বিশেষ প্রতিনিধি : পাবনা সদরের মনোহরপুর বড়ব্রীজ থেকে আটঘরিয়ার তারাপাশা স্লুইস গেট পর্যন্ত খাল খননের শেষ পর্যায়ে এসে প্রভাবশালী অবৈধ দখলদারের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার।
জানা যায়, সরকারের নদী, খাল ও জোলা পুনঃখনন কাজ প্রকল্পের উপরোক্ত খাল খননের কাজ পান পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও চাটমোহর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ মাস্টারের ছেলে মেসার্স সৌরভ কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারীরা জাহিদুর রহমান মিঠু। সোয়া ১০ কিলোমিটার খাল খননে বরাদ্দ রয়েছে পৌনে তিন কোটি টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারাপাশা স্লুইস গেট থেকে বয়রা কাশিনাথপুর পর্যন্ত খাল খননে কোন সমস্যা না হলেও মনোহরপুর বড়ব্রীজ নামক স্থানে এসে দেখা দেয় বিপত্তি। স্থানীয়রা বলেন, মনোহরপুর বড়ব্রীজ সংলগ্ন পাবনা বিগ বাজারের চেয়ারম্যান প্রভাবশালী আলহাজ তরিকুল ইসলাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল পাড়ে সাড়ে ১৩ ফিট জায়গা লম্বালম্বি ভাবে দখল করে অবৈধ ভাবে মজবুত বাউন্ডারি ওয়াল ও পাকা বিল্ডিং ঘর উঠায়ে বসবাস করছেন।
সুত্র জানায়, খাল খননের প্রথম অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও দের ভুলভাল বুঝিয়ে নিজের অবৈধ জায়গা বা দিয়ে নদীর সীমানা নির্ধারণ করিয়ে নেন প্রভাবশালী অবৈধ দখলদার আলহাজ তরিকুল ইসলাম।
এই কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পরে খাল খনন করতে গিয়ে অবৈধ দখলদার তরিকুল ইসলাম তার পাশের খননকৃত মাটি জোরপূর্বক খালের অপর পাশে ফেলার জন্য ঠিকাদার ও এসকেভেটর ড্রাইভারদের সাথে অনৈতিক লেনদেন করে ম্যানেজ করে নেন। ঠিকাদার ওই মাটি নদী পাড়ের বসত বাড়ির উপর ফেললে কমপক্ষে ১৫ টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার বিষয়টি পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদকে অবহিত করলে তিনি ঘটনাস্থলে পাবনা সদরের সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রোকসানা মিতাকে পাঠান। এ সময় পাউবোর সহকারী প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন ও এই প্রকল্পের এসও নাজমুল হোসেন এবং রাজিব হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। খবর পেয়ে ঠিকাদার জাহিদুর রহমান মিঠুও ছুটে আসেন।
স্থানীয়রা জানান, সরকারি আমিন ও সার্ভেয়ার সরেজমিন পরিদর্শন করে তরিকুল ইসলামের অবৈধ দখলের সত্যতা পায়। সহকারী কমিশনার (ভুমি) রোখসানা মিতা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা নির্ধারন করে দেয়া হয়। এবং নির্ধারিত জায়গার মধ্যে মাটি ফেলার জন্য তিনি পাউবোকে নির্দেশনা দেন। তাৎক্ষণিক ভাবে পাউবোর সহকারী বানাও মোশাররফ হোসেন ঠিকাদারকে নির্দেশনা মোতাবেক কাজ সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারকে ঘুষ দিয়ে নিজের বাড়ি বাঁচিয়ে কাজ করে নিচ্ছেন তরিকুল ইসলাম। তারা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা হামিদ মাস্টার ও তার ছেলে ঠিকাদার জাহিদুল ইসলাম মিঠর সাথে ইতোমধ্যে অবৈধ দখলদার তরিকুল ইসলামের বাড়িতে গোপন বৈঠক হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার ঠিকাদারের ভেকু মাটি কাটার সময়ে তরিকুল ইসলামের বাউন্ডারী ওয়ালে ভেকুর ধাক্কা লাগলে তার বাড়ির ভিতর