নিজস্ব প্রতিনিধি : পাবনার সবজি খ্যাত সদর, ঈশ্বরদী, আটঘরিয়াসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। চাষিরা বাম্পার ফলন ও দাম দুটোই পেয়েছেন। কৃষির রবিশস্য ও শীতকালীন সবজিসহ মৌসুমী ফসলে এ জেলার কৃষকেরা ঝুঁকে পড়েছেন। দেশের বিভিন্ন জেলাসহ বিদেশেও এ জেলার উৎপাদিত সবজি বাজারজাত করা হচ্ছে। বড় বড় পাইকাররা এসে ট্রাক যোগে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রান্তে।
বুধবার পাবনা সদরের মনোহরপুর, দাপুনিয়া, ঘরনাগড়া, রানীগ্রাম, চাঁদপুর, ঈশ্বরদীর আওতাপাড়া, ছলিমপুর, বাঁশেরবাদা, আটঘরিয়ার চাঁদভা, পারখিদিরপুর, খিদিরপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায় মাঠে সবজির সমারোহ। চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন সবজির পরিচর্যায়। ভোররাত থেকেই জমি থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে হরেক রকম সবজি। ভোরেই তোরা হচ্ছে হাট বাজারে নতুবা দেয়া হচ্ছে পাইকারদের হাতে।
সারে চার বিঘা জমি লিজে নিয়েছেন কৃষক ওহিদুর ইসলাম। বুদ্ধির পর থেকেই তিনি কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত। ৭০ হাজার টাকা জমি লীজের জন্য। আর ৭০ হাজার টাকা ফুলকপি আবাদে ব্যয় করেছেন। আর কিছু দিনের মধ্যেই হয়তো ফলানো সবজি তার স্বপ্ন পূরন করবে। ওহিদুর ইসলাম পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার আওতাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
পাবনা সদরের দাপুনিয়া ইউনিয়নের সাহাদিয়ারের কৃষক নায়েব প্রামানিক। ষাটের ঘর পার করেছেন কৃষি কাজ করে। শীতকালীন সবজি চাষই তার জীবনের মূল চালিকা শক্তি। শীতকালীন এই মওসুমি সবজি তাকে স্বপ্ন দেখায়। তিনিও স্বপ্ন দেখেন তার ফলানো সবজি ক’দিন বাদেই টাকায় পরিণত হবে। এক বিঘা জমিতে ফুলকপি আবাদে সাড়ে ৬ হাজার চারাগাছের প্রয়োজন। তার দাবী, সবজি বাজার নামতে শুরু করেছে। সপ্তাহ খানেক সময়ের ব্যবধানে সবজিগুলো তুলতে পারলেই অন্তত লাভের মুখ দেখবেন, নতুবা তাকে আর্থিক ক্ষতির সন্মুখিন হতে হবে।
সদরের মনোহরপুর গ্রামের বাসিন্দা বিদেশ ফেরত সাইফুল ইসলাম। দেশে এসে কৃষি কাজে মনোযোগী হয়েছেন। মওসুমি সবজি ও সাথী ফসল ফলান তিনি। এবারও বেশ কয়েকবিঘা জমি লীজ নিয়ে শীতকালীন নানা জাতের সবজি চাষ করছেন। ইতোমধ্যে বেগুন, শসা, মুলা, ফুলকপি ও বিভিন্ন ধরনের শাকের আবাদ করেছেন। ভালো দামও পেয়েছেন। সবজির এ বাজারই যেন তাকে স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছে।
সবজি চাষিরা জানান, মানুষের মধ্যে এক ধরণের অপপ্রচার রয়েছে সবজিতে বিষ প্রয়োগ। আসলে সবজিতে যে বিষ বা কীটনাশক দেয়া হয়, মূলত সেটা সবজির জন্য পুষ্টি বা ভিটামিন। সবজিকে পোকা মাকড়ের হাত থেকে রক্ষা এবং পুষ্ট করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা বলেন, সবজি চাষে সব সময় আমরা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শক্রমেই বিষ বা কীটনাশক স্প্রে করি।
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি সূত্রে জানা যায়, এবারে জেলায় শীতকালিন সবজির মধ্যে লালশাক, মুলা, গাজর, করলা-উস্তে, ঢেড়স, পালংশাক, মিষ্টি কুমড়ো, টমেটো, পটল, গীমা কলমী, সীম, লাউ, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শসা, পুঁইশাক, বেগুন, মটরশাক, শটর শুটি, বরবটি, ডাটা, ধুনেরপাতা, ধুন্দল, চালকুমড়া, ওলকপি, খিরা, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, শালগম, কাকরোল, কাঁচা কলা ও পেঁপের আবাদ হয়েছে। এবারে আবাদের লক্ষমাত্রা ছিল ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। আর আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৪৫৯ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৬৫০ মেট্টিক টন।
প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক মোঃ আব্দুল কাদের বলেন, এ মওসুমে শীতকালীন সব ধরণের সবজির দাম বেশি পেয়েছে সবজি চাষিরা। উৎপাদন খরচ বেশি এবং বিদেশে এই সবজি রপ্তানীর কারনে বাজারটা বেশ ভালোই পেয়েছেন কৃষক। তিনি বলেন, কৃষকদের বেশি বেশি সবজি ও ফসল উৎপাদনে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সেই সাথে ফলনের গুনগত মান ও উৎপাদনবৃদ্ধির লক্ষে সবসময় কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে অবস্থান করে কৃষকদের যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন।