বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বের হতে দ্বিতীয়বারের মতো জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক পর্যালোচনার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। আজ জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) এলডিসিগুলোর জন্য ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা বৈঠক শুরু করছে। বৈঠকে দ্বিতীয় দফায় এলডিসি থেকে বের হওয়ার প্রয়োজনীয় মানদণ্ড বাংলাদেশ পূরণ করতে পেরেছে কিনা তার আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন করা হবে। মোটামুটি নিশ্চিত যে, এ দফায়ও বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের মানদণ্ড পূরণের স্বীকৃতি পাবে এবং উত্তরণের জন্য সুপারিশ করবে সিডিপি।
সিডিপির পর্যালোচনা সভা আজ থেকে প্রায় সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে। ভার্চুয়াল এ সভায় বিভিন্ন এলডিসির প্রতিনিধিরাও অংশ নেবেন। অন্যান্য কয়েকটি দেশেরও এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা যাচাই হবে এ বৈঠকে। বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির অন্যতম সদস্য। সমকালকে তিনি বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের সব শর্ত পূরণ করবে। তবে উত্তরণকালীন সময়ের প্রস্তুতি বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি পাওয়ার উচ্ছ্বাসের সঙ্গে উদ্বেগও থাকতে হবে। টেকসই উত্তরণের জন্য কৌশল ও কর্মসূচি ঠিক করতে হবে।
প্রথম দফায় ২০১৮ সালের মার্চে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হওয়ার যোগ্য হিসেবে সিডিপির সুপারিশ পায়। নিয়ম হচ্ছে, এলডিসি থেকে বের হতে সিডিপির পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি পেতে হয়। স্বীকৃতি পাওয়ার পর প্রস্তুতির জন্য তিন বছর এলডিসি হিসেবে থাকে একটি দেশ। সে অনুযায়ী বাংলাদেশের ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে বের হওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশ সম্প্রতি এ বিষয়ক এক্সপার্ট গ্রুপের সভায় সিডিপির কাছে প্রস্তুতির জন্য সময় তিন বছর থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করার আহ্বান জানিয়েছে। উত্তরণ প্রক্রিয়াকে মসৃণ ও টেকসই করা এবং করোনাভাইরাসের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে বাড়তি দুই বছর সময় চেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ওই প্রস্তাব সিডিপির ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় বিবেচনার জন্য উঠবে।
বর্তমান নিয়মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারগুলোতে আরও তিন বছর রপ্তানিতে শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। বাংলাদেশ যদি ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বের হয় তাহলে সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ইইউর বাজারে ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্ক্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাবে। ইইউর বাইরে অন্যান্য দেশে ২০২৬ সালের পর শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যাবে না। করোনার কারণে এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর কয়েক বছর এ সুবিধা যাতে অব্যাহত থাকে সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলে তদবির করছে। বাংলাদেশসহ উত্তরণ প্রক্রিয়ায় থাকা দেশগুলোর এ সুবিধার জন্য সিডিপিও সুপারিশ করতে পারে।
সিডিপি তিনটি সূচকের মানের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা মূল্যায়ন করে। সূচকগুলো হচ্ছে- মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ তিনটি সূচকেই প্রয়োজনীয় মান অর্জন করে। এবারও অর্জন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সিডিপির এবারের বৈঠকে এলডিসিগুলোর ওপর করোনার প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। করোনার কারণে এলডিসিগুলোর সংকট বিবেচনায় নিয়ে তাদের জন্য সমর্থনমূলক পদক্ষেপ থাকতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ উন্নয়নের পথে আরেকটি মাইলফলক। এতে বাংলাদেশের বড় ধরনের ব্র্যান্ডিং হবে। এখানকার অর্থনীতি উদীয়মান, বড় বাজার সৃষ্টি হচ্ছে- এমন বার্তা বিশ্ববাসী পাবে। এলডিসি থেকে উত্তরণের অন্যতম শর্ত হলো অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হওয়া। বাংলাদেশ এ শর্ত পূরণ করতে পারছে মানে অর্থনীতিতে তুলনামূলক কম ঝুঁকি রয়েছে। এসব বিষয় বিনিয়োগকারীদের উপলদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ আঞ্চলিক বা দ্বিপক্ষীয় চুক্তির অধীনে বিভিন্ন দেশে শুল্ক্কমুক্ত পণ্য রপ্তানির সুবিধা পায়। আবার ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বিধিবিধান থেকে অব্যাহতি রয়েছে। অন্যদিকে উন্নয়ন সহযোগীরা কম সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে থাকে। এলডিসি না থাকলে এসব সুবিধা উঠে যাবে।