নিজস্ব প্রতিনিধি : বাংলাদেশে মানুষের নিহত ও আহত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ রোডক্র্যাশ; যা প্রকারান্তরে অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যখাতে বিশাল চাপ সৃষ্টি করছে।
বিআরটিএর তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছর দেশে গড়ে প্রায় ৫,০০০ জন মানুষ মারা যায় ও ১০ হাজারের বেশী বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয় এবং পঙ্গুত্ব বরণ করে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এই সংখ্যা কয়েকগুণ বেশী (আনুমানিক ৩১,৫৭৮ জন) এবং এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। সড়কে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু কমাতে সেফ সিস্টেম এপ্রোচের আলোকে নতুন সমন্বিত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন বক্তারা।
আজ রোববার (২৭ অক্টোবর ২০২৪) বিকালে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ডিআইইউ-সানপা-আইওএম ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স ২০২৪ এ ‘‘রোড সেফটি এন্ড সাসটেইনবেল ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম: মেইনস্ট্রেমিং এ ডেভেলপমেন্ট এজেন্ডা ইন পাবলিক পলিসিস’’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) এর ইন-কান্ট্রি কোঅরডিনেটর ড. শরিফুল আলমের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্লোবাল রোড সেফটি পার্টনারশিপ, আইএফআরসি’র ম্যানেজার গ্র্যান্টস তাইফুর রহমান। তিনি বলেন, রোডক্র্যাশ প্রতিরোধযোগ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী বিশ্বে প্রতিবছর ১১ লক্ষ ৯০ হাজার মানুষ এতে প্রাণ হারায় এবং ৫ কোটি মানুষ বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয়। উন্নত দেশগুলো জাতিসংঘ প্রণীত সেফ সিস্টেম এপ্রোচ অনুসরণ করে সড়কে হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে এনেছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে আইনের ঘাটতি থাকায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগে কর্তৃপক্ষকে বেগ পেতে হচ্ছে। যা দিন দিন রোডক্র্যাশে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে।
সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইন্সটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী, নিরাপদ সড়ক চাই-নিসচা’র চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. শাফিউল ইসলাম, স্টেপ টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের হেলথ এন্ড ওয়াস সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি’র সহযোগী অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান।
সেমিনারে আলোচকগণ বর্তমান সড়ক পরিবহন আইনের কিছু ঘাটতি উল্লেখ করে বলেন, রোডক্র্যাশ পরবর্তী ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। একই সাথে রোডক্র্যাশ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো পদ্ধতিও নেই। তারা আরও বলেন, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা একটি মন্ত্রণালয় কিংবা একটি দপ্তরের একার কাজ নয়। এতে অনেকগুলো মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তরের সক্রিয় ও সমন্বিত অংশগ্রহণ প্রয়োজন; যা নিশ্চিত করার জন্য আইনী কাঠামো দ্বারা স্বীকৃত একটি লীড এজেন্সী নির্ধারণ করা জরুরি।
পরিবর্তীত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার নানা ক্ষেত্রে সংস্কার শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সড়কে হতাহতের সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যে সড়ক নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় সংস্কার আনা প্রয়োজন বলে বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।
বক্তারা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে মরক্কো’র মারাকাশে অনুষ্ঠিতব্য “4th Global Minitrial Conference on Road Safety’’ এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানান। পাশাপাশি এ বিষয়ে রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ-এর পক্ষ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।