বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : মাতৃভাষায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক দিল সরকার। মাতৃভাষার জন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক পেলেন তিন গুণী ও এক প্রতিষ্ঠান। মাতৃভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন, বিকাশ, চর্চা, প্রচার-প্রসারে অবদানের জন্য জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামসহ তিন ব্যক্তি এবং এক প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রথমবারের মতো তুলে দেয়া হলো ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক’।
দেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবী ও ভাষাবিজ্ঞানী জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জাতীয় পর্যায়ে মাতৃভাষার সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন ও বিকাশে অবদানের জন্য ২০২১ সালের এই সম্মাননা পেলেন। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণে অবদানের জন্য খাগড়াছড়ির জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক পেয়েছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উজবেকিস্তানের গবেষক ইসমাইলভ গুলম মিরজায়েভিচ এবং লাতিন আমেরিকার আদি ভাষাগুলো নিয়ে কাজ করা বলিভিয়ার অনলাইন উদ্যোগে চলা প্রতিষ্ঠান এ্যাক্টিভিজমো লেংকুয়াস এ বছর বাংলাদেশ সরকারের এ সম্মাননা পেয়েছেন।
রবিবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি পদক তুলে দেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এ বছরই প্রথম এ সম্মাননা দেয়া হলো। দুই বছর পর পর জাতীয় পর্যায়ে দুটি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুটি পদক দেয়া হবে।
নজরুল গবেষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম নজরুল অধ্যাপক ও নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের প্রথম পরিচালক। ৮৭ বছর বয়সী এই ভাষাবিজ্ঞানী, লেখক ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। সেই সময়ের দুর্লভ আলোকচিত্রও ধারণ করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় এই বুদ্ধিজীবী। বাঙালীর মুক্তির সংগ্রামের এই প্রত্যক্ষ সাক্ষী সেসব ইতিহাস গ্রন্থিত করেছেন তাঁর লেখায়।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে প্রথম গ্রন্থ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের ইতিহাসে প্রথম গ্রন্থটিসহ প্রায় ৩০টি দুর্লভ বই এসেছে তাঁর হাত দিয়ে। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এক সময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্বও পালন করেছেন। ২০০৮ সালে সরকার তাঁকে ‘জাতীয় অধ্যাপক’ করে। এর আগে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম একুশে পুরস্কার, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক পাওয়া আরেক বাংলাদেশী মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বাংলাদেশের বিভিন্ন ভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন, বিকাশ ও এসব ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম প্রণয়নের কাজ করেছেন। দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার চিত্র, মাতৃভাষায় শিক্ষা পরিস্থিতি, মাতৃভাষাভিত্তিক বহুভাষিক শিক্ষাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের অনুষ্ঠানে জানানো হয়, উজবেকিস্তানের নাগরিক ইসমাইলভ গুলম মিরজায়েভিচ তাঁর মাতৃভাষার গবেষণায় অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। উজবেক ভাষার চর্চার, প্রসার, সংরক্ষণ এবং সাংস্কৃতিক বিকাশে তাঁর ভূমিকা অগ্রগণ্য। ভাষাবিজ্ঞানের বিষয়গুলো ছাড়াও আর্থ-সামাজিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটগুলো তাঁর কাজে গুরুত্ব পেয়েছে। বিশ্বে মাতৃভাষা হিসেবে উজবেক ভাষার অবস্থান সংহত করতে বিভিন্ন প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন ইসমাইলভ গুলম মিরজায়েভিচ।
প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক পেয়েছে বলিভিয়ার প্রতিষ্ঠান এ্যাক্টিভিজমো লেংকুয়াস। লাতিন আমেরিকার স্থানীয় ভাষাগুলোকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। এ সংস্থার কোন অফিস নেই। এ উদ্যোগে জড়িত সবাই কাজ করেন ভার্চুয়ালি। ২০১৪ সালে মেক্সিকোতে ইনডিজেনাস ল্যাংগুয়েজ ডিজিটাল এ্যাক্টিভিস্টসদের প্রথম সম্মেলনের পর এ্যাক্টিভিজমো লেংকুয়াসের যাত্রা শুরু হয়। আমেনিকার লাতিন ভাষাভাষী অঞ্চলের আদিবাসীদের মাতৃভাষা এবং পুরনো ভাষাগুলোর সংরক্ষণ, প্রসার ও গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে এ সংস্থাটি।
অনুষ্ঠানে ইউনেস্কোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মিস বিয়েট্রিস খালদুন ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রান্তে এই সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিশিষ্ট নাগরিকদের উপস্থিত থাকার পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জীনাত ইমতিয়াজ আলীসহ উর্ধতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।