থেকে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয় ভেকু ড্রাইভারদের লক্ষ্য করে। মুহুর্তের মধ্যে ২ টি ভেকুর ড্রাইভার মাটি কাটা বন্ধ করে দেয়। খবর পেয়ে ঠিকাদার জাহিদুল ইসলাম মিঠু ঘটনাস্থলে এসে তরিকুল ইসলামের সাথে সমঝোতা করে আবার কাজ শুরু করে দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা, এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, তরিকুল ইসলাম এলাকায় নিজেকে প্রভাবশালী মনে করেন। তার তর্জন গর্জনে কেউ কোন কথা বলার সাহস পায় না। তারা আরও বলেন, নিজের অবৈধ দখল সম্পত্তি রক্ষা করতে আমাদের উপর জুলুম অত্যাচার শুরু করেছেন। ঠিকাদারকে নগদ টাকা দিয়ে বাড়ি ও বাউন্ডারি ওয়াল রক্ষা করেই ক্ষ্যান্ত হননি, তিনি ঠিকাদারকে ড্রাম ভর্তি ডিজেল কিনে দিয়ে বাড়ির পাশে পুকুরে সরকারি মাটি ফেলে নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে অবৈধ দখলদার তরিকুল ইসলাম বলেন, আমি কোন সরকারি জায়গা দখল করে বাড়ি করিনি। আপনার বাড়ীর সামনে এসি ল্যান্ড কর্তৃক লাল নিশানা টাঙিয়ে দিয়ে গেছে খাল থেকে সাড়ে ১৩ ফিট উপরে এমন প্রশ্নের তিনি কোন সদ্যুত্তর দিতে পারেননি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, তরিকুল ইসলাম জায়গা দখলে রেখে দিয়েছিলেন। কিছু জায়গা তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। বাকি জায়গাগুলো ছেড়ে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অবৈধ দখলদার তরিকুল ইসলামের বাড়ির কাজের লোক তৈয়ব আলী ও শাহীন হোসেন বলেন, ইসলাম সাহেব নিজের টাকা দিয়ে ঠিকাদারের মাধ্যমে পুকুর মাটি দিয়ে ভরে নিচ্ছেন। টাকা দিয়ে কাজ করতে গিয়ে তার বাড়ি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারনে তার বাড়ি থেকে নাকি ইটপাটকেল ছোড়া হয়েছে।
ইটপাটকেল ছোড়ার কারনে কাজ বন্ধ করার পর রাতের আধারে ঠিকাদার তিনটি ভেকু দিয়ে দ্রুত গতিতে অবৈধ দখলদার তরিকুল ইসলামের বাড়ির পাশ থেকে মাটি কেটে বাড়ি বাঁচিয়ে দেয়ার জন্য কৌশল নিয়েছেন ঠিকাদার। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ঠিকাদার জাহিদুল ইসলাম মিঠুর সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সাইটে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঠিকাদারের নির্দেশে আমরা কাজ করছি। কোন কিছু জানতে চাইলে তার সাথে কথা বলতে হবে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে হতাশ হয়ে পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্তসহ এলাকার সচেতন মহল। তাদের অভিযোগ, একজন অবৈধ দখলদারকে বাঁচাতে গিয়ে অনেক মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত করা কোন আইনের মধ্যে পড়ে। তারা বলেন, আমরা নিজেদের মধ্যে অবৈধ ভাবে দখলকৃত জায়গা ছেড়ে দেওয়ার পর ব্যক্তি মালিকানা জায়গার উপর মাটি ফেলে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। আর প্রভাবশালী হওয়ার আরেক জন পার পেয়ে যাবেন এটা হতে পারে না।
ক্ষতিগ্রস্ত ও এলাকাবাসী জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধ দখলদারের বাড়ি দখল মুক্ত এবং আৃাদের ক্ষতিপুরন দেয়া না হলে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচি গ্রহন করনো। তারা বলেন, খালের পাড় নিজ দখলে রাখার কারনে কয়েক হাজার একর জমির ফসল কৃষক ও চাষীরা নানা কষ্ট করে বিকল্প পথ দিয়ে আনেন। এটা বড় সমস্যার কারন।