বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গুলশান বনানীর আদলে তৈরি হবে রাস্তা ও স্থাপনা উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী উদ্ধার করা হবে ১৩ খাল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সঙ্গে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮ টি ওয়ার্ডকে পরিকল্পিত আধুনিক নগর হিসেবে তৈরি করা হবে। নাগরিক জীবনের সকল প্রকার আধুনিক সুবিধাই মিলবে এসব এলাকায়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণ করা হবে। কোন তার ঝুলে থাকতে দেয়া হবে না, তাই মাটির নিচে দেয়া হবে সব ইউটিলিটি সার্ভিসের সংযোগ। নির্দিষ্ট সময় ছাড়া বছরজুড়ে খোঁড়া হবে না কোন রাস্তা। স্বচ্ছ আলোর এলইডি সড়কবাতি স্থাপন ও গাড়ি পার্কিংয়ের নির্দিষ্ট স্থান থাকবে। নক্সা অনুযায়ী উদ্ধার করা হবে সব জলাধার। পার্ক, খেলার মাঠ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বিনোদন কেন্দ্র তথা নাগরিক জীবনের সকল সুবিধাই সংযোজন করা হবে এই নতুন এলাকায়। গুলশান, বনানী, বারিধারার মতো করে কোন কোন ক্ষেত্রে আরও উন্নত সুবিধাযুক্ত করাসহ সকল উন্নত নাগরিক সুবিধাযুক্ত এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। আর এসব সুবিধা সংযোজনের মাধ্যমে পরিকল্পিত নগর গড়তে কাজ করবে বাংলাদেশ সেনাবহিনী। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরুর মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। উদ্যোগ দ্রুত ও পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নে রাজউক ও ঢাকার জেলা প্রশাসককে চিঠি প্রদান করেছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়,বর্তমান সরকার ডিএনসিসির নতুন ওয়ার্ডের সার্বিক উন্নতিকল্পে প্রায় ৪ হাজার ৪৫ কোটি টাকার একটি বিশেষ প্রকল্প ইতোমধ্যেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই অংশ হিসেবে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম নতুন ওয়ার্ডগুলোকে উন্নত বিশ্বের ন্যায় আধুনিক সকল সুবিধাযুক্ত নগরী গড়ে তুলতে কিভাবে তা সাজানো যায় তা নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডেগুর নির্বাচিত কাউন্সিলর,দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নগর পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে বেশ কয়েকবার পরিদর্শনও করতে দেখা গেছে। এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে যুক্ত করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। মন্ত্রণালয় প্রথমে সেনাবাহিনীকে দিয়ে কাজ করতে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত থাকলেও পরিকল্পিত উন্নয়নের স্বার্থে ও প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করতে সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে। এর বাইরে অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার পরপরই সব স্থাপনা নির্মাণের কাজ জোরোশোরেই শুরু করবে সংস্থাটি।
ডিএনসিসি সূত্র জানায়,নতুন যুক্ত হওয়া এলাকায় অবস্থিত মোট ১৩টি খাল উদ্ধার করা হবে। এক্ষেত্রে কোন প্রকার ছাড় না দিয়ে সর্বোচ্চ কঠোরতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। জানা গেছে, বর্তমানে এসব খালের অধিকাংশই অবৈধ দখলে চলে গেছে। কোন কোন খালের চিহ্নই খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। প্রায় ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এসব খালের জমি পুনরুদ্ধারের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগ একযোগে এসব খালের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতোমধ্যেই ঢাকার জেলা প্রশাসককে খালগুলো মূল অংশে ফিরিয়ে নিতে এর সিএস, আরএস খতিয়ান ও মহানগর জরিপ প্রদানের জন্য সম্পত্তি শাখা থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ডিএনসিসির সীমানায় নতুন যুক্ত হওয়া ১৮ টি ওয়ার্ডের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের অংশ হিসেবে কর্তৃপক্ষ মোট ২৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ১৩ টি খাল বর্তমানে অনেকটাই অবৈধ দখলে চলে গেছে। ঢাকার আশপাশে থাকা জলাধার রক্ষায় ও সব খাল পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে এসব খালের জমি সংক্রান্ত তথ্য প্রয়োজন। তাই খাল পুনরুদ্ধারে সংশ্লিষ্ট তথ্য দ্রুত প্রদানের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে রাজউকের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নতুন যুক্ত হওয়া ১৮ টি ওয়ার্ডে পরিকল্পিত নগরের স্বার্থে গৃহীত সংস্থাটির উদ্যোগ বাস্তবায়ন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তাই তা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ডিএনসিসির নগর পরিকল্পনা শাখা থেকে রাজউককে নতুন করে উক্ত এলাকার কোন বাড়ি, প্রতিষ্ঠান বা কোন প্রকার স্থাপনা নির্মাণে যেন সিটি কর্পোরেশনের অনুমতি নিয়ে আবেদনকারীদেরকে সর্ব প্রকার প্ল্যান প্রদান করা হয় সেজন্য একটি চিঠি প্রদান করেছে। আমরা এ চিঠির