বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত হচ্ছে কক্সবাজারে। এবার ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে এ সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি বাইনোকুলার দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে সৈকতের নানা বিষয়। এ ছাড়া ছিল সিসি ক্যামেরা। সেগুলো পরিচালনার জন্য ছিল বড় বড় এলইডি মনিটর। এবার পুরো শহরটিকেও সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে চায় বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশ। এসব সিসি ক্যামেরায় যা ধরা পড়বে তা দেখা যাবে শহরের মোড়ে মোড়ে রাখা বড় এলইডি মনিটরে। ফলে শহরের অপরাধ কমে আসবে অন্যদিকে পর্যটকরা নিরাপদে ঘুরতে পারবেন।
শুধু তাই নয়, পর্যটকরা বিপদে পড়লে যাতে খুব সহজেই স্বজনদের ফোন করতে পারেন তার জন্য বিভিন্ন মোড়ে ইন্টারকম সার্ভিস এবং বসটন টেলিফোন রাখার চিন্তা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে প্রথমবারের মতো দুটি পর্যটন কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে মনিটরিং করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক এই কাজে সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশ। তবে ক্যামেরায় অপ্রীতিকর কিছু ধরা পড়েনি।
ট্যুরিস্ট পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরে দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নেয় ট্যুরিস্ট পুলিশ। এরই অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে ১২টি, পতেঙ্গা বিচে ১২টি ও কক্সবাজারে ২০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। এসব ক্যামেরা ঢাকায় বসে কন্ট্রোল রুম থেকে নিয়ন্ত্রণ করে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
এ ছাড়া কক্সবাজারের প্রতিটি বিচকে ইন্টারকম সিস্টেমের আওতায় আনা হয়েছিল। পর্যটকরা তাদের সমস্যা সরাসরি ইন্টারকমের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট পুলিশকে অবগত করতে রাখা হয়েছিল এই সুবিধা। তার ফলও তারা পেয়েছেন। এই ইন্টারকম ব্যবহার করে হাজারো পর্যটক তাদের সন্তান নিখোঁজ, নিজেরা হারিয়ে যাওয়ার খবরটি ট্যুরিস্ট পুলিশকে দিতে পেরেছেন। পাশাপাশি লাগানো হয়েছিল কক্সবাজারের প্রতিটি বিচ এলাকায় সিকিউরিটি এলার্মিং বাটন। এবার পর্যটকরা কোনো সমস্যায় পড়ামাত্র বাটনে টিপ দিয়ে তা ট্যুরিস্ট পুলিশের বক্সে আওয়াজ তৈরি করেছে। ফলে দ্রুত সময়ে সেই স্থানে পুলিশ পৌঁছে তাদের উদ্ধার করেছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি বিচে দেওয়া হচ্ছে ফ্রি মোবাইল ফোন সিস্টেম। যেখান থেকে পর্যটকরা সরাসরি টুরিস্ট পুলিশ তথা সেন্টারে হোয়াটসঅ্যাপ এবং কল করতে পারবেন। এ ছাড়া সম্প্রতি টুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ ঘোড়ার গাড়ি ও ময়ূরপঙ্খী বিচ বাইকের মাধ্যমে পর্যটকদের নিরাপত্তায় টহল ডিউটি করা হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, কক্সবাজারের ভেতরে তো অনেক ক্যামেরা আছে। যেগুলো সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান লাগিয়েছে। তবে এর বাইরেও সিসি ক্যামেরা লাগানোর কথা ভাবছে টুরিস্ট পুলিশ। এবার সি বিচে পর্যটকদের নিরাপত্তায় বেশ কাজ দিয়েছে ইন্টারকম ও বাটন টেলিফোন। সেটি কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বসানোর কথা চিন্তা করছে টুরিস্ট পুলিশ। বাটনে প্রেস করলেই পুলিশ চলে আসবে আসলে এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটা ইতিহাস।
তিনি আরও বলেন, আমরা চিন্তা করছি সামনের দিনগুলো পুলিশ কম লাগিয়ে কিভাবে পর্যটকদের সেবা দেওয়া যায়। আরও টেকনোলজি ব্যবহারের চিন্তাও চলছে। সৌদির মক্কায় কিন্তু বেশি পুলিশ থাকে না। আমরা সেই ওয়েস্টার্ন টেকনোলজির দিকে যাচ্ছি। পুলিশ পাশে থাকে কিন্তু ক্যামেরায় অপরাধ ধরামাত্র অপরাধী ধরা পড়ে যাবে। যেমন এবার আমরা কক্সবাজারে বাইনোকুলার অনেক হারানো শিশুকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। এ ছাড়া এবার কক্সবাজার সি বিচে ড্রোন ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছিল।
ট্যুরিস্ট পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা মনে করছেন, কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা আরও বাড়াতে হবে। ইন্টারকম ও ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম আরও বাড়াবেন তারা। এরপর এগুলো তারা পর্যায়ক্রমে কক্সবাজার শহরের মধ্যে নিয়ে আসবেন। তারা বড় বড় হোটেলগুলোকেও নজরে আনবেন। যাতে পুরো শহরটাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা যায়। তারা মনে করেন তাহলেই আগামীতে স্মার্ট টুরিজম হবে। না হলে অসম্ভব।
ট্যুরিস্ট পুলিশ বলছে, কক্সবাজার শহরকে কেন্দ্র করে অপরাধীরা সক্রিয়। সেখানে বিনোদনের নামে বিভিন্ন হোটেলে স্প্যা বসানো হয়েছে। সিসি ক্যামেরায় মনিটরিং শুরু হলে সেগুলো কমে আসবে। অপরাধও নির্মূল হবে বলে তারা মনে করছেন।
কক্সবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার পুরো জেলায় ক্যামেরা বসিয়ে বড় বড় এলইডি স্ক্রিনে মনিটরিং করা হয়েছে। এ ছাড়া সাদা পোশাকের গোয়েন্দা টিমের সদস্যরা কাজ করেছেন। টুরিস্ট পুলিশের ২০০ শতাধিক ফোর্স কাজ করেছেন। পুরো এলাকা একটা নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলেছিলেন তারা। পর্যটকদের নিরাপত্তায় এবার প্রথম সি বিচের বিভিন্ন জায়গায় বাটন সিস্টেম টেলিফোন ও ইন্টারকম রাখা হয়েছিল। এ ছাড়া লাখ লাখ পর্যটক যাতে সি বিচে তাদের মোবাইল চার্জিং করতে পারে সেজন্য ছিল চার্জিং পয়েন্ট। পাশাপাশি কারও মোবাইল ফোন হারালে যেন ফোন ব্যবহার করে স্বজনদের কল করতে পারেন সেজন দুটি মোবাইল ফোন রাখা হয়েছিল। জায়গায় জায়গায় তথ্যকেন্দ্র খুলেছিল কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশ।
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশ জানিয়েছে, এবার তারা যেসব ইন্টারকম ও টেলিফোন বসিয়েছিলেন তাতে হাজার হাজার মানুষের কল এসেছে। ইন্টারকমে চাপ দিলেই পুলিশ সেই জায়গায় গিয়ে হাজির হয়েছে। এবার তারা চুরি বা ছিনতাইয়ের মতো কোনো ঘটনাই ঘটতে দেননি। কোনো তৃতীয় লিঙ্গের লোকজনকে সি-বিচে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। গেল ঈদে কক্সবাজার সি-বিচ থেকে ৫৮টি মোবাইল ও ৬৯ শিশুকে উদ্ধার করেছেন তারা। পরে তাদের স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।