পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার বেড়া উপজেলার নাকলিয়া বেড়ি বাঁধের প্রায় ৩০০ ফিট জায়গা অবৈধ দখল নিয়ে কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এই অনৈতিক কর্মকান্ড চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের নাকালিয়া বাজারের পাশেই বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ি বাঁধ। সেখানে নদী পারাপারের জন্য বাঁধানো হয়েছে ঘাট। বাঁধের পাড় ঘেঁষেই স্থানীয় প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছেন মেঝোপাকা টিনশেড বড়বড় দোকান ও গুদামঘর। সরকারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই জায়গা অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে দখল নিয়ে গড়ে তোলা ঘর মোটা টাকা জামানতের বিনিময়ে ভাড়া দেয়া হয়েছে। দোকান ও গুদাম ঘর ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা জামানত হিসেবে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। প্রতিমাসে নেয়া হচ্ছে ইচ্ছেমাফিক ঘর ভাড়া। তাদের ক্ষমতা ও প্রভাবে স্থানীয় কেউ কিছু বলার সাহস পাননা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাবনার ভুইফোর নামে বেনামে নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালিক, অধ্যক্ষ, পরিচালক, উপাচার্য, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বনে যাওয়া আলোচিত ড. মোল্লা কফিল উদ্দিন ও বেশ কয়েকজন আপন সহোদর মিলে নিজেদের জমির পাশেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি হওয়ার সুবাদে অবৈধ দখল নিয়ে প্রকাশ্যে কোটি টাকার রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের কর্মকান্ডের কোন প্রতিবাদ বা মুখ খুললেই তাকে দোকান ঘর থেকে উচ্ছেদ করে আর্থিকভাবে ক্ষতির সন্মুখিন করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও ভূক্তভোগী ব্যবসায়ীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নাকালিয়া বাজারটি অনেক বড়। মাঝে মধ্যেই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। কিন্তু দখলদাররা এমনভাবে ঘর তুলেছে, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী ঢুকে নদী থেকে পানি নিতে পারে না। তারা আরও বলেন, বেশ কয়েকবার আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ইউএনও বরাবর আবেদন করেছি। বেশ কয়েকবার কয়েকটি টিম এসেছে। ঘুরে চলে যায় কিন্তু কোন কাজ হয়না।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার সিল্টু বলেন, সমস্যা নিরসনে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু যে কমিটি করা হয়েছে তাদের ৩ জনই দখলদার হওয়ায় কমিটি কোন কাজে আসছে না।
আবু সাঈদ নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, জামানত দিয়ে ঘর ভাড়া নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে জোর করে দোকান থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। কোন কথা বলা যাবে না, বললেই আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, সরকারি জায়গা দখল করে, অথচ সরকারি লোকজন এসে ঘুরে যায়। দখল উচ্ছেদ বা তাদের বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা নেয়া হয়না। এটা রহস্যজনক ছাড়া আর কি হতে পারে এমন মন্তব্য করেন ওই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দখলের অভিযুক্ত মোল্লা কফিল উদ্দিন বলেন, নিজের জমির সামনে সরকারি জায়গা অন্য কেউ ব্যবহার করবে এটা মেনে নেয়া যায় না। পাউবোর কাছে লীজ চেয়ে পাইনি। তাই দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করেছি। যেহেতু নির্মাণ করতে টাকা খরচ হয়েছে, সেহেতু দোকান ঘর ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে জামানতসহ ভাড়ার চুক্তিতে ঘর দেয়া হয়েছে।
আর বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বলেন, অবৈধ ভাবে দখল উচ্ছেদে থানায় মামলা, অভিযোগ দিয়েছি। ডিসি অফিসে আবেদন করেছি। কিন্তু তাদের উচ্ছেদ করতে পারছি না। তিনি বলেন, ‘আপনারা রিপোর্ট করেন, আমি ওই রিপোর্টের পরেই উচ্ছেদ অভিযান চালাবো’। পাউবোর কতিপয় কর্মকর্তাকে অনৈতিক ম্যানেজ করে এই অবৈধ দখল এমন প্রশ্নে নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বলেন, আমাদের চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। আপনারা সহযোগিতা করলে আমাদের কাজের সুবিধা হবে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড বা স্থানীয়দের কাছ থেকে এ ধরনের অভিযোগ আমরা পাইনি। যদি অভিযোগ পাই তাহলে ম্যাজিস্ট্রেটসহ অভিযান পরিচালনায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।