রিমন পালিত:বান্দরবান প্রতিনিধি : বান্দরবানের আরেক জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থান হলো দেবতাখুম। যেটাকে ভ্রমণ পিপাসু অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের তীর্থস্থান বলা হয়। বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার শীলবাঁধা পাড়ায় এই দেবতাখুমের অবস্থান। যে খুমের গভীরতা রয়েছে ৫০-৭০ ফিট।
নেটওয়ার্ক এর বাইরে গিয়ে বড় বড় দুই পাহাড়ের মাঝখানে ভিন্ন এক পরিবেশ পাওয়া যায় এই দেবতা খুমে। যেখানে গেলে মিলবে ট্রেকিং, এডভেঞ্চার, রিস্ক, ভেলার কায়াকিং ও শব্দ হিসাবে নিজের প্রতিধ্বনি । কিন্তু পর্যটক ভ্রমণে দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞায় আজ বিলীন হতে বসেছে প্রকৃতির এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য মন্ডিত জায়গা দেবতা খুম । যার প্রধান কারণ বিভিন্ন রাজনৈতিক অস্থিরতা ও পর্যটক নিষেধাজ্ঞা ।
বিশেষ করে বান্দরবানের পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান পরিচালনা ও পর্যটকদের নিরপাত্তার কথা বিবেচনা করে দেবতাখুমে পর্যটকদের যাওয়া নিষেধ ছিল।
বর্তমানে পর্যটক সহ স্থানীয় এলাকাবাসী সকলের চাওয়া অতি শীঘ্রই যাতে পর্যটক নিষেধাজ্ঞা পরিহার করে ভ্রমন পিয়াসু পর্যটকদের তীর্থস্থান এই দেবতা খুম খুলে দেওয়া হয় । যাতে করে বান্দরবানের অন্যান্য পর্যটন গুলোর পাশাপাশি আবারো পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠতে পারে এই দেবতা খুম।
ভ্রমণপিপাসুরা প্রায়ই ছুটে যায় বান্দরবানের এই খুমে প্রকৃতিকে উপভোগ করতে। এই খুমের ট্রেইল যেমন সুন্দর তেমনি ভয়ঙ্করও বটে। বিশাল দুটি পাহাড়ের মধ্য দিয়ে চলে গেছে পথ, পথটি পায়ে হেঁটে ও ভেলায় করে পাড়ি দিতে হয়। যারা প্রকৃতিকে পছন্দ করে, প্রকৃতিকে খুব কাছে থেকে উপভোগ করতে চায় তাদের জন্য দেবতাখুম। কিন্তু দীর্ঘদিন বন্ধের কারণে এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে পুরনো বাঁশের ভেলাগুলো ও খুমের পাশে পড়ে আছে নষ্ট হয়ে যাওয়া নৌকা ও বোর্ড। যেসব নৌকা ও ভেলা গুলোতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকরা ঘুরে বেড়াতো। মানুষের আনাগোনা না থাকাতে পাতার স্তুপ জমে আছে স্বচ্ছ পানির উপরে । দেখে মনে হচ্ছে প্রকৃতির এই মায়াময় দেবতা খুম স্তব্ধ হয়ে আছে। যার খবর কেউ নেইনি দীর্ঘ অনেকটা দিন ধরে।
রোয়াংছড়ি ৩ নং আলীক্ষং ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ তঞ্চঙ্গ্যা জানান , দীর্ঘ দুই বছর ধরে এই দেবতা খুম বন্ধ রয়েছে যার কারণে এখানকার টুরিস্ট গাইড সহ যারা হোটেল রেস্টুরেন্টের সাথে জড়িত ছিল সবাই বর্তমানে বেকার মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাই সকল সার্বিক দিক বিবেচনা করে এই দেবতা খুম দিলে আমরা সরকারের নিকট কৃতজ্ঞ থাকব ।
রোয়াংছড়ি ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের এর সভাপতি পলাশ তঞ্চঙ্গ্যা জানান, দেবতা খুব বন্ধ থাকার কারণে ট্যুর গাইডরা খুব কষ্টে আছে । যদি এটা খুলে দেওয়া হয় তাহলে সব গাইডরা আগের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে। তাই এটা খুলে দেওয়ার আহবান জানাচ্ছি।
দেবতা খুম ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি নুক্যমং মারমা জানান, দেবতা খুম বন্ধ থাকার কারণে যারা দেবতা খুমের সাথে জড়িত আছে তারা বর্তমানে অচল অবস্থায় আছে যদি এটা খুলে দেওয়া হয় তাহলে সবাই আগের মতো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে এখান থেকে জীবন ধারণ করতে পারবে।
দেবতা খুমের ট্যুর গাইড জিসান মারমা চিংনু জানান, একজন ট্যুর গাইড হিসেবে দেবতা খুম বন্ধ থাকার কারণে আমি আমার সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এই দেবতা খুমটা খুব শীঘ্রই খুলে দিলে আমরা যারা সাধারণ মানুষ আছি খুব উপকৃত হব।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক, শিল্পী আক্তার জানান, আমরা এর আগে দেবতা কম ভ্রমণ করেছিলাম। এবারও ইচ্ছে ছিল বান্দরবান যেহেতু এসেছি দেবতা কম ভ্রমণ করব। কিন্তু দুঃখের বিষয় আসার পর জানতে পারলাম দেবতা খুম বন্ধ রয়েছে। তাই ঘুরতে পারলাম না। এজন্য প্রশাসনের কাছে এটা খুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। যাতে আমাদের মতো দূর-দূরান্ত থেকে ঘুরতে আসা পর্যটকরা এই দেবতা খুম ভ্রমণ করতে পারে।
টুরিষ্ট পুলিশ বান্দরবান রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ জানান, বান্দরবানের দেবতা খুম পর্যটন স্পটটি যাতে খুব শীঘ্রই যাতে খুলে দেওয়া হয় সেজন্য আমরা সমন্বিত উদ্যোগ নিচ্ছি । এখানে জেলা প্রশাসক ,সেনাবাহিনী , টুরিস্ট পুলিশ, জেলা পুলিশ সবাই আমরা কাজ করছি । এখানে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই স্বল্প সময়ের মধ্যে যাতে পর্যটকরা আসতে পারে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই আলোকে আমরা টুরিস্ট পুলিশ আছি পর্যটকদের সাথে । আপনারা বান্দরবান আসুন ঘুরে যান টুরিস্ট পুলিশ সর্বদা আপনাদের নিরাপত্তা ও সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবে ।
উল্লেখ্য যে , ২০২৩ সালের ১৪ জুলাই জেলা প্রশাসন এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার দেবতাখুম পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেছিল। পরবর্তীতে ২২ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে প্রত্যাহার করা হলেও আবার পুনরায় নিষেধাজ্ঞার কারণে বন্ধ রয়েছে এ দেবতা খুম। তাই সকল পর্যটক সহ স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি অতি দ্রুত যাতে এ পর্যটন কেন্দ্র খুলে দিয়ে প্রকৃতি প্রেমিকদের যাতে এই দেবতা খুম ভ্রমণের সুযোগ করে দেয়া হয়।