১২ সমঝোতা সইয়ের সম্ভাবনা

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের সফরে জুলাই মাসে বেইজিং যাচ্ছেন। জানা গেছে, ৮ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত চলবে এই সফর। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজায় ইসরায়েলি পদক্ষেপের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অশান্তি ও ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হচ্ছে এ সফরকে। এতে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্প, চীনা বিনিয়োগ, রোহিঙ্গা সংকট এবং মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধ অগ্রাধিকার পাবে। দুই দেশের মধ্যে বহুমুখী সম্পর্ক জোরদার করাও থাকবে আলোচনায়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে ১২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের পানির তথ্য সরবরাহসংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে। সমঝোতা অনুযায়ী, বাংলাদেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণে বর্ষা মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বাভাস জানাবে চীন। কারণ ব্রহ্মপুত্র নদের অর্ধেক অংশ রয়েছে চীনে। বাকি অর্ধেক বাংলাদেশ ও ভারতে। ফলে উজানের পানিতে দেশে বন্যা হওয়ার শঙ্কা থাকে। এ জন্য চীনের পূর্বাভাস পেয়ে বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া যাবে। এ ছাড়া চীনের কাছ থেকে বাণিজ্য সহায়তা ও বাজেট সহায়তার আওতায় ঋণ, বিনিয়োগ সুরক্ষা, ডিজিটাল অর্থনীতি, ব্লু ইকোনমি, মুক্তবাণিজ্য চুক্তির সমীক্ষার ঘোষণা ও একাধিক সেতু নির্মাণ ও সংস্কার ইত্যাদি প্রসঙ্গ রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের দক্ষিণবঙ্গের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত সমন্বিত প্রকল্পে

চীনের সহায়তাও চাওয়া হবে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে যে সামষ্টিক অর্থনৈতিক চাপ রয়েছে, তা থেকে উত্তরণে চীনের কাছ থেকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক প্যাকেজ চাইতে পারে বাংলাদেশ। এবারের সফরের বিশেষ দিকটি হবে আর্থিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের জন্য চীনের ৭০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৪০ কোটি ইউয়ানের বেশি ঋণ। এর মধ্যে বাণিজ্য সহায়তার আওতায় ৫০০ কোটি ডলার ও বাজেট সহায়তার আওতায় ২০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ স্থানীয় মুদ্রায় বাংলাদেশকে ঋণ দেবে চীন। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে যেভাবে টাকা-রুপিতে লেনদেনের সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেই ধারাবাহিকতায় টাকা-ইউয়ানে লেনদেনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। এ ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি চলছে।

প্রতিবেশী মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ এবং বাংলাদেশে ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর আগমন কক্সবাজার এলাকার সামাজিক কাঠামোকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। ঢাকা এই সংকট সমাধানে বেইজিংয়ের সক্রিয় উদ্যোগের জন্য অনুরোধ করবে। বর্তমানে চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ চীনে ৬১০.১৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, চীন থেকে মোট ১৭৮২৬.৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, যার ফলে ১৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে। এই সংকট সমাধানে বেইজিংয়ের সক্রিয় উদ্যোগের জন্য অনুরোধ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চীনের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার সমাধান করতে চীনা উদ্যোক্তাদের প্রতিশ্রুতিশীল খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফর করেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ঐতিহাসিক ওই সফরের সময় ২৭টি প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এর মধ্যে ১৫টি প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে, ৬টির কাজ চলমান আছে এবং বাকি ৬টির বদলে নতুন প্রকল্প করারও চিন্তা করা হচ্ছে। জানা গেছে, এ মাসের শুরুতে বেইজিংয়ে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ কয়েকটি প্রকল্পের কথা তুলেছে, যা বিবেচনায় নেওয়া যায় বলে উল্লেখ করেছে চীন। প্রকল্প যাচাই-বাছাই শেষ করতে অনেক সময়ক্ষেপণ হয়, ফলে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা নষ্ট হয় বলেও চীনের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চার দিনের সফরের দ্বিতীয় দিন ৯ জুলাই দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও লি ছিয়াংয়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। পর দিন ১০ জুলাই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক হবে শেখ হাসিনার। একই দিন চীনের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস অব চায়নার প্রেসিডেন্ট ঝাও লেজির সঙ্গেও সাক্ষাৎ হবে তার। এ ছাড়া চীনের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠকের আয়োজন থাকবে সফরে।

প্রধানমন্ত্রী
Comments (0)
Add Comment