মেট্রোরেলের পরিকল্পনায় যুক্ত হচ্ছে পুরান ঢাকা

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : মেট্রোরেলের ৬টি রুট ২০৩০ সালের মধ্যে নির্মাণ করে ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত করার লক্ষ্য সরকারের। সরকারি এ পরিকল্পনায় মেট্রোরেলের লাইন-২ কে যুক্ত করে পুরোনো ঢাকাকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এমআরটি লাইন-২ গাবতলী-ঢাকা উদ্যান-মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড-ঝিগাতলা-সায়েন্স ল্যাবরেটরি-নিউমার্কেট-আজিমপুর-পলাশী-ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ-গুলিস্তান-মতিঝিল-কমলাপুর স্টেশন-মান্ডা-দক্ষিণগাঁও-ধামড়িপাড়া-সাইনবোর্ড- ভুইঘর- জালকুড়ি- নারায়ণগঞ্জ।

এ রুটের সাথে ব্রাঞ্চ লাইন (সংযুক্ত রুট) হিসেবে গোলাপশাহ মাজার-নয়াবাজার-সদরঘাট। এ প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক মো. আব্দুল বাকী মিয়া এ তথ্য জানিয়েছেন।
পুরোনো ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যে যানজটের ও উত্তরণের উপায় চিহৃিতকরণ শীর্ষক এ সভায় তিনি আরও বলেন, এলিভেটেড ও আন্ডারগ্রাউন্ড সমন্বয়ে এমআরটি লাইন-২ নির্মাণ করতে খরচ হবে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্প নির্মাণে অর্থ সংস্থানের জযে উন্নয়ন সহযোগী খোঁজা হচ্ছে।
এসময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস পুরানো ঢাকা নিয়ে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা জানতে চান। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি(বিআরটিএ)-এর সাবেক পরিচালক এস এম সালেহ উদ্দিন বলেন, মেট্রো সিস্টেম এমন হওয়া উচিত ছিল যেখানে একটা লাইন থেকে অন্য লাইনে হেৃটেই চলে যাওয়া যাবে। একইসাথে সার্কুলার মেট্রোরেল হলে সবাই উপকৃত হবে বলেও মন্তব্য করেন এ বিশেষজ্ঞ।
মেট্রোরেল তৈরির পরিকল্পনায় ঘাটতি উল্লেখ করে এস এম সালেহ উদ্দিন বলেন, মেট্রোরেলের লাইন-৬ নির্মানের সময় আরও ২ টি লাইন তৈরির কথা ছিলো এসটিপিতে। কিন্তু আরএসটিপি যখন করা হয় এ লাইন বাদ দিয়ে লিনিয়ার লাইনের দেখি চলে গেছি। আমরা ডেভেলপমেন্ট ওরিয়েন্টেড ট্রানজিট করেছি। কিন্তু আমাদের হওয়া উচিত ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট। নগর-পরিকল্পনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, সব দেশে নগর গড়ে ওঠে পরিকল্পিত। কিন্তু আমরা আগে ঘরবাড়ি, দোকানপাট, হাসপাতাল নির্মাণ করেছি কিন্তু রাস্তা নির্মাণ করিনি। ফলে আমাদের সমস্যা অত্যন্ত প্রবল। আমরা আজকে বিশ্বের মধ্যে অত্যন্ত খারাপ অবস্থা আমাদের। স্বাস্থ্য, যানজট, দূষণ সব দিক থেকে।
এমআরটি-২ প্রকল্পে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪৫ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা ধরা হয়েছে বৈদেশিক ঋণ হিসাবে। বাকি ১৫ হাজার ২১০ কোটি খরচ হবে সরকারি খাত থেকে। তবে ভূমি অধিগ্রহণ, টিওডিসহ স্টেশন প্লাজার খরচ এখানে ধরা হয়নি। এমআরটি লাইন ২-এর ডিপো ও ডিপো এক্সেস করিডর এবং কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মাণে ডেমরার মাতুয়াইল ও দামড়িপাড়া মৌজায় গ্রিন মডেল টাউন এবং আশুলিয়া মডেল টাউনের মধ্যবর্তী স্থানে মোট ৬৫ হেক্টর জমি রাজউকের ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ডিসিসিআই-এর সভাপতি আশরাফ আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ডিটিসিএ›র নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আক্তার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান পুরান ঢাকা কেন্দ্রিক ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) পরিচালক নীলিমা আক্তার বলেন, পুরান ঢাকার যানবাহন ব্যবস্থার জন্যে বিশেষায়িত পরিকল্পনার প্রয়োজন। জানিয়ে তিনি বলেন, চলমান বিআরটি প্রকল্পে খুঁড়াখুঁড়ি, সমালোচনার পরে এ প্রকল্প আর বাড়ানো হচ্ছে না।
ঢাকার যানজট নিরসনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ভূমিকা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ফুটপাথ দখলমুক্ত করলে বা পুনর্বাসন করলে আবারও জড়ো হয়ে যান হকারেরা। অনেকটা প্রবাহমান নদী থেকে আবর্জনা তুললে যেমন আবার সব পূর্ণ হয়ে যায়।
আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর এর পরে পুরান ঢাকায় অবস্থিত অবৈধ রাসায়নিক গুদামের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, পুরাতন ঢাকা আমরা আর ঝুঁকিপূর্ণ রাখতে পারি না। কিছুদিন আগে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে এবং এটা প্রতিনিয়ত ঘটছে। ইতোমধ্যে রাসায়নিক দ্রব্যাদি স্থানান্তরের জন্য যে গুদামঘর, কারখানা প্রয়োজন তা শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে শ্যামপুরে শিল্পাঞ্চলে করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত সেখানে মাত্র একজন গিয়েছেন। আমরা তাকে বাণিজ্য অনুমতি (ট্রেড লাইসেন্স) দিয়েছি। আরেকজন আবেদন করেছেন। সেটাও আমরা করে দিচ্ছি। পুরান ঢাকায় যারা রাসায়নিক ব্যবসা করছেন তাদের প্রতি আমার নিবেদন এবং কঠোর হুশিয়ারি থাকবে। আপনারা আইন অনুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে সেখানে স্থানান্তরিত হোন। না হলে ঈদের পরে আমরা চিরুনি অভিযান করব।

মেট্রোরেল
Comments (0)
Add Comment