প্রেক্ষিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি প্রদান করেছি। বিষয়টি যেহেতু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত ও নাগরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ফলে ভেবেচিন্তে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এছাড়া কোন প্রকার নক্সা প্রদান এখন বন্ধ রাখলে নাগরিকদের হঠাৎ করে বড় ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে। তাই দ্রুততার সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের মাধ্যমে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পরই আমরা সিটি কর্পোরেশনের অনুরোধ বাস্তবায়ন করতে পারব। তবে এ বৈঠক দ্রুত হলে নাগরিক দুর্দশাও অনেক কম হবে। একই সঙ্গে পরিকল্পিত সুন্দর নগরী গড়াও সম্ভব হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা উপসচিব মোজাম্মেল হক জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের সীমানার সঙ্গে যুক্ত হওয়া নতুন ওয়ার্ডগুলোকে আধুনিক সকল প্রকার সুবধা যুক্ত করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই এ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। এরই অংশ হিসেবে আমরা নতুন ১৮ টি ওয়ার্ডে সকল রাস্তা, ড্রেনসহ নাগরিক সেবার প্রয়োজনে নির্মিত সকল স্থাপনাই উন্নতমানের করে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিশাল এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক বৈঠকে পাস করেছেন। এখন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড়ের অপেক্ষায় আছি। অর্থ প্রাপ্তির পরপরই আমরা বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ডিএনসিসির সঙ্গে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮ টি ওয়ার্ডকে আমরা পরিকল্পিত আধুনিক নগর হিসেবে তৈরি করব। আমরা গুলশান, বনানী, বারিধারার মতো করে কোন কোন ক্ষেত্রে আরও উন্নত সুবিধাযুক্ত করাসহ সকল উন্নত নাগরিক সুবিধাযুক্ত এলাকা হিসেবে গড়ে তুলব। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরুর মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এ বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদনে আর এসব সুবিধা সংযোজনের মাধ্যমে পরিকল্পিত নগর গড়তে কাজ করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। মূলত নতুন ১৮ ওয়ার্ড হবে পরিকল্পিত নগরী। মেয়র আতিক বলেন, প্রতিটি এলাকায়ই সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আধুনিক সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণ করা হবে। নতুন ওয়ার্ডগুলোতে কোন প্রকার তার ঝুলে থাকতে দেয়া হবে না তাই মাটির নিচে দেয়া হবে সকল ইউটিলিটি সার্ভিসের সংযোগ স্থাপন। এছাড়া নির্দিষ্ট সময় ছাড়া বছরজুড়ে কোন রাস্তা খোঁড়া হবে না। স্বচ্ছ আলোর আধুনিক এলইডি সড়কবাতি স্থাপন করা হবে ও গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য এলাকাভিত্তিক নির্দিষ্ট স্থান থাকবে। পার্ক, খেলার মাঠ,স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বিনোদন কেন্দ্র তথা নাগরিক জীবনের সকল আধুনিক সুবিধাই সংযোজন করা হবে নতুন এসব এলাকায়।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ডিএনসিসির নতুন ওয়ার্ডের সার্বিক উন্নতিকল্পে প্রায় ৪ হাজার ৪৫ কোটি টাকার একটি বিশেষ প্রকল্প ইতোমধ্যেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই অংশ হিসেবে নতুন ওয়ার্ডগুলোকে উন্নত বিশ্বের ন্যায় আধুনিক সকল সুবিধাযুক্ত নগরী গড়ে তুলে কিভাবে সাজানো যায় তা নিয়ে কাজ শুরু করছি। আমি সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলোর নির্বাচিত কাউন্সিলর,দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নগর পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছি ও মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনও করেছি। আমি কিছুদিন আগে ভাটারা, সাঁতারকুল, বাড্ডা এলাকায় সুতিভোলা খাল ও কড্ডা খাল পরিদর্শন করেছি। তিনি বলেন,আমরা নক্সা অনুযায়ী সকল জলাধার উদ্ধার করব। ডিএনসিসির সম্প্রসারিত ওয়ার্ডগুলোতে ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৩টি খাল রয়েছে। এসব খালের যে অংশ অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে তা পুনরুদ্ধার করব। মেয়র বলেন, আমার প্রথম কাজ হচ্ছে এসব এলাকায় রাস্তার পাশে ড্রেন নির্মাণ করা। দ্বিতীয় কাজ রাস্তা চওড়া করা। সরু রাস্তাগুলো অবশ্যই প্রশস্ত করতে হবে। এ কাজে আমাদেরকে জনগণ এবং রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা সাহায্য করছে। আমরা রাজউককে চিঠি দিয়েছি, এ এলাকায় যেন কোন ধরনের ভবন নির্মাণের প্ল্যান দেয়া না হয়। আমি কাউন্সিলরদের বলেছি,এ এলাকায় আর যাতে কোন বাড়ি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে। নয়ত পরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণের জন্য বারবার ভবন ভাঙ্গতে হতে পারে, যার ফলে বেশি ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।