বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসছে। এ ক্ষেত্রে প্রবাসীরা শুল্ক ছাড়া ২৩ গ্রাম (২ ভরি) স্বর্ণ সঙ্গে আনতে পারবেন। আর মহিলারা আনতে পারবেন ১১৭ গ্রাম (১০ ভরি)। এর বেশি আনলে রাষ্ট্রের অনুকূলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। শুধু তাই নয়, ভরিপ্রতি দুই হাজার টাকা শুল্ককর দিয়ে বছরে শুধু একবারই সর্বোচ্চ ২০ ভরি স্বর্ণ বা রুপা আনা যাবে। ব্যাগেজ রুলের খসড়া পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বর্তমানে ১০০ গ্রাম (৮.৫৭ ভরি) স্বর্ণালংকার বা ২০০ গ্রাম রুপার অলংকার আনা যায়। তবে এক ধরনের অলংকার ১২টির বেশি আনা যায় না। আর শুল্ক দিয়ে ২০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের বার বা রুপার বার আনা যায়। স্বর্ণের বারের জন্য ভরিপ্রতি দুই হাজার টাকা এবং রুপার বারের জন্য ভরিপ্রতি ছয় টাকা শুল্ক নির্ধারিত আছে। সূত্র জানায়, ব্যাগেজ রুলের সবচেয়ে বেশি অপব্যবহার হয় স্বর্ণ, গুঁড়া দুধ, ডায়াপার, নামি-দামি ব্র্যান্ডের কসমেটিক্স আনার ক্ষেত্রে। এসব পণ্য দেশে চাহিদা থাকায় একটি চক্র ব্যাগেজ রুলের সুবিধা নিয়ে অবাধে আনছে। এই ফাঁকফোকর বন্ধে বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিধিমালার খসড়া সব কাস্টম হাউজের কমিশনারের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে তা চূড়ান্ত আকারে আগামী বাজেটে প্রণয়ন করা হবে।
সূত্র আরও জানায়, সরকার স্বর্ণ আমদানিকে উৎসাহিত করতে নীতিমালা প্রণয়ন করলেও বৈধভাবে আমদানি একেবারেই নগণ্য। মূলত ব্যাগেজ রুলের সুবিধা নিয়ে একটি চক্র বিদেশ থেকে অবাধে স্বর্ণ আনছে। এসব স্বর্ণ স্থানীয় বাজারে জোগান দেওয়া হচ্ছে। মাঝেমধ্যে দু-একটি চালান ধরা পড়লেও প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে। তাই ব্যাগেজ রুলে আমূল পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জুয়েলারি সমিতির (বাজুস) সভাপতি এনামুল হক বলেন, স্বর্ণ আমদানির জটিলতা দূর হতে যাচ্ছে। তাই ব্যাগেজ বার আনার সুযোগ রাখাই ঠিক নয়। তবে প্রবাসীদের স্বর্ণালংকার আনার সীমা আগের মতোই ১০০ গ্রাম রাখা উচিত।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, স্বর্ণের বার আনার ক্ষেত্রে ব্যাগেজ রুলে কোনো সুযোগ রাখাই উচিত নয়। কারণ, এসব স্বর্ণ দেশে থাকছে, না পাচার হয়ে যাচ্ছে -তার হিসাব ও জবাবদিহিতা নেই। আর প্রবাসীরা তো আনে স্বর্ণালংকার। তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাগেজ রুলে স্বর্ণের বার আনার ক্ষেত্রে দুই হাজার টাকা ট্যাক্স দিতে হয়। আর বৈধভাবে স্বর্ণ আনতে গেলে সাড়ে তিন হাজার টাকা ট্যাক্স দিতে হয়। এ কারণে অনেকে ডিলার লাইসেন্স নিয়েও স্বর্ণের বার আমদানি করছে না। ফলে স্বর্ণের বাজারে গ্রে এরিয়া থেকেই যাচ্ছে। শুধু স্বর্ণ আনার ক্ষেত্রেই নয়, ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আনার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। পাশাপাশি ইউ ব্যাগেজেরও অপব্যবহার বন্ধে লাগেজের ওজন নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে।
খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি বছরে একবার শুল্ককর ছাড়া স্থলবন্দর দিয়ে ব্যাগেজ রুলের আওতায় সর্বোচ্চ ৪০০ ডলারের সামগ্রী আনতে পারবেন। বর্তমানে তিনবার এ সুবিধা পাওয়া যায়। অন্যদিকে ইউ-ব্যাগেজের (যাত্রীর সঙ্গে আনা হয়নি এমন লাগেজ) আওতায় ১২ বছরের কম বয়সি বাচ্চাদের জন্য ১০০ কেজি ও ১২ বছর বয়সোর্ধ্বরা ৪০ কেজি পর্যন্ত শুল্ক-কর ছাড়া পণ্যসামগ্রী খালাস করতে পারবেন। আগে লাগেজের ওজন নির্ধারণ করা ছিল না।
শুল্ক ছাড়া যেসব পণ্য আনা যাবে : একটি করে ক্যাসেট প্লেয়ার বা টু-ইন-ওয়ান, ডিস্কম্যান বা ওয়াকম্যান, অডিও সিডি প্লেয়ার, ইউপিএসসহ ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ কম্পিউটার, কম্পিউটার স্ক্যানার, কম্পিউটার প্রিন্টার, ভিডিও ক্যামেরা, ডিজিটাল ক্যামেরা, কর্ডলেস টেলিফোন সেট, রাইস কুকার বা প্রেসার কুকার বা বার্নারসহ গ্যাস ওভেন, টোস্টার বা স্যান্ডইউচ মেকার বা ব্লেন্ডার বা ফুড প্রসেসর বা জুসার বা কফি মেকার, ম্যানুয়াল বা বৈদ্যুতিক সেলাই মেশিন, টেবিল বা সিলিং ফ্যান, স্পোর্টস সরঞ্জাম, এক কার্টন সিগারেট, ২৯ ইঞ্চি টেলিভিশন, ১৯ ইঞ্চি পর্যন্ত এলসিডি কম্পিউটার মনিটর, বাইনোকুলার, সর্বোচ্চ ১৫ বর্গমিটারের কার্পেট, বেবি ক্যারেজ ও স্ট্রোলার, ক্যালকুলেটর, সাধারণ সিডি ও ২টি স্পিকারসহ কম্পোনেন্ট, ৪টি স্পিকারসহ কম্পোনেন্ট এবং ২টি মোবাইল সেট।
শুল্ক দিয়ে যেসব পণ্য আনা যাবে : নির্ধারিত শুল্ক দিয়ে ১২ আইটেমের পণ্য ব্যাগেজ রুলের আওতায় আনা যাবে। ৩০-৩৬ ইঞ্চি টেলিভিশন ১০ হাজার টাকা, ৩৭-৪২ ইঞ্চির জন্য ২০ হাজার, ৪৩-৪৬ ইঞ্চির জন্য ৩০ হাজার, ৪৭-৫২ ইঞ্চির জন্য ৫০ হাজার, ৫৩-৬৫ ইঞ্চির জন্য ৭০ হাজার ও ৬৬ ইঞ্চির বেশি আয়তনের টেলিভিশনের জন্য ৯০ হাজার টাক শুল্ক দিতে হবে। ৪ স্পিকারের বেশি মিউজিক সেন্টার বা হোম থিয়েটার বা সাউন্ড সিস্টেমের জন্য আট হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
৫১-৮০ লিটারের ডিপ ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটরের জন্য চার হাজার টাকা, ৮১-১৫০ লিটারের জন্য পাঁচ হাজার টাকা, ১৫১-২০০ লিটারের জন্য সাত হাজার, ২০১-৩০০ লিটারের জন্য ১০ হাজার ও ৩০১ লিটারের বেশি ধারণক্ষমতার ফ্রিজের জন্য ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে। উইন্ডো টাইপ এয়ারকুলার বা এয়ার কন্ডিশনারের জন্য সাত হাজার টাকা ও স্পিট টাইপের জন্য যথাক্রমে ১৫ ও ২০ হাজার টাকা শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিশ এন্টেনার জন্য সাত হাজার টাকা, প্রফেশনাল কাজে ব্যব হৃত ক্যামেরার জন্য ১৫ হাজার টাকা, এয়ারগান ও এয়ার রাইফেলের জন্য পাঁচ হাজার টাকা, ঝাড়বাতির পয়েন্টপ্রতি ৩০০ টাকা, ডিশ ওয়াশার বা ওয়াশিং মেশিনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা, দুই বার্নারের বেশি চুলার জন্য দুই হাজার টাকা এবং ইলেকট্রিক বা মাইক্রোওভেনের জন্য ছয় হাজার টাকা শুল্ক দিতে হবে।