৯০ এর দশকে প্রিজানার্স নামে একটি রক ব্যান্ডের আত্মপ্রকাশ ঘঠে। সেই ব্যান্ডের মূল ভোকালিস্ট হিসেবে “রক্তের নেশায়” শিরোনামে প্রথম এ্যালবাম বাজারে আসে৷ এবং ব্যাপক সাড়া ফেলে এই অ্যালবামটি। বলছিলাম সেই অ্যালবামের গীতিকার সুরকার এবং কণ্ঠশিল্পী মিটুল হকের কথা।
১৯৯০ সালের পরপরই মিটুল আমেরিকাতে তাঁর পরিবারের কাছে চলে যান৷ তারপর দীর্ঘ একটা বিরতি নিয়ে ২০১৬ সালে তিনি আবার ফিরে আসেন গানে এবং ২০১৭ সালে প্রকাশ করেন এ্যালবাম অন্য ভূবন।
ব্যাক্রিমধর্মী গানের কথা আর গায়কী স্টাইলের জন্য শ্রোতাদের মনে শক্ত একটা স্থান করে নিয়েছেন তিনি।
ব্যাস্ততার মাঝে গান করাটা তাঁর জন্য চ্যালেঞ্জিং হলেও শ্রোতাদের জন্য নিয়মিত গান পরিবেশন করে যাচ্ছেন । এছাড়াও তিনি বিভিন্ন দেশে আয়োজিত কনসার্টে পারফরম্যান্স করে যাচ্ছেন নিয়মিত। দর্শকদের ভালোবাসায় তিনি গানের জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন এক দেশ থেকে আরেক দেশ। এই রকস্টারের সঙ্গে আজকে আমাদের কথা বলার সুযোগ হয়েছে।
প্রশ্নঃ আপনি দীর্ঘ বছর ধরে আমেরিকাতে বসবাস করছেন, আপনার কাছে ঈদ কোথায় আনন্দের হয়?
মিটুল হকঃ আমার পরিবারের সবাই এখানে, সবাই একসঙ্গে থাকতে পারার আনন্দটাই অন্য রকম। তবে এখানে ঈদের আনন্দ তেমন একটা টের পাই না। বাংলাদেশে যেমন ঈদ নিয়ে সবার মধ্যে হইচই একটা ব্যাপার, উচ্ছ্বাস—সেটা এখানে পাই না। দেশের টান, মনের টান—এটা একেবারেই অন্য রকম। আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা, সংগীতজীবন, মানুষের ভালোবাসায় মিটুল হয়ে ওঠা—সবই তো বাংলাদেশ থেকেই শুরু। তাই যতই আমি দেশের বাইরে থাকি না কেন, আমার কাছে ঈদের আনন্দ দেশেই সবচেয়ে বেশি।
প্রশ্নঃ ছোটবেলার ঈদের কথা মনে পড়ে?
মিটুল হকঃ ভীষণ রকম মনে পড়ে। বড়দের সালাম করতাম। সালামি নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতাম। সালামির টাকা দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে পার্কে ঘুরে বেড়াতাম। ঈদের দিনে সালামি পাওয়ার পর খুব ভালো লাগত। এখন তো সালামি দিতে আনন্দ পাই।
প্রশ্নঃ ঈদে মায়ের হাতের বিশেষ কোন খাবার মিস করেন?
মিটুল হকঃ পৃথিবীর সব সন্তানের কাছেই তার মায়ের হাতের খাবার অমৃত। আমার কাছে তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। মায়ের হাতের রান্নাই বেশি মিস করি আমি। কোরবানি ঈদে আমার মা যে মাংস আর সেমাই রান্না করতেন তার ঘ্রান আজও পাই। আমার মায়ের হাতে নিখুঁত ঈদের রান্নায় সব রকম মসলার পাশাপাশি অন্যরকম একটি মসলা ছিল। আর সেটি হলো ভালোবাসা।
প্রশ্নঃ গরু’র হাট নিয়ে কোন স্মৃতি আমাদের সঙ্গে সেয়ার করবেন?
মিটুল হকঃ ছোটবেলায় বড়দের সঙ্গে হাটে যেতাম। হাটে গিয়ে নিজেদের কোরবানির পশু প্রছন্দ করে কিনতাম, সেটার মধ্যে আলাদা একটা আনন্দের অনুভূতি আছে। সেটা এখানে আর পাইনা। দেশে আর নিউইয়র্ক শহরে কোরবানি দেওয়ার মধ্যে পার্থক্য অনেক। ছোটবেলায় কোরবানি শেষে মাংস নিয়ে গরিব, মিসকিনদের মাঝে বিতরণ করা আর নিজেদের আত্মীয় বাড়ি নিয়ে যাওয়া ছিলো আরেকটা উৎসব। আর এখানে ফকির-মিসকিনদের ওইভাবে দেওয়ার সুযোগ নেই। গরিব যেহেতু এখানে তেমন নেই, তাই সেই মাংস ভাগাভাগি করে আত্মীয় , পরিচিত বা বন্ধুর বাড়িতে পাঠিয়ে কোরবানির পর্ব শেষ করতে হয়।
প্রশ্নঃ ঈদে ভাবীর হাতে কোন রান্না আপনার সবচেয়ে প্রিয়?
মিটুল হকঃ আপনাদের ভাবী শুধু ঈদেই নয়,ঈদ ছাড়াও সে নানান রকমের রান্না করতে প্রছন্দ করে৷ ওর হাতের অনেক রেসিপি আমার ভীষণ প্রিয়৷ তবে, বিশেষ করে ওর হাতের মাংসের রেসিপিটা আমার অত্যাধিক প্রিয়। এখানে ওর রান্নার বেশ সুনাম রয়েছে।
প্রশ্নঃ ঈদে কিভাবে সময় কাটে আপনার?
মিটুল হকঃ বাচ্চাদের নিয়ে ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ করি। পরিবার নিয়ে বাইরে কোথাও ঘুরতে যাই। আত্মীয় – স্বজন আর বন্ধুরা একসঙ্গে মিলিত হয়ে একটু ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করি। এইতো, এইভাবেই চলে যায় ঈদের দিন।
প্রশ্নঃ আপনার গান নিয়ে বর্তমান ব্যস্ততা কেমন?
মিটুল হকঃ এইতো কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডাতে গান শুনিয়ে আসলাম। আমাকে প্রায়ই অনেক দেশ ভ্রমন করতে হয় গান শোনানোর আমন্ত্রনে। তাছাড়া ভিন্ন চ্যানেলের লাইভ প্রোগ্রাম তো আছেই৷ সবমিলে ব্যস্ততার মাঝে যতটুকো সময় পাই এই সংগীতেই ডুবে থাকি।
প্রশ্নঃ আপনার ফ্যানদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
মিটুল হকঃ ফ্যানদের উদ্দেশ্যে বলবো, আপনারদের ভালোবাসায় আজও আমি গান শুনিয়ে যাচ্ছি। আপনারা আমার সঙ্গে থাকবেন, যেভাবে ছিলেন সবসময়। আপনাদের সবার ঈদ পরিবারের সঙ্গে কাটুক অনেক আনন্দে। ঈদ মুবারক ।