বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আরও আধুনিক হচ্ছে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিগত আট দশকে টার্মিনাল ভবন, কার্গো কমপ্লেক্স, এয়ারক্রাফট পার্কিংব্যবস্থা, অত্যাধুনিক রাডার ও বডি স্ক্যানারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতিতে সাবলম্বী হয়েছে বিমানবন্দরটি। পেয়েছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বীকৃতি। তবে এখানেই থেমে নেই অগ্রগতি। নতুন দুই প্রকল্প- ‘রানওয়ে ও টেক্সিওয়ে শক্তি বৃদ্ধিকরণ’ এবং ‘বোর্ডিং ব্রিজ ও কানেক্টিং করিডোর নির্মাণ’ কাজও প্রায় শেষের দিকে। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে বিমানবন্দরের সক্ষমতা আরো বাড়বে এবং বিমানবন্দরটি ক্যাটাগরি-২-এ উন্নিত হবে। প্রকল্প দুটি সম্পন্ন হলে খারাপ আবহাওয়ায় অবতরণ-উড্ডয়নের সক্ষমতা বাড়বে। ফলে যাত্রী ও বিমান সংস্থাগুলোর ভোগান্তি কমার পাশাপাশি অতিরিক্ত সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে।
শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে বর্তমানে পাঁচটি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালু রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচল বাড়ানোর পরিধি নির্ভর করে যাত্রীর চাহিদার ওপর। তবে নতুন দুই প্রকল্পের ফলে বিমান চলাচল আরো সুবিন্যস্ত ও নিরাপদ হবে বলে মনে করছেন তারা।
জানা গেছে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ৪৭২ কোটি ৭৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আধুনিকায়নে দুই প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে। যদিও দেশে ডলারের মূল্যবৃদ্ধিজনিত কারণে অতিরিক্ত আরও ৫৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে। বর্তমানে শুধু রানওয়ের লাইটিংব্যবস্থা উন্নীতকরণের কাজ বাকি রয়েছে। এছাড়া বাকি সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নতুন দুই প্রকল্পের মধ্যে রানওয়ে ও টেক্সিওয়ের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর ফলে বিমানবন্দরের রানওয়ে লাইটিং সিস্টেমের উন্নয়ন ও আরো কম ভিজিবিলিটিতে বিমান অবতরণ সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অপরদিকে, ২০০১ সালে বিমানবন্দরটিতে দুটি বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন করা হয়েছিল। এখন সেখানে আরো একটি নতুন বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন করা হচ্ছে। প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন হলে বিমানবন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়বে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার ফরহাদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে সরকারি ও বেসরকারি বিমান চলাচলকে আরো সুবিন্যস্ত ও নিরাপদ করতে কাজ চলছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে বিমানবন্দর আরো বেশি শক্তিশালী হবে। রানওয়ে ও টেক্সিওয়ের প্রকল্পের কাজ ৮০ শতাংশই শেষ। এখন শুধু রানওয়ের লাইটিং সিস্টেমের কাজ বাকি। এটি শেষ হওয়ার মধ্যদিয়ে বিমানবন্দরটি ক্যাটাগরি-২-এ উন্নিত হবে। তিনি বলেন, খারাপ কিংবা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় রানওয়েতে অবতরণ বা উড্ডয়নের ক্ষেত্রে ‘ভিজিবিলিটি’ কমে আসে। তখন পাইলটরা রানওয়ে পরিষ্কার দেখতে পান না। এমন পরিস্থিতিতে বিমানের অবতরণ-উড্ডয়ন বাতিল করতে হয়। নিরাপত্তাজনিত কারণে বিকল্প বিমানবন্দর এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশের বিমানবন্দরেও জরুরি অবতরণ করতে হয়। নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এ সমস্যা প্রায় কেটে যাবে।
বিমানবন্দরটির বিদ্যমান রানওয়ে ও টেক্সিওয়ে শক্তিবৃদ্ধিকরণ নিয়ে গত ১৩ জুন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন। সভায় প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধিসহ প্রকল্প ব্যয় ৫৪ কোটি ৯১ লাখ ৮ হাজার ৮৮৯ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়।
সভা সূত্রে জানা গেছে, আলোচ্য প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল। এর মধ্যে রানওয়ের শোল্ডার ও ওভার রানওয়েসহ টেক্সিওয়ের চূড়ান্ত লেয়ারের পেভমেন্ট কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রানওয়ে সাইড স্ট্রিপ, গ্রেডিং ও ড্রেনেজ কাজ শেষ হয়েছে। তবে এজিএল সিস্টেম ক্যাটাগরি-২ এর কাজসহ প্রস্তাবিত সংশোধিত ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ও এ সংক্রান্ত ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনসাপেক্ষে আর্থিক কার্যাদি শেষ করতে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ৪৭২ কোটি ৭৫ লাখ ৬৮ হাজার ৩২০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও দেশে ডলারের মূল্যবৃদ্ধিজনিত কারণে ব্যয় আরও বেড়েছে। বেবিচকের হিসাবে মোট ৫৪ কোটি ৯১ লাখ ৮ হাজার ৮৮৯ টাকা অতিরিক্ত প্রয়োজন।