বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : সাইনবোর্ডসহ সকল নামফলকে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশ বাস্তবায়নে বেশ জোরেশোরেই মাঠে নেমেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। এখন থেকে দূতাবাস, বিদেশী সংস্থা ও নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া সংস্থাটির সীমানায় অবস্থিত কোন প্রতিষ্ঠানের নামফলকই শুধু ইংরেজীতে লেখা থাকতে পারবে না। যদি কেউ লিখে থাকেন তাহলে পাশাপাশি অবশ্যই বাংলায়ও তা লেখা থাকতে হবে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রথমবার অভিযানে জরিমানা করার পর বারবার একই অপরাধ করলে মানে ইংরেজীতেই সাইনবোর্ড পুনরায় প্রতিস্থাপন করলে প্রয়োজনে সেই ব্যবসায়ীর বা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হবে। এক্ষেত্রে কাউকেই কোন ছাড় দেয়া হবে না বলে জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন ডিএনসিসির মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। মূলত ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে সকল স্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার বৃদ্ধিতে এ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে সংস্থাটি। যে কোন সরকারী বেসরকারী ভবন, শিল্প কারখানা বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড বাংলায় লেখা নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে নাগরিক সেবাদানকারী সংস্থা ডিএনসিসি।
সূত্র জানায়, ডিএনসিসি সারাবছরই বিভিন্ন কারণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলেও ভাষার মাসে সংস্থাটির সীমানায় অবস্থিত সকল সাইনবোর্ডে বাংলায় লেখা বাধ্যতামূলক করতে নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। এরই অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে কোন কোন এলাকায় কি পরিমাণ সাইনবোর্ড বাংলায় লেখা নেই তার জরিপ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৯৫ ভাগের বেশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডই ইংরেজীতে রেখা রয়েছে। সরকারী নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া এ নির্দেশ মানতে দেখা যাচ্ছে না। উল্লেখ্য, রাজধানীর সকল প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড বাংলায় লেখা নিয়ে হাইকোর্টে করা এক রিট পিটিশন ১৬৯৬/২০১৪ এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ অনুযায়ী সকল প্রতিষ্ঠানের (দূতাবাস,বিদেশী সংস্থা ও তৎসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র ব্যতীত) নামফলক, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার ইত্যাদি বাংলায় লেখা বাধ্যতামূলক। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে হাইকোর্টের আদেশটি ডিএনসিসি এলাকায় বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব ডিএনসিসিকে প্রদান করে। এরপর ডিএনসিসি থেকে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান বা নবায়নের সময় ট্রেড লাইসেন্স বইয়ের মধ্যে ‘সাইনবোর্ড বাংলায় লেখা বাধ্যতামূলক’ শর্ত জুড়ে দেয় সংস্থাটি। এছাড়াও নেয়া হয় নানা উদ্যোগ।
ডিএনসিসি সূত্র জানায়, রাজস্ব শাখার পক্ষ থেকে সাইনবোর্ডে বাংলায় লেখার বাস্তবায়ন করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা, নির্দেশ লঙ্ঘন করলে বা প্রমাণিত হলে শাস্তি প্রদান করা, নাগরিকদের অধিক সচেতন করতে পত্রিকা বা গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেয় ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া রাজস্ব শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে সাইনবোর্ডে বাংলার ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে নির্দেশ প্রদান করে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে সংস্থাটি প্রাথমিকভাবে ৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ডিএনসিসি এলাকায় অভিযান শুরু করেছে। এ অভিযান ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে একটানা চলবে বলে জানা গেছে। অভিযানে সাইনবোর্ড ব্যানার ফেস্টুন, নামফলকসহ সব স্থানে বাংলা থাকা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সকল অবৈধ সাইনবোর্ডও ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডিএনসিসি কর্তৃক অনুমোদিত সকল সাইনবোর্ডে বাংলায় লেখা না থাকলে জরিমানা ও শাস্তি প্রদান করা হবে। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী আইন না মানার সর্বোচ্চ শাস্তি মাত্র ৫ হাজার টাকা। তবে ট্রেড লাইসেন্সে দেয়া বাংলায় সাইনবোর্ডের শর্ত না মানায় ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রয়োজনে সেই ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স পর্যন্ত বাতিল করতে পারবেন। তাই প্রয়োজনে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে রাজস্ব শাখা কর্তৃক ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করতে পারবেন। তবে প্রাথমিকভাবে নাগরিকদের সচেতন করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। তবে হাইকোর্টের নির্দেশনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে প্রয়োজনে আরও কঠোর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশ অনুযায়ী বিদেশী সংস্থা ছাড়া সকল সাইনবোর্ড ও নামফলক বাংলায় লেখা বাধ্যতামূলক। তবে ট্রেড লাইসেন্স নেয়ার সময় শর্ত থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা মানতে দেখা যায় না। তাই অতি দ্রুতই শহরের অলিগলি থেকে শুরু করে সকল বাণিজ্যিক মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করবে ডিএনসিসি। অপরদিকে প্রথমবার অভিযানে নির্দিষ্ট জরিমানার পরেও যদি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সাইনবোর্ডে বাংলায় লেখার নির্দেশ না মানে তাহলে তাদের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইন্স বাতিলের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ হামিদ মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ সারাবছরই অবৈধ সাইনবোর্ড ও নামফলক নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে। এর বাইরেও সাইনবোর্ড বাংলায় লেখা রয়েছে কিনা তা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। তবে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি হিসেবে হাইকোর্টের দেয়া বাংলায় সকল প্রকার সাইনবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন রয়েছে কিনা তার সর্বোচ্চ বাস্তবায়নে একযোগে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য মেয়র আতিকুল ইসলাম নির্দেশ প্রদান করেছেন। এরই অংশ হিসেবে আমরা প্রাথমিকভাবে ৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি। সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহার বিস্তারে ডিএনসিসির সীমানায় অবস্থিত সকল ছোট বড় মার্কেট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ অভিযান মাসজুড়েই চলমান থাকবে।
হামিদ বলেন, বাংলায় সাইনবোর্ড বা নামফলক না লেখা থাকলে সিটি কর্পোরেশন আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ হাজার টাকা জরিমানা আমরা আদায় করছি। তবে জরিমানার অর্থ ও শাস্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করা উচিত। এজন্য আমরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। এটি পরিবর্তন করা সম্ভব হলে হাইকোর্টের দেয়া রায় বাস্তবায়ন অতি সহজ হবে তথা বাংলায় সকল প্রকার সাইনবোর্ড শহরজুড়ে চোখে পড়বে। তিনি বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রথমবার অভিযানের পর দ্বিতীয়বার কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সাইনবোর্ড বাংলায় না লিখলে প্রয়োজনে আমরা সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করব। তবে আমরা ইতোমধ্যেই নাগরিকদেরকে সাইনবোর্ডে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে প্রতিটি ট্রেড লাইসেন্সে তার শর্ত দিয়ে দিয়েছি। যদিও সব ক্ষেত্রে তা পরিপালন করছেন না। তবে অনেক ব্যবসায়ীই ধীরে ধীরে বাংলায় সাইনবোর্ড স্থাপন করছেন যা আশাব্যঞ্জক।
ঢাকা উত্তর সিট কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা। শহরের যেসব প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড, নামফলক, ব্যানার ফেস্টুন ইংরেজিতে থাকে সেগুলোতে কি লেখা রয়েছে তা অনেকেই পড়তে পারেন না। ফলে চলাচলসহ সার্বিক কর্মকাণ্ড সহজে করতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এজন্য বিদেশী দূতাবাস ও নির্দিষ্ট কিছু স্থান ছাড়া ডিএনসিসির সীমানায় অবস্থিত সকল সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে বাংলায় সকল প্রকার সইনবোর্ড লেখার জন্য হাইকোর্টের পূর্ব নির্দেশনা রয়েছে। তাই আমরা প্রতিটি ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার সময় নামফলক বা সাইনবোর্ড বাধ্যতামূলক বাংলায় স্থাপন করতে হবে বলে শর্ত জুড়ে দিয়েছি। এছাড়াও আমরা নাগরিকদের এ বিষয়ে সচেতন করতে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি। যাতে করে নাগরিকগণ সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহার করেন। কিন্তু অনেক ব্যবসায়ীই ট্রেড লাইসেন্স নেয়ার পর আর তা মানতে দেখা যায় না। তাই আমরা হাইকোর্টের নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়নে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছি। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করছি। তবে পরের বার অভিযানেও একই অপরাধ করতে দেখা গেলে ট্রেড লাইসেন্সের শর্ত না মানায় প্রয়োজনে তাদের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হবে ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, আমরা শাস্তির পরিমাণ বাড়াতে স্থানীয় সরকার আইনের সংশোধনী আনতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি।
মেয়র আতিক বলেন, অতি দ্রুতই আমরা অলিগলি থেকে শুরু করে সকল ছোটবড় মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করব। ট্রেড লাইসেন্স নেয়ার পর তার শর্ত মানা হচ্ছে কিনা ও বাংলায় সাইনবোর্ড স্থাপন করা হচ্ছে কিনা তা কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে রাজস্ব শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের নির্দেশ দিয়েছি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলবে। আদালতের নির্দেশ না মানলে ব্যাংক বীমা, স্কুল কলেজসহ সংশ্লিষ্ট কাউকেই কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না।