বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রাজশাহীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পান চাষ। জেলায় চার হাজার ৪৯৯ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে পানের গড় ফলন ১৬ দশমিক ৯৩ মেট্রিক টন। এতে জড়িত জেলার ৭২ হাজার ৭৬৪ কৃষক। বছরে উৎপাদিত পানের দাম এক হাজার ৮৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। একইভাবে সাতক্ষীরায় চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমের চাষ হচ্ছে। আমচাষি রয়েছেন ১৩ হাজার। অর্থনীতিতে এই দুই জেলায় পান ও আম বড় ভূমিকা রাখায় রাজশাহী জেলায় পান এবং সাতক্ষীরা জেলায় আম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গত ২৪-২৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসক সম্মেলনে রাজশাহী ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের প্রস্তাব আমলে নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় কার্য অধিবেশনে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলায় পান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব করেন। একইভাবে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকও কৃষি ইনস্টিটিউটের অধীনে একটি আম গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব করেন।
সভায় বরিশালের জেলা প্রশাসক জানান, কৃষি পুনর্বাসনে সয়াবিন ফসল অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। ভোলা সদর খাদ্যগুদামের জন্য স্থায়ী জেটিঘাট নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে এবং বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর স্মৃতি জাদুঘর রক্ষায় জরুরি উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব করেন তিনি।
নেত্রকোনা এবং সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক হাওর এলাকার জন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক কাক্সিক্ষত জাত উদ্ভাবন এবং মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে বলে প্রস্তাব দেন।
সিলেট অঞ্চলের বিপুল পরিমাণ অনাবাদি কৃষিজমিকে চাষাবাদের আওতায় আনতে প্রকল্প গ্রহণ করার প্রস্তাব করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক। মহানন্দা নদীতে পন্টুন স্থাপন করে পানি উত্তোলনপূর্বক ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার এবং পরিবেশ উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক। নীলফামারী জেলায় একটি সরকারি হর্টিকালচার সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাব করেন নীলফামারীর জেলা প্রশাসক। বোরো মৌসুমে ২৩ শতাংশ জমিতে চাষ হয়। এটি ৫০ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব করেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার।
এই অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মো: আব্দুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব সবসময় থাকবে। খাদ্যনিরাপত্তা সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। আগের তুলনায় দেশে সব রকমের খাদ্যশস্য উৎপাদন বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। যন্ত্র ও প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক কৃষির মাধ্যমে বাণিজ্যিক কৃষির বিস্তার সরকারের লক্ষ্য। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি পার্বত্য জেলাগুলোতে কাজুবাদাম, কফি প্রভৃতি ফসল উৎপাদনে আরো জোর দেয়া এবং দেশের সব অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার নির্দেশনা দেন।
সভায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ৯টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। স্বল্পমেয়াদি সিদ্ধান্তগুলো হলো, দেশের সব অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার উদ্যোগ নিতে হবে, হাওর এলাকায় ধান মাড়াই ও সংরক্ষণের জন্য থ্রেসিংফ্লোরসহ শেড নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে। মধ্যমেয়াদি সিদ্ধান্তগুলো হলো, হাওর এলাকার জন্য স্বল্প জীবনকালের ধানের জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পার্বত্য জেলাগুলোয় কাজুবাদাম, কফি প্রভৃতি ফসল উৎপাদনে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যন্ত্রনির্ভর আধুনিক কৃষি ও বাণিজ্যিক কৃষি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে। মহানন্দা নদীতে পন্টুন স্থাপন করে পানি উত্তোলনেরপূর্বক ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার এবং পরিবেশ উন্নয়নের প্রস্তাবটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তগুলো হলো, রাজশাহী জেলায় পান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সাতক্ষীরা জেলায় আম গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে। নীলফামারী জেলায় হার্টিকালচার সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।