বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র – জাতীয় গ্রিডে যুক্ত ৪ বিলিয়নের বেশি ইউনিট, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা স্থানীয়দের
পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ বজায় রেখে জাতীয় গ্রিডে ৪ বিলিয়নের বেশি ইউনিট বিদ্যুৎ যুক্ত করে অর্থনীতিতে নীরব ভূমিকা রাখছে মৈত্রী সুপার থারমাল পাওয়ার প্লান্ট (রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র)।
একদিকে আর্থসামাজিক উন্নয়ন, অন্যদিকে প্রকল্প এলাকায় পরিবেশ সুরক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে এরই মধ্যে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দেশের অন্য কেন্দ্রগুলো থেকে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ ছাড়া স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির অর্থনৈতিক ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ভারতের রাষ্ট্রমালিকানাধীন এনটিপিসির সঙ্গে যৌথভাবে রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাস্তবায়ন করে। কেন্দ্রটি পরিচালনা করছে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলছেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। দ্বিতীয় ইউনিটের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় চলতি বছরের মার্চে। বর্তমানে কেন্দ্রটির দুটি ইউনিট থেকে গড়ে প্রায় ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন নয়, স্থানীয়দের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মৈত্রী সুপার থারমাল প্লান্ট। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অর্থনৈতিক অবদানের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, জাতীয় গ্রিডে প্রতিনিয়ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে শিল্পায়নে অবদান রাখছে রামপালের মৈত্রী সুপার থারমাল পাওয়ার প্লান্ট। আমাদের জাতীয় গ্রিডে যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যুৎ যোগ করছে এবং স্থানীয় অর্থনীতিও চাঙা করছে। স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে।
নারী ও সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট কার্জক্রমও বেশ ভালো হয়েছে। বিআইএফপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সঙ্গীতা কৌশিক বলেন, বাংলাদেশের প্রসারমান অর্থনীতিতে শিল্পায়ন এগিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু করা হয়। সেখানে কাজ করাটা আমার জন্য গর্বের। উৎপাদনের শুরু থেকে মৈত্রী সুপার থারমাল পাওয়ার প্লান্ট বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে ৪ বিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ যোগ করেছে। এনটিপিসির সাবেক নির্বাহী পরিচালক সঙ্গীতা কৌশিক আরও বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরযোগ্য করে তোলা। সম্প্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের দিক দিয়ে কেন্দ্রটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন শুল্কে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। আমরা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটই এখন সক্রিয়। তিনি আরও বলেন, একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদ্যুৎ খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মৈত্রী সুপার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এখানে আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। গত বছর বাংলাদেশে বিদ্যুতের বার্ষিক চাহিদা ছিল ১৫ হাজার মেগাওয়াট। গ্রীষ্মের মৌসুমে এ চাহিদা পৌঁছায় সর্বোচ্চ ১৭ হাজার মেগাওয়াটে। ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদার অর্থ হচ্ছে দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) শান্তনু কুমার মিশ্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ প্রকল্পে স্থানীয় প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই বাংলাদেশি জনবল ও বিদ্যুৎ প্রকৌশল খাতে মানুষের দক্ষতা বৃদ্ধি পাক। এর ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থানীয় জনবল দিয়ে সাশ্রয়ে চালানো সম্ভব হবে। এর ফলে বিদেশনির্ভরতা কমবে। আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৬০ জন প্রকৌশলীকে নিয়োগ দিয়েছি।
এ প্রকৌশলীরা ভারতেও প্রশিক্ষণ পেয়েছেন এবং এখন খুব ভালো কাজ করছেন। দেড় থেকে ২ হাজার শ্রমিক আমাদের এ কেন্দ্রে কাজ করছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজ করতে গিয়ে এই শ্রমিকদের দক্ষতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।’ প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ‘এ প্রকল্পটি স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে; যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদিত বিদ্যুতের উৎস দেশ খোদ বাংলাদেশ। এটিও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এখন পর্যন্ত এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মোট ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে।’