নিজস্ব প্রতিনিধি : বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের জোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। মহামারির কারণে সীমিত পরিসরে আয়োজন করা হলেও বেশ কয়েকটি দেশের শীর্ষ নেতা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন সরাসরি। তবে বেশির ভাগ বিশ্বনেতা ভার্চুয়ালি অংশ নেবেন।
সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে সরাসরি যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি,নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভান্ডারী, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এ ছাড়াও,রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিসহ অনেকেই ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসবেন আগামী ২৬ মার্চ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগদানের পাশাপাশি তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। সফরের দ্বিতীয় দিনে তিনি টুঙ্গিপাড়া গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। বিশ্বনেতাদের আগমন উপলক্ষ্যে ব্যাপক নিরাপত্তার আয়োজন করা হচ্ছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘মহামারির কারণে প্রধানমন্ত্রী আমাদের সীমিত আকারে সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান আয়োজনের নির্দেশনা দিয়েছেন। তার মধ্যে ভারত, নেপাল, মালদ্বীপের নেতারা ঢাকায় আসতে পারেন। তার বাইরে ভার্চুয়ালি অনেকে যোগ দেবেন। রাশিয়া, কানাডার শীর্ষ নেতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের প্রতিনিধিসহ অনেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকালে সুবর্ণজয়ন্তীর পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয়ভাবে কী কী হচ্ছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। তারাও (ভারত) কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। এগুলো এখন পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রস্তুতির কাজ এখনো চলছে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত সেতুর উদ্বোধন হতে পারে। ফেনী নদী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি সীমান্ত নদী। এই নদী বাংলাদেশ অংশে রামগড় এবং ভারতের অংশে ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুম অবস্থিত। সেতু নির্মাণের ফলে রামগড় ও সাবরুমের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হবে। ফলে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের দিনাজপুরের চিলাহাটি থেকে ভারতের হলদিবাড়ির মধ্যে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ উদ্বোধন করেন। এবার ফেনী নদীর ওপর সেতুর উদ্বোধন হলে দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় কানেকটিভিটি সৃষ্টি হবে যা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গেও দেশটির অপর অংশকে সংযুক্ত করবে। মোদির সফরের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্কর চলতি ফেব্রুয়ারির শেষে কিংবা মার্চের শুরুতে বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন। এ ছাড়াও, মোদির সফরের আগে প্রস্তুতি হিসাবে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র সচিব, পানি সচিব এবং বাণিজ্য সচিবের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। মোদির সফরকালে সই করার লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত ৫-৬টি সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত হয়েছে। তবে এগুলো বড় কোনো চুক্তি নয়।
মোদির সফরের প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেছেন, ‘সফরের অনেক দিন এখনো বাকি। প্রায় দুই মাসে অনেক কিছুই হতে পারে। যদিও তিস্তা চুক্তি হবে না বলেই মনে করি। কারণ পশ্চিমবঙ্গের আপত্তি এখনো রয়েছে। নাটকীয় কিছু হলে মোদির সফরের পাশাপাশি পানিসম্পদমন্ত্রী পর্যায়ে জেআরসি বৈঠক ডাকা হবে। তবে এখন পর্যন্ত চুক্তি না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’
এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা শনিবার যুগান্তরকে বলেছেন,‘নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভান্ডারির বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা চলছে। এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে তার সফর হলে সেটা অনেকটাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকে ঘিরে হবে। তবে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক হবে। দুই দেশের বাণিজ্য জোরদারের লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে।