বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : শ্রমিক-কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ বিচারক আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালত শুনানি শেষে চার্জশিট গ্রহণ করেন। আগামী ২ মে মামলার পরবর্তী শুনানি তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি মামলাটি বিশেষ জজ আদালত-৪ এ বদলি করা হয়েছে। এ সময় ড. ইউনূস আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধি, নেদারল্যান্ডসের প্রতিনিধি ও যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা।
শুনানি শেষে আদালত থেকে বের হয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই মামলা সম্পর্কে বলেন, ‘এখানো তো বিচার শুরু হয়নি। মাত্র অভিযোগ গ্রহণ করল। তবে যে কথাটা আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি। এটা থেকে আপনিও মুক্তি পাবেন না। কথা হলো এ বিষয়ে আমার কী ভূমিকা ছিল। এই যে হেনস্তাটা হলো, আমি কি হেনস্তা মনে করেছিলাম? আর যদি হেনস্তা মনে করেই থাকি। এর জবাব সবাইকে দিতে হবে একদিন। হেনস্তা হয়েছি কিনা এটা ভিন্ন ব্যাপার।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমাদের ওপর অনেক বালা-মুসিবত। ব্যক্তিগতভাবে আমার ওপর বালা-মুসিবত, আমার সহকর্মীদের ওপর বালা-মুসিবত এবং দেশের ওপর বালা-মুসিবত। এই বালা-মুসিবত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা যেন দোয়া করি।’
তিনি বলেন, ‘সামনে ঈদ আসছে। ঈদ খুশির দিন। আমরা যেন এই ঈদ উদযাপন করতে পারি। সামনে পহেলা বৈশাখ আরও খুশির দিন। সব খুশি একত্রে আসছে। এর মধ্যে বালা-মুসিবত থেকে কীভাবে উদ্ধার পাব সেটা যেন সবাই মিলে চিন্তা করি। একভাবে আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, দেশ বালা-মুসিবতের জন্য সমষ্টিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। কাজেই এগুলো অতিক্রম করতে না পারলে আমাদের কোনো মুক্তি নেই, আমাদের রেহাই নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নিয়ে কাজ করি না। কতগুলো অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করি, কতগুলো স্বপ্ন নিয়ে কাজ করি। দেশের মানুষ বিশ্বাস করে এতে এগিয়ে এসেছে। দেশ-বিদেশের মানুষ এটাতে বিশ্বাস করছে এবং তারা উৎসাহিত হয়েছে। যেটাকে আমরা সামাজিক ব্যবসা বলছি, এটা আমাদের মনে হয়েছে মানুষের জন্য মঙ্গল হবে। মানুষের মঙ্গলের জন্য আমরা এটা করছি। সেজন্য দেশ-বিদেশের নেতারা এটা জানতে চায়, বুঝতে চায়। সবাই চায় আমাদের কাছ থেকে শিখতে। সারা দুনিয়া বাংলাদেশের কাছ থেকে শিখতে চায়। আমাদের গৌরববোধ করতে হয়। তা না করে আমরা এমন কাজ করছি, আমরা যেন পাপের কাজ করে ফেলেছি। এমন অনুভূতি হওয়ার তো কোনো কারণ ছিল না।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আইনের শাসন বলে যে জিনিস সেটা আমরা পাচ্ছি না কোথাও। আমরা এ দেশের অংশীদার, আমরা সবাই মিলেই দেশ। আমার অনুরোধ মাহে রমজান মাসে নিজেদের দিকে তাকিয়ে, নিজ নিজ ভূমিকা পালন করি। আমরা যেটা করতে চাচ্ছিলাম, সেটা করতে পারছি কি না। না করতে পারলে কীভাবে আমরা প্রতিবাদ জানাব, কীভাবে কথাগুলো শোনাতে পারব। সে পথ আমাদের বের করতেই হবে। এছাড়া কোনো উপায় নেই।’
বালা-মুসিবত কী-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বালা-মুসিবত হলো মানুষ যেভাবে বাঁচতে চায়, সেভাবে থাকতে পারছে না। আইনের শাসন বলে যে জিনিসটা সেটা আমরা পাচ্ছি না।’
তার আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিচারক মামলা গ্রহণ করে চার নাম্বার কোর্টে বদলি করেছেন। ২ মে শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত বছরের ৩০ মে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। প্রথমে দুদকের মামলায় আসামি ছিলেন ১৩ জন। পরে চার্জশিটে নতুন একজন আসামি বেড়েছে।
আসামিরা হলেন-গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এসএম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী। এছাড়া অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক কামরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।