বঙ্গবন্ধু রেল সেতু এখন দৃশ্যমান

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ রেলওয়ের মেগা প্রকল্প অনন্য বৈশিষ্ট্যের স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণকাজ এখন শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে সেতুর উভয় প্রান্তে রেলওয়ে স্টেশন আধুনিকায়নের কাজসহ রেল ট্র্যাক লিঙ্কিং, (সংযোগ) ব্যালান্সিং (ভারসাম্য রক্ষা)-সহ নানা খুঁটিনাটি কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।

ইতোমধ্যেই যমুনা নদীর গভীরতার সঙ্গে যুদ্ধ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর ওপর সুপার স্ট্রাকচার স্প্যান স্থাপনের পর সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল প্রান্তের সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। নদীর ওপর চার দশমিক আট কিমি সেতু এখন পুরোটাই দৃশ্যমান। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে চলাচলকারী ট্রেন ও বাস-ট্রাকসহ ছোট-বড় নানা যানবাহনের যাত্রীরা তা প্রতিদিন প্রত্যক্ষ করছেন।

রেল সেতু দিয়ে কবে নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হবে তা নিয়েই মূলত সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। আগ্রহও বাড়ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মেগা প্রকল্প রেল সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত হবে উত্তরাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের এই রেলসেতু।

ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে আনা বিশেষভাবে তৈরি মরিচারোধী বড় বড় স্টিলের কাঠামো দিয়ে তৈরি করা স্প্যান সেতুর ওপর বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে দেশে প্রথমবারের মতো ব্যবহার হচ্ছে জাপানি আধুনিক ডাইরেক্ট রেল ফ্যাসেনার প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিতে স্প্যানের ওপর সরাসরি বসানো হচ্ছে রেললাইন। এতে সেতুর ওপর রেললাইনের স্থায়িত্ব বাড়ার পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কম হবে।
এখন উভয় প্রান্তের রেলস্টেশন আধুনিকায়নসহ রেল সেতুতে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণও শেষের দিকে। সেতুর উভয় প্রান্ত অর্থাৎ টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর প্রান্ত এবং সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ প্রান্তে রেলস্টেশনের আধুনিকায়ন কাজ করছেন প্রকল্পের নানা পর্যায়ের প্রকৌশলী এবং শ্রমিকেরা।

বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন এবং বাস-ট্রাকসহ নানা যানবাহনে চলাচলরত যাত্রীরাও উৎফুল্ল। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে প্রায় তিন কিমি এলাকাজুড়ে রেল ট্র্যাকসহ নানা ধরনের কাজ ইতোমধ্যেই শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি শেষ হয়েছে।
রেল মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু রেলসেতুটি চালু হলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সারাদেশের রেলযোগাযোগ ও রেলওয়ে পরিবহন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। অভ্যন্তরীণ রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি ট্রান্সএশিয়ান রেলপথে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জন করবে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার হবে।
যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে দেশের দীর্ঘতম ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের সেতু নির্মাণ কাজ ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে ৭২ ভাগ অর্থ ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। জাপানের আইএইচআই, এসএমসিসি, ওবায়শি করপোরেশন, জেএফই ও টিওএ করপোরেশন এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তিনটি প্যাকেজে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্র্রির প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ইউসুফ সূর্য জনকণ্ঠকে জানান, এটি ডাবল লাইনের হওয়ায় একইসঙ্গে একাধিক ট্রেন চলতে পারবে। এতে এ অঞ্চলে ব্যবসার প্রসার ঘটবে। এই রেল সেতু নির্মাণ শেষ হলে আন্তঃদেশীয় যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি চলাচল করতে পারবে।

এতে আমদানি-রপ্তানি খরচ কমে যাওয়াসহ বঙ্গবন্ধু সেতু ও মহাসড়কের ওপর চাপ কমবে। একইসঙ্গে উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সহজ হবে, কমবে পরিবহন খরচ, যা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সংসদ সদস্য ড. জান্নাত আরা হেনরী বাংলাদেশ রেলওয়ের মেগাপ্রকল্প যমুনা নদীর ওপর রেল সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে বলেছেন- তার নাড়িপোতা সয়দাবাদ ইউনিয়নে রেল সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন- রেল সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুততম সময়ে শেষ হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু চালু হওয়ার পর অপর প্রান্তের ট্রেনকে পারাপারের জন্য রেল থামিয়ে বসে থাকতে হবে না। রেল সেতুটি চালু হলে বঙ্গবন্ধু সেতুর ঝুঁকিও হ্রাস পাবে। এটি হবে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের মেলবন্ধন। এই রেল সেতু নির্মাণ শেষ হলে আন্তঃদেশীয় যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি চলাচল করতে পারবে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে সড়কপথের পাশাপাশি রেলপথেও পণ্য পরিবহন সহজতর হবে এবং খরচও সাশ্রয় হবে। উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনবে।

অশ্রেণীভুক্ত
Comments (0)
Add Comment