বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বান্দরবানে হামলা ও ব্যাংক লুটকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
তিনি বলেছেন, ‘কোনও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীকে ছাড় দেওয়া হবে না। সন্ত্রাসীরা তাদের সক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করেছে মাত্র। তবে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ধূলিসাৎ করে দেবে। অস্ত্র ও পোশাকসহ তারা দেশে ঢুকবে, আর আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী বসে থাকবে, তা কাম্য নয়। এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যাবো। কোনোক্রমেই আইন ভঙ্গ করতে দেবো না তাদের। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানে আমরা সব বাহিনীর সদস্য আরও বাড়াবো এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে যা যা করা দরকার, সবই করবো।’
শনিবার (০৬ এপ্রিল) দুপুরে বান্দরবান সার্কিট হাউজে জেলার আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রুমা ও থানচিতে ব্যাংকে ডাকাতি, ব্যাংক কর্মকর্তাকে অপহরণ, অস্ত্র লুট, থানায় হামলার পর শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, আনসার প্রধান মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক, স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
সকালে হেলিকপ্টারে রুমায় যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখান থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে বান্দরবান সার্কিট হাউজে পার্বত্য জেলার আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা করেন। সভা শেষে সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেন, ‘শান্তিপ্রিয় মানুষগুলো এই এলাকায় থাকে। এখানে এরকম কোনও ঘটনা হবে আমরা চিন্তা করিনি। হঠাৎ করে কেন ঘটলো, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সন্ত্রাসীরা অর্থ সংগ্রহের জন্য এই হামলা চালিয়েছে বলে সরকার মনে করছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই এই হামলার কারণ আছে, কারা হামলা করেছে, কাদের সহযোগিতা ছিল—সবকিছু বের করা হবে। আমরা সবকিছু খতিয়ে দেখছি। সবগুলো বের করে আইনি ব্যবস্থা নেবো।’
পর পর তিন দিন কয়েকটি হামলা, ব্যাংক ডাকাতি, অপহরণ, গোলাগুলি ও অস্ত্র লুটের ঘটনার পর বান্দরবানে সশস্ত্র গোষ্ঠী কেএনএফের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যৌথ অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে। তারা তাদের মতো করে কাজ করবে। আমরা এদের উৎপত্তিস্থল খুঁজে বের করবো। সেইসঙ্গে এসব ঘটনার বিষয়ে কঠোর অবস্থানে যাবো।’
ব্যাংকের টাকা লুট ও হামলার বিষয়ে আগাম কোনও গোয়েন্দা তথ্য ছিল কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কারও কোনও গাফিলতি আছে কিনা, তা সরকার খতিয়ে দেখবে। কোন জায়গা থেকে ফেল করেছে, এটি আমরা দেখবো। আগে দেখে নিই, তারপর সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।’
এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর, বান্দরবান সেনা রিজিয়ন কমান্ডার মেহেদী হাসান, পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন, পুলিশ সুপার সৈকত শাহীনসহ বিভিন্ন অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা।
গত মঙ্গলবার রাতে এবং গত বুধবার দুপুরে রুমা ও থানচি উপজেলার কৃষি ও সোনালী ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা চালায় পাহাড়ের সন্ত্রাসী গ্রুপ কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) শতাধিক অস্ত্রধারী। তারা টাকা লুট করে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করে, একজন ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ও আনসারের ১৪টি অস্ত্র ও গুলি লুট করে নিয়ে যায়। এসব ঘটনায় কেএনএফ জড়িত বলে নিশ্চিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।