১৯৯৮ সালের ২৮ জুন আহমেদ তফিজ উদ্দিন সংসদ সদস্য থাকাকালীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তাঁর ৪০ (চল্লিশ) দিনের স্মরণ সভায় জননেত্রী শেখ হাসিনা সাতবাড়িয়ায় আহমেদ ফিরোজ কবিরের বাড়িতে শোক সন্তপ্ত পরিবারকে সহানুভূতি জানান এবং সাতবাড়িয়া কলেজ মাঠে স্মরণ সভায় বক্তৃতায় বলেন,”আপনারা ফিরোজ কবিরের সাথে থাকেন আমি ফিরোজ কবিরকে দেখব।”
এরপর থেকে ফিরোজ কবির আজ অবধি জনগণের সাথেই আছেন। আহমেদ ফিরোজ কবির ১৯৬৩ সালের ২৬ জুলাই পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামে এক রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আহমেদ তফিজ উদ্দিন ও মাতা ফিরোজা বেগম, তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ফিরোজ তৃতীয় এবং ভাইদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ।
পিতা আহমেদ তফিজ উদ্দিন (১৯২৯-১৯৯৮) ছিলেন পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদগস্য (১৯৭০-৭৩,) বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য (১৯৭৩-৭৫, ১৯৯৬-২০০১), সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ১৯৮৫,১৯৯০। সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাচিত এজিএস এবং ভারতের কেচুয়াডাঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ। ফিরোজ কবিরের মাতা ফিরোজা বেগম ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিবেদিত প্রাণ প্রধান শিক্ষিকা।
আহমেদ ফিরোজ কবির গ্রামের সরকারি প্রাথমিক স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করেন। তিনি সাতবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮ সালে এস.এস.সি এবং রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯৮০ সালে এইচ.এস.সি পাস করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৮৫) ফিন্যান্সে এ স্নাতক (অনার্স) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৫ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৮৭) ফিন্যান্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।
রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম হওয়ার কারণে ছোট বেলা থেকে রাজনীতির সাথে জড়িত হন ফিরোজ কবির। পিতা পাবনা জেলার একজন নিবেদিত প্রাণ ও জননন্দিত নেতা হওয়ার সুবাদে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে জেলা আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের আগমন ঘটে তাদের বাড়িতে। ছোট বেলা থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচীতে পিতার সঙ্গে অংশগ্রহণ, বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় পোস্টার লাগানো, মিছিল মিটিং এ অংশগ্রহণ করতেন। রাজশাহী কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন কালে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন।
জিয়া ও এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও সাহসী ভূমিকা পালন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করে সরকারী চাকুরি গ্রহণে বিভিন্ন সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি নিজ এলাকায় ফিরে আসেন এবং পিতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত হন। পিতা আহমেদ তফিজ উদ্দিন নিজে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে ছেলে ফিরোজ কবির কে সাংগঠনিক দায়িত্ব না দিয়ে অন্যদের মূল্যায়ন করতেন। তিনি কখনও নেতৃত্ব পেয়ে পারিবারিক গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ করতে চান নাই। তাই আহমেদ ফিরোজ কবিরের যথেষ্ঠ রাজনৈতিক যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাকে দলীয় কোন সাংগঠনিক পদ পদবী দিতেন না।
১৯৯৮ সালে পিতার মৃত্যুর পর সুজানগর উপজেলা ও পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ আহমেদ ফিরোজ কবিরকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নির্বাচিত করেন । ২০০৯ সালে তিনি সুজানগর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার নিদের্শক্রমে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে অংশগ্রহণ করে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে নিজেকে পিতার মতো একজন আদর্শবান ও সৎ নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে প্রাণান্ত চেষ্ঠা করেন। উপজেলার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে গড়ে তোলেন নিবিড় আত্মিক সম্পর্ক । অতি সাধারণ বেশে চলাফেরা করা তার চারিত্রিক গুনাবলীর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। সাধারণ মানুষের কোন সমস্যা হলে তিনি তাদের পাশে দাঁড়ান এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় রাজনৈতিক সংকটকালে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে সুধাসধনে জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন।
আহমেদ ফিরোজ কবির রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত আছেন। তিনি সাতবাড়িয়া উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি (২০০৬-২০০৯), তিনি সাতবাড়িয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি (২০০৯-২০১৭), সাতবাড়িয়া ডিগ্রী কলেজ পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান বিদ্যুৎসাহী সদস্য (২০১৫ সাল থেকে)। তিনি রাইপুর বঙ্গবন্ধু স্মৃতিপরিষদ (১৯৯৭), শহীদ লোকমান স্মৃতিপরিষদ (১৯৮৩) এবং আহমেদ তফিজ উদ্দিন স্মৃতি পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা।
সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কায় নির্বাচন করে বিপুল ভোটে ৬৯,পাবনা ২ (সুজানগর-বেড়া) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এক বছর পেরিয়ে গেছে,সুজানগর-বেড়াবাসীর হৃদয়ের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। দল,মত,নির্বিশেষে সকলের পছন্দের এমপি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, দলের কর্মীর বাড়ির পারিবারিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সকল রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে ছুটে বেড়িয়েছেন। নেত্রীর ভালবাসায় পেয়েছেন,দুটি মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ।
তবে, আমরা সুজানগর-বেড়াবাসীর প্রত্যাশা মাননীয় নেত্রী আমাদের নেতা জনাব আহমেদ ফিরোজ কবির’কে কোনো মন্ত্রনালয়ের পূর্ন দায়িত্ব প্রদান করবেন। আমরা জননেতা আহমেদ ফিরোজ কবির’কে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই। পিতার দেখানো পথে, নীতি-আদর্শ-সততায় বিন্দুমাত্র ছাড় না দেওয়া জনতার ফিরোজ কবির দীর্ঘজীবী হোক, এই কামনা।