পাবনায় একই পরিবারের তিন হত্যার রহস্য যেভাবে উৎঘাটন করল জেলা পুলিশের চৌকস টিম

পাবনা শহরের পৌর এলাকার দিলালপুরে ভাড়া বাসায় একই পরিবারের তিনজন খুন হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে জেলা পুলিশের চৌকস টিম।

পাবনা প্রতিনিধি : পাবনা শহরের পৌর এলাকার দিলালপুরে ভাড়া বাসায় একই পরিবারের তিনজন খুন হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে জেলা পুলিশের চৌকস টিম। একই সাথে হত্যকান্ডে জড়িত নিহত আব্দুল জব্বারের পালিত ছেলে স্থানীয় মসজিদের ইমাম তানভীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মুলত টাকা পয়সা ও স্বর্নালঙ্কারের লোভে নি:সন্তান দম্পতি ও তাদের পালিত মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করে তানভীর। গ্রেপ্তার তানভীরের বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার হরিপুর গ্রামে। রোববার দুপুরে পাবনা পুলিশ লাইন মিলনায়তনে এক সাংবাদিক সম্মেলন করে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বিপিএম-পিপিএম।
পুলিশের ভাষ্যমতে, নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার হরিপুর গ্রামের মৃত হাতেম আলীর ছেলে তানভির হোসেন (২৫)। পাবনা শহরে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন মসজিদের ইমাম এবং মোড়েই ছিল তানভিরের মুদিদোকান।

রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর জব্বার (৬৪) এর সাথে ওই দোকান থেকে চাউল কেনার সূত্র ধরেই পরিচয়। আব্দুল জব্বার-ছুম্মা খাতুন দম্পতি নিঃসন্তান ছিলেন। একদিনের বাচ্চা সানজিদা খাতুন ওরফে জয়াকে (১৪) সন্তান হিসেবে লালনপালন করতে থাকেন। মৃত্যুর আগে সানজিদা ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল। দোকান থেকে চাউল কেনার সুবাদে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে মসজিদের ইমাম তানভির হোসেন। যাতায়াত শুরু হয় জব্বার-ছুম্মা দম্পতির বাড়িতে তানভিরের। তারা তানভিরের আচার আচরণে সন্তষ্ট হয়ে তাকে সন্তানের মতোই ভাবতেন। সেই সম্পর্কে ছুম্মা খাতুনকে তানভির মা হিসেবে সম্বোধন করতো। এই দম্পত্তি পরিবারের সকল কাজে, বিশেষ করে ব্যাংক, পোষ্ট অফিস থেকে টাকা তোলা সময়ে তানভিরকে রাখতো। গেল রমজান মাসে সেহেরী, ইফতার ও রাতের খাবার তারা এক সাথে খেতো।
কিন্তু বাড়িতে রাখা নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারের নেশায় পড়ে যায় তানভির। ওই পরিবার তাকে সন্তানের মতোই ভালবাসা দিলেও মনে মনে তানভির ভয়ঙ্কর ছক পরিকল্পনা করে । চলতি বছরের ২৯ মে আইনের চোখ ফাঁকি দিতে মসজিদ থেকে ছুটি নিয়ে দেশের বাড়ি চলে যায়। কিন্তু ছুটি না কাটিয়ে ৩১ মে যমদূত হয়ে পাবনা এসে ওই বাড়িতে উঠে। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর তানভিরকে পাশে নিয়ে আব্দুল জব্বার একই বিছানায় ঘুমাতে যান। পাশের ঘরে তার স্ত্রী ও কন্যা সন্তান ঘুমাতে যায়।

নিদ্রাহীন তানভির রাত ২ টার দিকে উঠে বাড়ির প্রত্যেকটি কক্ষে প্রবেশ করে ভালো ভাবে দেখে ও বুঝে নেয়। পরিবারের সবাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে গামছা, চাকু ও কাঠের বাটাম রেডি করে রাখে। পরে আব্দুল জব্বারের পাশে এসে শুয়ে পড়ে। রাত ৪ টা ৫ মিনিটে আব্দুল জব্বার প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাথ রুমে যাওয়ার জন্য বিছানা ছেড়ে উঠার সময়ে পেছন থেকে তানভির তাকে গলায় গামছা পেচিয়ে ফাঁসি দিয়ে শ্বাসরোধ করে। এ সময় আব্দুল জব্বার জীবন বাঁচাতে তানভিরের হাতের আঙ্গুলে কামড় বসিয়ে দেন। ক্ষিপ্ত হয়ে তানভির আব্দুল জব্বারকে গামছা দিয়ে শক্তভাবে পেচিয়ে জ্ঞান শুন্য করে ফেলে। জব্বারের মৃত্যু জেনে তানভির পাশের ঘরে ঘুমন্ত ছুম্মা খাতুনকে গলায় ছুড়ি চালিয়ে দেয়। এ সময় সানজিদা চিৎকার দিলে তাকেও ছুড়ি বসিয়ে দেয় গলায়। মা ও মেয়ে গুরুত্বর অবস্থায় বিছানায় পড়ে গেলে তাদের কাঠের বাটাম দিয়ে বেধরক পিটিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে তানভির। এরপর চাবি দিয়ে ঘরের আলমিরা, ওয়ারড্রবের ড্রয়ার খুলে নগদ ২ লক্ষ টাকা, নগদ ১ লক্ষ ভারতীয় রুপি, স্বর্ণের গহনা লুট করে নিয়ে যাবার সময়ে পুনরায় আব্দুল জব্বারের রুমে যায় তানভির। তখনও জব্বারের শ্বাসপ্রশ্বাস চলছিল। এটা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে তানভির কাঠের বাটাম দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করে বাড়ির সকল দরজা তালা দিয়ে আটকিয়ে সটকে পড়ে ।

স্থানীয় বাসিন্দারা মানুষ পঁচার বিকট গন্ধ পেয়ে তারা নিশ্চিত হন, ভাড়াটিয়া আব্দুল জব্বারের বাসা থেকে গন্ধ আসছে। এ সময় তারা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসাবাড়ির মুল দরজা ভেঙ্গে ভেতরে গিয়ে আলাদা আলাদা কক্ষে অর্ধগলিত লাশ দেখতে পায়। পরে পুলিশের রাজশাহীস্থ ফরেনসিক বিভাগের সদস্যরা এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
পাবনা পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গত শুক্রবারে বিকেলে মরদেহ তিনটি উদ্ধারের পর থেকেই জেলা পুলিশের পোষাকী পুলিশের পরেও সিআইডি, ডিএসবি, গোয়েন্দা পুলিশ ও পিবিআইসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা হত্যা ক্লু উদঘাটনে কাজ করছিল। তিনি বলেন, প্রাথমিক ভাবে গ্রেপ্তার তানভির আমাদের কাছে এই হত্যাকান্ডের মূল হোতা এবং পরিকল্পনাকারী হিসেবে বয়ান দিয়েছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে ১৬৪ গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, এই হত্যাকান্ডের সাথে যদি কোন রাঘব বোয়ালও জড়িত থাকে তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। কেউ পার পাবার সুযোগ নেই বলে দাবী করেন পুরিশ সুপার রফিকুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার পদন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীমা আখতার, সদর থানার ওসি নাছিম আহম্মেদসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

bd newsbdnewsbdnews24pabna newsPabna Update Newsপাবনাপাবনা একই পরিবারের ৩ জন হত্যা নিউজপাবনা ট্রিপল মার্ডার নিউজপাবনা পুলিশ সুপারপাবনা পুলিশ সুপারের কার্যালয়
Comments (0)
Add Comment