পাবনা প্রতিনিধি : আট বছর পর ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলন ঘিরে ইতিমধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের দু’টি গ্রুপের মধ্যে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। দুই গ্রুপ থেকেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। দুই পক্ষের মুখোমুখি অবস্থান আতংক ছড়িয়েছে জনমনে। দলের আভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব এবার প্রকাশ্যে আসায় উৎকন্ঠায় থাকা তৃণমুলের নেতাকর্মীদের দাবি, শান্তিপূর্ন পরিবেশে হোক সম্মেলন।
দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১১ জুন অনুষ্ঠিত হয় ঈশ^রদী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। ৮ বছর পর এবারের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহের পাশাপাশি রয়েছে আতংক আর উৎকন্ঠা। ইতিমধ্যে সম্মেলনে দলের দুই গ্রুপ থেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম। দুই পক্ষ তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর দেখা দিয়েছে উত্তেজনা।
একদিকে স্থানীয় সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাসের পক্ষে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নায়েব আলী বিশ্বাস এবং সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ মিন্টু।
অপরদিকে, সাবেক সাংসদ ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী পরিবারের পক্ষে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন, বর্তমান ঈশ্বরদী পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইছাহক আলী মালিথা এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্য সাকিবুর রহমান শরীফ কনক।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর দলীয় কার্যালয়ে বর্ধিত সভা ঘিরে দুই পক্ষ শক্তি প্রদর্শণের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের শান্ত করে। এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বাসভবন থেকে প্রার্থীদের নাম ঘোষণার দিনে সংঘর্ষের আশঙ্কায় ব্যাপক দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সম্মেলন ঘিরে দলের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবার এসেছে প্রকাশ্যে। নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে চাপা শঙ্কা। রয়েছে হুমকি ধামকীর অভিযোগ।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাকিবুর রহমান শরীফ কনক বলেন, সম্মেলন ঘিরে আমাকে ও আমার কর্মীদের নানাভাবে হুমকি ধামকী দেয়া হচ্ছে। প্রার্থী ঘোষণার দিন কোনো কারণ ছাড়াই আমার বাড়িতে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আমরা নেতাদের প্রতি আহবান জানাবো তৃণমূলের ভোটের মাধ্যমে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্মেলন করা হোক।
সভাপতি প্রার্থী পৌর মেয়র ইছাহক আলী মালিথা বলেন, দলে কোনো বিভক্তি নেই, তবে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। একটা বড় দল, উৎসাহ বেশি। সম্মেলন শেষে সব ঠিক হয়ে যাবে। দলের কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতৃবৃন্দ ভোটের মাধ্যমে হোক আর কেন্দ্রে গিয়ে হোক, যেভাবে নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন আমরা তাতেই রাজি।
অপরপক্ষের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ মিন্টু বলেন, ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি মানুষের কাছে আস্থা অর্জন করেছে। তাই দীর্ঘদিন পর সম্মেলন ঘিরে সবার উৎসাহটাও বেশি। সম্মেলনে একাধিক প্রার্থী থাকবে, তবেই না উৎসবমুখর পরিবেশ হবে। আশা করি ভালভাবে সম্মেলন হবে।
পাবনা-৪ আসনের সাংসদ নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, আমি বিশ্বাস করিনা যে এখানে কোনো বিভক্তি আছে। সম্মেলনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী রয়েছে। দলের নেতারা ঠিক করবেন কাদের কাঁধে নেতৃত্ব তুলে দেবেন। এ নিয়ে বিচলিত বা আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। সম্মেলন সফল ও সুষ্ঠু হবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহুরুল হক পুনো বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগ দুর্বল নয়, বরং আরো শক্তিশালী হবে। যারাই নেতৃত্বে আসুক না কেন, দলকে সামনে আরো এগিয়ে নেবেন। কোনো বিভক্তি থাকবে না। সম্মেলন শেষে সবাই একসাথে কাজ করবেন।