মেহেদী হাসান আকন্দ: গৃহস্থালির পুরাতন, পরিত্যাক্ত জিনিসপত্র সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করছে ভাঙ্গারী ফেরিওয়ালারা। পরিত্যাক্ত পুরাতন ইলেকট্রনিকস পণ্য, বোতল, প্লাস্টিকের জিনিসপত্র, পুরাতন রড, টিন, লোহা, স্টিল ও তামার পুরাতন দ্রব্যাদি সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণরোধে তারা নিরব ভূমিকা রাখছে।
সারাদেশের ন্যায় নেত্রকোণা জেলা শহরেও ভাঙ্গারী ফেরিওয়ালাদের এ কার্যক্রম চোখে পড়ার মতোই। এ পেশায় নেত্রকোণা শহরেই প্রায় শতাধিক ফেরিওয়ালা জড়িত। শহর ঘুরে দেখা যায়, পশ্চিম কাটলীর মানিক মিয়া, উকিল পাড়ায় রুকু মিয়া, বারহাট্টা রোডে রফিকুল ইসলাম, রাজুর বাজারে আনোয়ার হোসেন, ইসলামপুর রোডে রহমত আলী, পূর্ব কাটলীর আব্দুল মান্নান, বারহাট্টা রোডে আব্দুল বাকী এবং আনন্দ বাজারে আব্দুস সালাম ভাঙ্গারী ব্যবসার মহাজন। মহাজনদের অধীনেই কাজ করে নিম্ন আয়ের দরিদ্র ভাঙ্গারী ফেরিওয়ালারা। বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মের সন্ধানে আসা দরিদ্র মানুষেরা মহাজনদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা, ভ্যান ও মাইক নিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা অবদি ঘুরে ঘুরে মাইক দিয়ে ডাক-চিৎকার করে সংগ্রহ করে গৃহস্থালির পুরাতন, পরিত্যাক্ত জিনিসপত্র। বেলা শেষে নির্দিষ্ট মহাজনের কাছেই তাদের সংগৃহিত ভাঙ্গারীর জিনিসপত্র বিক্রি করতে হয়। পুরাতন পরিত্যাক্ত জিনিস সংগ্রহ করে খুব স্বল্প আয়ের ভিতর দিয়ে অনেকটা সুখেই জীবন যাপন করছে ভাঙ্গারী ফেরিওয়ালারা।
ফেরিওয়ালা সুজন মিয়া জানান, প্রায় ৭/৮বছর ধরে তিনি ভাঙ্গারী ফেরিওয়ালার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সুজন মিয়ার স্ত্রী সেলিনা আক্তারও এই পেশায় জড়িত।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থেকে আসা আনিস বলেন, ফেরি করে ভাঙ্গারীর ব্যবসা করে সংসার চালানোর পাশাপাশি ২ছেলে-মেয়েকে পড়াশুনা করাচ্ছেন তিনি।
ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, ছোট বেলা থেকেই তিনি এই ব্যবসা করে অভ্যস্থ। অন্য কোন কাজ তিনি করতে পারেননা। লাভ কম হলেও এই ব্যবসা করেই তিনি জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
আরেক ভাঙ্গারী ফেরিওয়ালা শফিক বলেন, পেটের দায়ে এ কাজ করতাছি পুরানো প্লাস্টিক, ছেঁড়া জুতা, রাবার, লোহা-লক্কড়, তামা, পিতল, সিশা, পলিথিন ও বিভিন্ন ধরণের বোতল সারাদিন গ্রামে-গ্রামে ঘুরে কিনি। বিকালে মহাজনের নিকট বেইচা যা পাই তা দিয়ে কোনরকম সংসার চলে। তাতে প্রতিদিন তার ৩’শ থেকে ৪শ টাকা আয় হয়। তার মতে, নেত্রকোণা শহরে প্রায় শতাধিক ভাঙ্গারী ফেরিওয়ালা রয়েছে।
শফিক আরোও বলেন, ফেরিওয়ালারা ভাঙ্গারী সংগ্রহ না করলে যত্রতত্র পুরানো প্লাস্টিক, ছেঁড়া জুতা, রাবার, লোহা-লক্কড়, তামা, পিতল, সিশা, পলিথিন ও বিভিন্ন ধরণের বোতল ফেলে আর্বজনার স্তুপ হয়ে পরিবেশ দূষিত হয়ে যাবে।
নিম্ন আয়ের মানুষেরা ভাঙ্গারীর ব্যবসা করে নিজেদের জীবিকা করছে। অন্যদিকে নিরবে পরিবেশ দূষণ থেকে সমাজকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।