বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বান্দরবানের রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলার মধ্যবর্তী দুর্গম পাহাড়ে গতকাল রবিবার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরনে কেএনএফের সামরিক শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) পোশাক ছিল। তাই ধারণা করা হচ্ছে, নিহতরা কেএনএফের সদস্য ছিলেন। ভোর থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত কয়েক দফা এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছে।
বান্দরবান জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী সন্ধ্যার পর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গোলাগুলির ঘটনায় তিনজনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ পড়ে থাকার খবর পেয়ে রোয়াংছড়ি থানার পুলিশ ওই দুর্গম এলাকা থেকে বিকেলে মরদেহগুলো উদ্ধার করেছে। সন্ধ্যায় মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতাল মর্গে নিয়ে আসা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রগুলো বলেছে, রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলার মধ্যবর্তী রনিনপাড়াসংলগ্ন দেবাছড়িপাড়ার পাহাড়ে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক ঘণ্টা বন্দুকযুদ্ধের পর সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
পরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে তিনটি গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেন।
এদিকে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) মিডিয়া উইং থেকে গতকাল সন্ধ্যায় পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রবিবারের ঘটনায় নিহত এডি থাং বম (২৪), রুয়ালসাংনুয়াম বম (২৩) ও রুয়ালমিনলিয়ান বম (২০) সাধারণ নাগরিক। তাঁরা কেউ কেএনএফ বা কেএনএর সদস্য নন।
অপতৎপরতার নিন্দা
কেএনএফের নেতৃত্বে গত ২ এপ্রিল রুমায় এবং ৩ এপ্রিল থানচিতে ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র ও টাকা লুটসহ সাম্প্রতিক সময়ে কেএনএফ ও কেএনএর অপতৎপরতার নিন্দা জানিয়েছে সাধারণ বম জনগণ।
গতকাল বিকেলে বান্দরবান শহরের উজানিপাড়ায় এক মানববন্ধনে এ নিন্দা জানানো হয়।
মানববন্ধনে বিতরণ করা এক প্রচারপত্রে অভিযোগ করা হয়, কেএনএফ ও কেএনএর অপতৎপরতার কারণে রাষ্ট্র গৃহীত ব্যবস্থার ফলে বম জনগোষ্ঠীর সাধারণ মানুষ প্রাণভয়ে জঙ্গলে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে শান্ত এবং রাষ্ট্রের অনুগত জনগোষ্ঠী হওয়া সত্ত্বেও কেএনএফের কারণে বম জনজাতিকে ডাকাত, সন্ত্রাসী ও লুটেরা কলঙ্ক মাথায় নিতে হয়েছে।
প্রচারপত্রে বলা হয়, স্বল্পসংখ্যক মানুষ জাতীয়, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন হলেও সাধারণ বম জনগোষ্ঠী এসব বিষয়ে অবগত না থাকায় কেএনএফ ও কেএনএর রাষ্ট্রবিরোধী অপতৎপরতা প্রথমে বুঝতে পারেনি। দিন দিন তাদের অপতৎপরতার ফলে বম জনজাতিকে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।
প্রচারপত্রে বলা হয়, ‘কেএনএফ’ ও ‘কেএনএ’র রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতার দায় সাধারণ বম জনগণ নিতে পারে না। রাষ্ট্রবিরোধী কাজে যারা জড়িত তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।
প্রচারপত্রে কেএনএফবিরোধী অভিযান চলমান থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীর পণ্যসামগ্রী ক্রয়ে বম জনজাতির ওপর যেসব বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করার দাবিও জানানো হয়।
এর আগে বম সোশ্যাল কাউন্সিল ও অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে একটি ভিডিও বার্তায় কেএনএফ ও কেএনএর সদস্যদের লুণ্ঠিত ১৪টি সরকারি অস্ত্র ফেরতসহ সন্ত্রাসের পথ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য দুই দফায় আহবান জানানো হয়।