বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : পাহাড়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পর চলমান যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে সশস্ত্র কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) নেতা চেওসিম বমকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গত শনিবার রাতে বান্দরবান জেলার শহরতলি শ্যারণপাড়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। চেওসিম বম কেএনএফের বান্দরবান জেলার প্রধান সমন্বয়কারী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কেএনএফ প্রধান নাথান বমের ঘনিষ্ঠদের একজন।
গতকাল রোববার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক কর্নেল সাজ্জাদ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শনিবার রাতে চেওসিম বমকে শ্যারণপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি এয়ারগান উদ্ধার করা হয়। চেওসিমের বাড়িটি একতলা ভবন। বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টার পর আমরা কোনোভাবে বাড়িতে প্রবেশ করতে পারি। বাড়ির বিভিন্ন কক্ষে খোঁজার পর তাকে না পেয়ে অন্যান্য জায়গায় খোঁজার চেষ্টা করি। পরে বাড়ির ভেতরে একটি স্টিল স্ট্রাকচার (স্টিলের সিন্দুকের মতো) ভেঙে তাকে বের করি।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব অধিনায়ক বলেন, পার্বত্য এলাকায় ছয়টি নৃগোষ্ঠী নিয়ে ২০১৪-১৫ সালের দিকে কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন (কেএনডিও) নামে একটি সামাজিক সংগঠন করা হয়। চেওসিম বম ওই সংগঠনের একজন প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। যার ফলে এনজিও থেকে কেএনএফ প্রতিষ্ঠা করে। চেওসিম বমের সঙ্গে নাথাম বমের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। নাথান প্রায়ই তার বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। নাথান বম কোথায় আছেন, তা আমরা জানার চেষ্টা করছি। পার্বত্য এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে না আসা পর্যন্ত আমাদের অভিযান চলবে।
জঙ্গি সংগঠন আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারে ও তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের পরামর্শও দিয়েছেন চেওসিম। তার বাড়িতে বসে এ পরিকল্পনা করা হয়। এ ছাড়া কুকি-চিনের অন্যান্য সদস্য বান্দরবানে যখন আসে, তখন তাদের নিজের ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে রাখতেন চেওসিম।
র্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, কিছুদিন আগে রুমা-থানচিতে সন্ত্রাসী ঘটনার আগে কিছু সদস্য তার বাসায় এসেছিল। হয়তো তখনই এসবের পরামর্শ ও পরিকল্পনা হয়েছিল।
সূত্র বলছে, চেওসিম বমের শ্যারণপাড়ার বাড়িতে কেএনএফ প্রধান নাথান বমের সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠী আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রধান সমন্বয়কারী শামীম মাহফুজেরও বৈঠক হয়েছিল। ২০২১ সালের শেষে ও ২০২২ সালের প্রথম দিকে এই বৈঠক হয়। তার বাড়িতেই কেএনএফের সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠী শারক্বীয়ার চু্ক্তি হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গল ও বুধবার বান্দরবানের রুমা এবং থানচি উপজেলার কৃষি ও সোনালী ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা চালায় সশস্ত্র কেএনএফ সদস্যরা। তারা ব্যাংক থেকে টাকা লুট, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর এবং সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজারকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। লুট করে বেশকিছু অস্ত্র ও গুলি। এরপর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বান্দরবানের আলীকদমে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি যৌথ চেকপোস্টে হামলা চালায় অস্ত্রধারীরা। ওই রাতেই বান্দরবানের থানচি বাজার এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কেএনএফ সদস্যদের প্রায় এক ঘণ্টা গোলাগুলি হয়।
এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পর কঠোর হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার ও আস্তানা ধ্বংসে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পাহাড়ি এলাকায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। এ অভিযানের মধ্যেই বহুল আলোচিত কেএনএফের অন্যতম শীর্ষ নেতা চেওসিমকে গ্রেপ্তারের খবর দিল র্যাব।