বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : চলতি বছরের ডিসেম্বরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। ইতোমধ্যে এই সেতুর মূল কাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার সেতুর সুপার স্ট্রাকচার। চলছে অ্যাডজাস্টমেন্ট, দুদিকের স্টেশন আধুনিকায়ন, স্লিপারবিহীন রেলপথ স্থাপনের কাজ।
গতকাল শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, নদীর ভেতরে সেতুর মূল স্ট্রাকচারের
কাজ শেষ হয়েছে। আনুষঙ্গিক কাজ চলছে।
আশা করছি, ডিসেম্বরেই সেতুটি উদ্বোধন করা হবে এবং ট্রেন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া সম্ভব হবে।
প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ২০২১ সালের মার্চ মাসে সেতুর ৩০০ মিটার উজানে পাইলিংয়ের মাধ্যমে নির্মাণকাজ শুরু হয়। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। ডব্লিউডি-১ ও ডব্লিউডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে জাপানি পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে জাপানি আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওবাইসি, টোয়া করপোরেশন ও জেইসি (ওটিজে) জয়েন্ট ভেঞ্চার। ডব্লিউডি-২ প্যাকেজটি বাস্তবায়নে রয়েছে জাপানের আইএইচআই ও এসএমসিসি জয়েন্ট ভেঞ্চার। এ ছাড়া সেতুর উভয় প্রান্তের দুই স্টেশনে সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনে ডব্লিউডি-৩ নামে অন্য একটি প্যাকেজের কাজও চলছে।
সেতুটি নির্মাণে জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের কর্মীরা নিয়োজিত আছেন। ইতোমধ্যে ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে আনা মরিচারোধী স্টিলের স্প্যান সেতুর ওপর বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু রেলসেতুতে দেশে প্রথমবারের মতো ব্যবহার হচ্ছে জাপানি আধুনিক ডাইরেক্ট রেল ফ্যাসেনার প্রযুক্তি। স্প্যানের ওপর সরাসরি বসানো হচ্ছে রেললাইন। এতে সেতুর ওপর রেললাইনের স্থায়িত্ব বাড়ার পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কম হবে। এ সেতুতে অন্য প্রান্তের ট্রেন পারাপারের জন্য রেল থামিয়ে বসে থাকতে হবে না।
সেতুটি ঢাকার সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের রেল যোগাযোগে নতুন দিনের সূচনা করবে। সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। কমে যাবে পরিবহন খরচও। সেইসঙ্গে মহাসড়কের ওপর চাপও অনেকটা কমে আসবে। উত্তরবঙ্গ থেকে বিভিন্ন পণ্য সহজেই ঢাকাসহ সারা দেশে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্টাল কনসালট্যান্ট গ্লোবাল লিমিটেডের সাব-স্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ার রবিউল আলম বলেন, সেতুর ৫০টি পিলারের মধ্যে সবকটি বসানো হয়েছে। প্রতি দুটি পিলারের মাঝখানে একটি করে মোট ৪৯টি স্প্যান বসানো শেষ হয়েছে। সেতুর ওপর রেললাইন স্থাপন শেষ হয়েছে আড়াই কিলোমিটারেরও বেশি।
প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হচ্ছে। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। সমান্তরাল ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকের এ সেতুটির নির্মাণকাজ ডিসেম্বরেই শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে সেতুর ৮৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন পাইপলাইন, স্লিপারবিহীন রেলপথ স্থাপন, ফ্লাইওভার, ফুটওভার, স্টেশন বিল্ডিং, লিফট, লিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও সিগন্যালিং স্থাপনের কাজ চলছে। সুপার স্ট্রাকচারগুলোর মেইন মেম্বারগুলো লাগানো হয়েছে। সেই সঙ্গে কার্ভ, মেটারল কর্টসহ ছোটখাটো মেম্বারগুলোও লাগানো হয়েছে। এখন শুধু অ্যাডজাস্টমেন্ট বাকি রয়েছে। অ্যালাইনমেন্ট ঠিক করা হচ্ছে, লেভেল ঠিক করা হচ্ছে। বিভিন্ন ড্রেনের কাজ, কালভার্টগুলো শেষ হয়ে গেছে।
১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতিসীমা। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে শিডিউল বিপর্যয়। বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।