বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বিশেষ পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সরাসরি বাড়ানো বা কমানোর ক্ষমতা সরকারের কাছে আনতে আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২২ জারি করেছেন।
সংসদ অধিবেশন না থাকলে জরুরি কোনো প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করেন।পরে সংসদের প্রথম বৈঠকে তা উপস্থাপন করা হয়।
আগের আইনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানো বা কমানোর এই ক্ষমতা ছিল বিইআরসির। এটি সংশোধনীর কারণে বিইআরসির পাশাপাশি সরকার ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে’সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ বা সমন্বয় করতে পারবে।
২০০৩ সালের প্রণীত আইনের ৩৪ ধারায় সংশোধনের পাশাপাশি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। ওই ধারায় বলা হয়েছে- ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে, জনস্বার্থে, কৃষি, শিল্প, সার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গৃহস্থালী কাজের চাহিদা অনুযায়ী এনার্জির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এর উৎপাদন বৃদ্ধি, সঞ্চালন, পরিবহণ ও বিপণনের নিমিত্ত দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে বিদ্যুৎ উৎপাদন, এনার্জি সঞ্চালন, মজুতকরণ, বিপণন, সরবরাহ, বিতরণ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনর্নির্ধারণ বা সমন্বয় করিতে পারবে।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার মুখে এ আইন সংশোধনের প্রস্তাব গত সোমবার অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে আলোচনা হয়েছে ফুয়েলসহ অন্যান্য জ্বালানি বেসরকারিভাবে আমদানির ব্যবস্থা করা যায় কিনা। এখন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ছাড়া কেউ জ্বালানি বাজারজাত করতে পারে না। সাধারণত ক্রুড অয়েল রিফাইন করে ৪১ থেকে ৪২ শতাংশ রিফাইন্ড অয়েল হয়। রিফাইন্ড অয়েলটা তারা বিপিসির কাছে দিয়ে দিলে অথবা তারা সরাসরি বাজারজাত করতে পারে কিনা, সেটাও দেখতে হবে। তবে যেটা করতে হবে সেটা হলো- ক্রুড অয়েল যারা আনবে, বিটুমিনসহ অন্যান্য যে উপজাত পণ্য আসবে এগুলো হয় তারা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করবে অথবা বাইরে রপ্তানি করবে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, রিফাইন্ড অয়েলের বিষয়ে দুটি অপশন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। হয় তারা বিপিসির কাছে বিক্রি করে দিতে পারে বা বিপিসি তাদের অন্য কোনো মেকানিজম কিংবা আইন সংশোধন করে বিক্রির অনুমতি দিতে পারে। এক্ষেত্রে বিএসটিআইকে মনিটরিং রাখতে হবে যেটা রিফাইন্ড হলো সেটা আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য কিনা, তা জানার জন্য। এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আলোচনায় রাখতে বলা হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে যেতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বর্তমানে তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এক্ষেত্রে কিছু জটিলতা থেকে যায়। যেমন ৯০ দিন পর্যন্ত তারা সিদ্ধান্ত না দিয়ে থাকতে পারে। কারণ আইনে বলা আছে, বিইআরসি ৯০ দিনের মধ্যে সব শুনানি সম্পন্ন করে সিদ্ধান্ত দেবে। অনেক সময় আমাদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজন আসে। তখন সেটা তারা তাৎক্ষণিকভাবে করতে পারে না। এজন্য সংশোধনী আনা হয়েছে। এখন থেকে সরকার প্রয়োজনবোধে এই ট্যারিফ নির্ধারণ করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, এখন থেকে মন্ত্রণালয় যে কোনো সময় তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করতে পারবে।
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দাম বাড়াতে বা কমাতে পারবে। বিইআরসি ৯০ দিন সময় নিয়ে শুনানি সম্পন্ন করে। অনেক সময় দাম কমে গেলে সেটা কার্যকর করতেও ৯০ দিন সময় লেগে যায়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকার হস্তক্ষেপ করে একটা নোটিফিকেশন দিয়ে দাম কমিয়ে নিয়ে আসতে পারবে। তবে স্বাভাবিকভাবে দাম সমন্বয়ের কাজ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনই করবে। শুধুমাত্র বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করবে।