বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। একই সঙ্গে তিনি নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন।
ওয়াশিংটন ডিসিতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুুল মোমেন এবং বাইডেন প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের মধ্যে টেলিকনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। ৪০ মিনিট স্থায়ী এ বৈঠকে অ্যান্টনি
ব্লিনকেন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উপরোক্ত প্রশংসা করেন। পরে ড. মোমেন এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত ও অভিভূত। শুরুতেই ব্লিনকেন বলেন, ওয়েলকাম অ্যাট ইউর সেকেন্ড হোম। অর্থাৎ আমি যে সাড়ে তিন দশকের মতো এই যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম, সেটিও তার অজানা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্লিনকেন বাংলাদেশের ব্যাপারে উচ্চ ধারণা পোষণ করেছেন। আমি মনে করছি এটি ছিল উইন উইন সিচুয়েশনের মতো। যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছি আইসিটি সেক্টর, ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টর, রিভার ম্যানেজমেন্টে বিনিয়োগের জন্যে। এ ছাড়া, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগের অপূর্ব সুযোগের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।’ রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে ব্লিনকেন বাংলাদেশের মানবিকতাপূর্ণ আচরণের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, এতগুলো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার ইতিহাসে বাংলাদেশ অনন্য আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে সসম্মানে নিজ বসতভিটায় ফিরতে আগ্রহী হয় তেমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
মিয়ানমারে সামরিক শাসন জারি হওয়ায় গোটা পরিস্থিতিতে পরিবর্তন এসেছে। এ মুহূর্তে আমাদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। ড. এ কে আবদুুল মোমেন বলেন, আমি তাকে জানিয়েছি, আমাদের প্রায়োরিটি হচ্ছে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন। এ জন্যে যুক্তরাষ্ট্রকে বলিষ্ঠ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। সম্ভব হলে একজন বিশেষ দূত নিয়োগ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে সম্পৃক্ত সবার সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগের উদ্যোগ নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। আমার প্রস্তাব নিয়ে তিনি আলোচনা করবেন বলে উল্লেখ করেছেন।
ড. মোমেন জানান, ‘মিয়ানমারের সামরিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অবরোধ আরোপ করা হলেও সেটি চাপ সৃষ্টির জন্যে যথেষ্ট নয় বলে আমি তাকে জানিয়েছি। জবাবে ব্লিনকেন বলেছেন যে, মিয়ানমার তাদের কথাও শোনে না, পাত্তা দেয় না। আমি এ সময় বলেছি যে, তারা যাতে অবজ্ঞা-উপেক্ষা করার সুযোগ না পায় সে ধরনের নেতৃত্ব অধিষ্ঠিত করতে হবে রোহিঙ্গা ইস্যুর স্থায়ী ও টেকসই সমাধানে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, বাংলাদেশের করোনায় সংক্রমণের হার ৩% এরও নিচে। মৃত্যুর সংখ্যা দৈনিক সিঙ্গেল ডিজিটে এসেছে। আমরা টিকা প্রদানের কার্যক্রমও শুরু করেছি। এসব জেনে ব্লিনকেন বলেন, আমেরিকায় করোনা পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে একে নিয়ন্ত্রণের জন্যে। এ সময় আমি তাকে জানাই, এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ মানবতার সামগ্রিক কল্যাণে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
একপর্যায়ে ব্লিনকেনকে ড. মোমেন জানান, ‘বাংলাদেশ আইনের শাসন তথা সুশাসন এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। এ জন্যেই আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের আদালতে দন্ডিত এক ঘাতক রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে নিতে চাইছি।’ এ প্রসঙ্গে ব্লিনকেন জানান, ‘অবশ্যই, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ এখন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। তারা বিস্তারিত তথ্য পেলে সঠিক পদক্ষেপটি নেবে।’
বাঙালি জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে আমন্ত্রণ জানালে ব্লিনকেন করোনা পরিস্থিতির কথা বলে জানান যে, পরিস্থিতি সর্বত্র স্বাভাবিক হলে অবশ্যই তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন। এ সময় ড. মোমেন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ব্লিনকেনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেনকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।