পাবনা প্রতিনিধি : পাবনায় মাত্র ৬ দিনে আলাদা আলাদা ঘটনায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে । দেশের মানুষ করোনাভাইরাস নিয়ে যখন উদ্বিগ্ন, আতংক আর উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে । ঠিক সেই সময়ে দেখা দিয়েছে পাবনায় আইন শৃংখলার মারাত্বক অবনতি। করোনাকালেই নতুন করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্ষণ, অপহরণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন, হত্যাসহ নানা অনাকাংখিত ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, পহেলা জুন থেকে ৬ জুন গেল ৬ দিনে পাবনা জেলায় প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে, গুলিতে, মারপিটে, বজ্রপাত ও কীটনাশক পান এবং ট্রেন লাইনে রাস্তা পারাপারের সময়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা ও আতাইকুলা থানার মধুপুরে পৃথক ঘটনায় দুইজনকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, সদর উপজেলার ভাড়ারা খাঁ পাড়া গ্রামের কালু খাঁর ছেলে হুকুম আলী খাঁ (৬৫) ও আতাইকুলা থানার মধুপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে মজনু মিয়া (৪০)। শনিবার সকালে জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের নতুন রুপপুর গ্রামের মৃত শাহাদত হোসেনের ছেলে জহুরুল ইসলাম (৪০) এর লাশ নিয়ে বাড়িতে হাজির হয়েছেন তারই তৃতীয় স্ত্রী।
এটি পরিকল্পিত হত্যা নাকি আত্মহত্যা সেটি এখন নিশ্চিত নন পুলিশ। পাবনার ঈশ্বরদীতে সেভেন আপের বোতলে রাখা কীটনাশক ভুল করে পান করে রাহিমা খাতুন (৮) ও খাদিজা খাতুন (৪) নামে আপন দুই বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাতে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছোট বোন খাদিজা এবং বৃহস্পতিবার বিকালে বড় বোন রাহিমা মারা যায়। নিহতরা উপজেলার পৌর এলাকার অরণকোলা গ্রামের অটোরিক্সা চালক বাবু মন্ডলের মেয়ে। গেল সোমবার জেলার সাঁথিয়া উপজেলার মানিকতলায় দূর্বৃত্তদের অস্ত্রাঘাতে খুন হয়েছেন অন্তর হোসেন (২৫)। সে উপজেলার আর-আতাইকুলা ইউনিয়নের গাঙ্গহাটি গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আব্দুর রশিদ (৬০) নামের এক ব্যক্তি ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন লাইন পারাপারের সময়ে ট্রেনে কাটা পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার পার্শ্ববর্তী উত্তর লালপুরের আয়েজ উদ্দিনের ছেলে। শুক্রবার দুপুরে পুলিশ জেলা সদরের পৌর এলাকার দিলালপুর মহল্লার একটি বাসা বাড়ি থেকে একই পরিবারের তিন জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। নিহতরা হলেন; রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার (৬৪), তার স্ত্রী ছুম্মা খাতুন (৫০) ও মেয়ে সানজিদা খাতুন (১৪)। ডাকাতরা বাড়িতে প্রবেশ করে কয়েকদিন আগেই মালামাল লুট করে তাদের হত্যা করে পালিয়ে গেছে বলে পুলিশের ধারণা। এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বৃষ্টির সাথে বজ্রপাতে জেলার ৫ উপজেলায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা চকপাড়া গ্রামের লবা’র ছেলে হাশেম (৩৭), সুজানগর উপজেলার শানিতপুরের দুলাই গ্রামের রওশন আলীর ছেলে জলিল আলী সরদার (৫০), চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নের কান্নিগ্রামের ইউনুছ আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম (২৫), আতাইকুলা থানার তেলেগ্রামের মনিরুজ্জামান মনি (১৯) এবং সাঁথিয়া উপজেলার ধুলাউড়ি গ্রামের আফসার আলীর স্ত্রী রুবিয়া খাতুন (৩৮) মারা যান।বজ্রপাতে নিহতরা মাঠে কৃষি কাজ, ঘুড়ি উড়ানো ও মরিচ উঠানোর সময়ে মারা যান।
এছাড়াও সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কে পথ আটকিয়ে মোটা অংকের টাকা ছিনতাই, ডাকাতি, চুরি সংঘটিত হয়েছে। পাশাপাশি স্কুল ও কলেজের ছাত্রীকে ধর্ষণ, গণধর্ষণ এবং অপহরণের ঘটনাও রয়েছে। বেড়ের আত্মহত্যার ঘটনা। এলাকায় আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারে পাল্টাপাল্টি হামলা, মামলা ও বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগও রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জেলা পুলিশের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার সাথে আলাপকালে তারা বলেন, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সর্বদা নিয়োজিত। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। সেগুলো অধিকতর তদন্ত করে ঘটনা ক্লু উদঘাটনে কাজ করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। খুব শীঘ্রই অনাকাংখিত ঘটনার বিস্তারিত গণমাধ্যমে জানানো হবে । এ বিষয়ে আগামীকাল পাবনা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান ডিএসবি ডিআই-১ পাবনা ।