলাদেশ হতে যাচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনীতির একটা বা ইমার্জিং টাইগার।
এর সবই সম্ভব হয়েছে দেশ স্বাধীন হয়েছে বলে। আর সেই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, পুরো দেশকে স্বাধীনতার নামে মানুষের মাঝে যে অনুভূতির জন্ম দিয়েছিলেন একজন মানুষ তাঁর নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু যে একজন অসম সাহসী মানুষ ছিলেন তা এখন কারও অজানা নয়। এই সাহসের উৎস যদি আমরা খুঁজতে যাই– তাহলে দেখা যাবে মানবপ্রেম আর দেশপ্রেমই মূলত তাকে সাহসী হওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। মানবতার অবমাননা হচ্ছে, মানুষের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এরকম ঘটনা চোখে পড়লে ছোটবেলা থেকেই শেখ মুজিব প্রতিবাদ করতেন।
কিশোর মুজিব কত সব মানবিক কাজ করেছিলেন। বস্ত্রহীন মানুষকে বস্ত্র দান করে, অন্নহীনকে অন্নের ব্যবস্থা করে, সহপাঠীর সমস্যাকে আন্তরিকভাবে সমাধান করে তিনি সবার নজর কেড়েছিলেন। মানুষের প্রতি দরদ বা ভালোবাসা ছিল তাঁর মধ্যে সহজাত।
কৈশোর যে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন, তা ধওে রেখেছিলেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তা করে গেছেন। মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও কল্যাণচিন্ত তাকে সব সময় তাড়িত করত দেশের জন্য বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে দেশপ্রেমের চূড়ান্ত নজির রেখে গেছেন। ভীতু বাঙালিকে সাহসী করে তুলেছিলেন তিনি। শেখ মুজিবের কাছ থেকে সাহসের পাঠ আত্মস্থ করে বাঙালি মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখেছে। শেখ মুজিবের চরিত্রে অনেক সদগুণের সমাবেশ ঘটেছিল বলেই তিনি কালজয়ী হতে পেরেছেন। তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিকে খেয়াল করলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। একটি মানুষ কী করে এতটা ক্ষমাশীল আর উদার হতে পারেন, তা যারা তাকে কাছ থেকে দেখেননি তাদেরকে বুঝিয়ে বলা অসম্ভব। পৃথিবীর কিছু কিছু নেতা লৌহ মানব বা কঠিন শাসক হিসেবে পরিচিতি পেলেও বঙ্গবন্ধুর বৈশিষ্ট্য একেবারেই ভিন্ন। তিনি রাজনৈতিক নেতা হয়েও ক্ষমা, দয়া, ঔদার্যের যে মহান কীর্তি রেখে গেছেন ইতিহাসে তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
পাকিস্তানিরা তার ওপর অন্যায় আচরণ করেছে, নির্বাচনে জেতার পরও ক্ষমতা দেয়নি, অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে, ত্রিশ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে, তারপরও বঙ্গবন্ধুর প্রতিহিংসাপরায়ণ না হওয়া খুব সাধারণ ঘটনা নয়। বঙ্গবন্ধু কখনোই সংঘাত বা বিদ্বেষের রাজনীতিকে সমর্থন করেননি। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পক্ষে তার অবস্থান ছিল সুস্পষ্ট। নিজের ক্ষতি মেনে নিয়েও তিনি অন্যের সুখের জন্য চেষ্টা করেছেন।
একাত্তরে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি, এবং তার স্বপ্ন আজ বাস্তবায়নের পথে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, আধুনিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ!
তাই বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ যেন দেহ ও আত্মার মত এক অবিচ্ছেদ্য অংশ আমাদের কাছে! রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০- এর নির্বাচনসহ দীর্ঘ প্রায় ২৪ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতি ১৯৭১ সালে এসে উপনীত হয়। অত্যাচার নিপীড়নের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন স্বাধিকার ও স্বাধীনতার আন্দোলনে পরিণত হয়। আর বাঙালির এ আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন শেখ মুজিবুর রহমান।
পাকিস্তানের অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের এক পর্যায়ে এ স্বাধীকার ও স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্বে আসেন শেখ মুজিবুর রহমান। ধারাবাহিক আন্দোলনকে স্বাধীনতার দিকে অগ্রসর করে নিয়ে গিয়ে, শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে এক পর্যায়ে তিনি ভূষিত হন বঙ্গবন্ধু উপাধিতে।
ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল আয়তনবিশিষ্ট দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ নামক ভূখ-ের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে যাওয়া মানুষটির নাম শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার পর তিনি বলেছিলেন, “এ স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না খায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের মানুষ যারা আমার যুবক শ্রেণী আছে ,তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়।” তাঁর রাজনীতির মূলমন্ত্রই ছিল আদর্শের জন্য সংগ্রাম, আদর্শের জন্য আত্মত্যাগ যে আদর্শ, বিশ্বাস ও স্বপ্ন নিয়ে তিনি রাজনীতি করতেন, শত কষ্ট ও প্রচ- চাপেও তিনি তাতে অটল ছিলেন এটা আমরা দেখতে পাই তার ছাত্রজীবন থেকেই।
জেল-জুলুম ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধুর জীবনে এক নিয়মিত অধ্যায়ে পরিণত হয়েছিল। জনগণের জন্য, দেশের জন্য তিনি তার ৫৫ বছরের জীবনে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে ছিলেন, যা তার মোট জীবনকালের প্রায় এক-চতুর্থাংশ। অপরিসীম সাহস, দৃঢ়চেতা মনোভাব ও আপসহীন নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধু পরাধীন বাঙালি জাতিকে সংগ্রামী হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন করে।
হীরেন প-িত: প্রাবন্ধিক, গবেষক ও কলামিস্ট