ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি: পাবনার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত চিনিকলে আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার (০২ ডিসেম্বর) রাতে চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফ উদ্দীনকে (এমডি) চিঠিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন (বিএসএফআইসি)।
এতে সংকটে পড়তে যাচ্ছেন আখ চাষিসহ চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীরা। সম্প্রতি পাবনা চিনিকলের লোকসানের বিষয়টি জানিয়ে বিএসএফআইসি’র পক্ষ থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এরপর বুধবার চলতি মৌসুমে আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিতের চিঠি পায় মিল কর্তৃপক্ষ। এটি ছাড়াও দেশের আরও কয়েকটি চিনিকলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বিএসএফআইসি’র সিনিয়র সহকারী সচিব আফরোজা বেগম পারুল স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন চিনিকলের লোকসান কমিয়ে আনার লক্ষ্যে চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১৫টি চিনিকলের পরিবর্তে ৯টি চিনিকলে আখ মাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং ৬টি চিনিকলে উৎপাদিত আখ নিকটস্থ চিনিকলে সমন্বয়পূর্বক মাড়াই না করার বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।’
পাবনা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাইফ উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, উপরের নির্দেশে পাবনা চিলিকলে চলতি মাড়াই মৌসুমে আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে চিঠি পেয়েছি। আখ চাষিদের পাওনা ও শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ কার্যক্রম চলমান থাকবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চিঠিতে কোন কিছু উল্লেখ না থাকায় আপাতত কিছু বলা যাচ্ছে না।’
এদিকে, পাবনা চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধের ঘোষণায় সকাল থেকে দিনভর কারখানা এলাকায় আখ চাষি শ্রমিক-কর্মচারীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। তারা অবিলম্বে চিনিকল চালু রাখা, আখের বিল, শ্রমিক-কর্মচারীদের সকল বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবি জানান।
একইসঙ্গে আখ মাড়াই বন্ধের প্রতিবাদে বুধবার দুপুর পর্যন্ত কারখানার শ্রমিক-কর্মচারী ও আখ চাষিরা কয়েক দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেন। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কারখানা এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। একপর্যায়ে মহাসড়ক অবরোধ করতে গেলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়। পুলিশের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ ভাবে কর্মসূচি পালনের জন্য অনুরোধ জানালে বিক্ষোভকারীরা সেখান থেকে ফিরে কারখানার প্রধান গেটের সামনে অবস্থান নেয় ও পথসভা করে।
পথসভায় বক্তব্য রাখেন, শ্রমিক লীগের আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন, পাবনা চিনিকল শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি সাজেদুল ইসলাম শাহিন, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান উজ্জল সরদার, শ্রমিক নেতা জাহিদুল ইসলাম জাহিদ প্রমূখ।
এতে সভাপতিত্ব করেন আখ চাষি ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শাজাহান আলী ওরফে পেঁপে বাদশা।
১৯৯২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া মৌজায় ৬০ একর জমির ওপর পাবনা চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে আখ মাড়াই মৌসুমে কারখানায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়। কারখানাটি বাণিজ্যিক ভাবে চিনি উৎপাদন শুরু করে ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে। চালুর পর থেকেই কারখানাটি উৎপাদন ঘাটতি ও লোকসানের কবলে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আখের স্বল্পতা, আখ থেকে চিনি আহরণের হার কম, মাথাভারী প্রশাসন, সুদসহ ঋণের কিস্তি পরিশোধ, উৎপাদিত চিনি অবিক্রীত থাকাসহ নানা সংকটে পাবনা চিনিকলে ক্রমাগত লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৬৭ কোটি টাকা। এছাড়া আখ চাষিদের পাওনা রয়েছে ৬৭ লাখ টাকা। বর্তমানে এই চিনিকলে ৬৮৭ জন শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা রয়েছেন।